ন্যাভিগেশন মেনু

এবার সঙ্গী ডেঙ্গু


করোনার পাশাপাশি ঢাকায় ডেঙ্গুও বাড়ছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ বিশ্বব্যাপী। করোনার আগ্রাসি থাবায় যখন পুরো দেশের মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তখন ঘরেও অন্য এক আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে সবাইকে।

নভেম্বরের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজনন বেড়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এডিস মশার লার্ভা।

গত অক্টোবরে ১৬৩ জন এবং চলতি নভেম্বর মাসে গতকাল পর্যন্ত ৩০১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে মশা নিধনের বিকল্প দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে   করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশেও দ্বিতীয় ঢেউ হিসেবে আসা শুরু করেছে।

তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে আমরা আগাম  প্রস্তুতি নিয়েছি। ১ হাজার কোটি টাকা দিয়ে আগাম করোনার ভ্যাকসিন অর্ডার করেছি।

যখনই এটা কার্যকর হবে তখনই যেন বাংলাদেশের মানুষ পায় আমরা সে ব্যবস্থা নিয়েছি। গত রাতে জাতীয় সংসদে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, আমরা স্কুল খোলার পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেওয়ায় তা করা হচ্ছে না। আমরা কেন ছেলেমেয়েদের জন্য ঝুঁকি নেব?  আমাদের সচেতন হতে হবে। মাস্ক পরা, গরম জল দিয়ে একটু গড়গড়া করা দরকার। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার। তাহলে সবাই সুস্থ থাকব। এ ছাড়া যখন বেশি মানুষের কাছে যাব, তখন যেন মাস্ক পরে যাই। 

তিনি বলেন, সামনে আরও একটি ধাক্কা আসছে। ইতিমধ্যে অনেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেটা ছড়াচ্ছে। তাই সবাইকে একটু স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, আমি এখন ঘরের মধ্যে একা, তাই মাস্ক পরছি না।

দলের নেতা-কর্মীদের নিজের বয়সের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে শখ হাসিনা বলেন, চিরদিন কেউ বেঁচে থাকে না। আমিও থাকব না। কারণ আমারও বয়স ৭৪ বছর পার হয়েছে।

এদিকে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভর্তি সংখ্যা বেড়েছে। সাধারণত নভেম্বর থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকে। তবে এবার ব্যতিক্রম জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গু হানা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুরও ধরন পালটাচ্ছে।

আগে এটা ছিল মৌসুমি রোগ। এখন সারা বছর ধরেই হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মশা বেঁচে থাকলে বছরের যে কোনো সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, শীত আসলে ডেঙ্গু থাকে না। আসছে জানুয়ারিতে শীত আসছে, ওই সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে। অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এডিস মশার উত্পত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ ও বেশি করে জল পানের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যাসপ্রিন জাতীয় কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। শীতে আরো বাড়বে। তাই সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক পরলেই অনেকটা নিরাপদ থাকা যাবে।ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন ডেঙ্গু রোগী আসছে।

তিনি বলেন, লকডাউনের সময় মানুষ বাসাবাড়িতে ছিল। ওই সময় ঘরবাড়ি পরিষ্কার রেখেছিল। তাই তখন ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়নি। এখন লকডাউন না থাকায় মানুষ বাইরে বেরিয়ে আসছে। আর বাড়ির আশপাশের জমাট বাঁধা জল পরিষ্কার করছে না।

এতে এডিস মশার প্রজনন বাড়ছে। তিনি বলেন, শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে—বিশেষজ্ঞরা আগেই এ ব্যাপারে সতর্ক করেছিল। যে কারণে এখন বাড়ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু বাড়ছে। প্রতিদিন হাসপাতালে অনেক শিশু ডেঙ্গু রোগী আসছে।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শিশু ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। করোনা রোগীও বাড়ছে।

এস এস