ন্যাভিগেশন মেনু

উলিপুরে স্কুল খুললে প্রিয় প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাবে না হাজারো শিক্ষার্থী


সাজাদুল ইসলাম

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থাকায় শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর দীর্ঘ প্রায় ৫৫৫ দিন পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে সারাদেশে স্কুল খুলা সম্ভব হলেও কুড়িগ্রামের উলিপুরের ৬টি স্কুলের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী খুঁজে পাবে না তাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান। নদী গিলছে তাদের শৈশবের দূরন্তপনা। শুনবেনা শিক্ষকের আদরমাখা ডাক, দুষ্টুমি করার শাসন। নতুন পরিবেশের সাথে তালমিলিয়ে চলতে হবে ওই শিক্ষার্থীদের।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় একটি পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৬৮টি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫২ হাজার ৩২৫ জন। 

গত দেড় বছরে খারিজা নাটশলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জুয়ান সতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াদাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চেরাগির আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। 

তাছাড়া তিস্তা নদীর ভাঙনের  হুমকির কবলে রয়েছে থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নের আরও চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া বাকি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব জায়গায় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পশ্চিম বজরা বিদ্যালয়টি নির্দিষ্ট জায়গা না পেয়ে সাময়িক সময়ের জন্য ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে টিনের চালা তুলে পাঠদানের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

নদীগর্ভে বিলীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ছোট ছোট শিশু সন্তানের শিক্ষা নিয়ে শংকিত অভিভাবকরা। কারণ গ্রামের কাছের সেই বিদ্যালয় আর নেই। দূরে কোথাও স্থাপন হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়াও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিম্ন মাধ্যমিক ১৪টি, মাধ্যমিক ৫৩টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ সাতটি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ চারটি, কারিগরি কলেজ দুইটি, কৃষি কলেজ একটি, ডিগ্রি কলেজ ৫টি, পলিটেকনিক্যাল একটি, দাখিল মাদরাসা ৪০টি, আলিম মাদরাসা সাতটি, ফাজিল মাদরাসা আটটি, কামিল মাদরাসা একটি।

এই ১৪৩টি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪৮ হাজার ৮০৫ জন। বৈশ্বিক করোনার বিপর্যস্ত সময় পাড় করে প্রায় দীর্ঘ ১৭ মাস পর যখন শিক্ষার্থীরা ফিরবে, প্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঠিক তখনি দেখা যাবে কেউ ঝড়ে পড়েছে, কেউবা অন্যত্র চলে গেছে জীবিকার তাগিদে। আবার শত শত শিক্ষার্থী সংসার করছে স্বামীর ঘরে। হারিয়ে গেছে কারও প্রিয় বন্ধু বা সহপাঠী। যা শুধু তাদের স্মৃতি হয়ে থাকবে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘুরে প্রধান শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চিঠি পেয়ে  প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো থেকে শুরু করে শিক্ষার অন্যান্য উপকরণগুলো ধোঁয়ামুছা করে পাঠদানের উপযোগী করে তুলছেন তারা।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাদিরউজ্জামান বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা প্রতিটি বিদ্যালয়কে পাঠদানের উপযোগী করে তুলতে সক্ষম হয়েছি। সরকারি নির্দেশনা মতো শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা নেওয়া করা হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা আসার পর থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়কে পাঠদানের উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এসআই/এডিবি/