ন্যাভিগেশন মেনু

করোনাকালে অর্থনীতিতে আশা দেখাচ্ছে কৃষি খাত


রোমানা আক্তার

হাজার বছর ধরে কৃষিই বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান উপজীব্য। কৃষি অথনীতির হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশ। আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে কৃষি। আমাদের জিডিপির প্রায় এক পঞ্চমাংশ অর্জিত হয় কৃষি খাত থেকে। দেশের প্রায় ৪৮ ভাগ মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত। এই করোনাকালে দেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য কৃষি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এই মহামারিতে ক্ষুধা, দারিদ্র্য থেকে শিল্প নয় কৃষিই দিতে পারে মুক্তি।

আমাদের অর্থনীতির প্রধান খাত তিনটি। কৃষিখাত, পোষাক শিল্প খাত ও রেমিট্যান্স। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের কারনে বৈশ্বিক অর্থনীতি আজ ক্ষতিগ্রস্ত। ইতোমধ্যেই বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অথনৈতিক কর্মকাণ্ড থমকে গেছে। যেহেতু পোশাক শিল্প ও রেমিট্যান্স  এই দুটি খাতের সাথে সরাসরি বৈশ্বিক অর্থনীতি জড়িত এবং তা অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সেক্ষেএে আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড কৃষির উপর আস্থা ও ভরসা রাখতে হবে।

নতুন বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে কৃষি খাতে সক্ষমতার সর্বোচ্চটুকু কাজে লাগাতে হবে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। করোনার প্রভাবে বিশ্ব ও দেশীয় অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সমাজ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার এমন কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছেন কৃষি খাতকে রক্ষা করার জন্য যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য সত্যিই অভাবনীয়। জননেত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদর্শিতার ফলে দেশের কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে ইতোমধ্যেই এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন যা সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে আমরা করোনা পরবর্তী সমস্যাও কাটিয়ে উঠতে পারবো।

উন্নয়নের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি দূরদর্শী নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “দেশের আনাচে-কানাচে কোন জমি যেন খালি না থাকে। যার যা সামর্থ তা অনুযায়ি যেন ফসল ফলাতে মনোযোগী হয়। বাড়ির আশেপাশে, আঙ্গিনায় বারোমাসি সবজি, ফল লাগাতে বলেছেন। যাতে আমদানি নির্ভরতা কমে আসে।”

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নিদের্শনা সবাই কার্যকর করলে অন্তত ভোগ্যপন্যের দাম নিয়ন্ত্রন সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ি ফসল উৎপাদনে প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, “করোনার কারনে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে বার বার কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছেন। কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনানুযায়ী কৃষি  মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে বাংলাদেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে না পারে, বরং বিশ্বের সংকটেও যাতে বাংলাদেশ সহযোগিতায় ভূমিকা রাখতে পারে।

কৃষি খাতে উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। জেলা সদরে, উপজেলায় কৃষক-কৃষাণীদের নিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বাড়ির উঠান, পুকুর পাড়, নদীর ধার, অনাবাদি জমিতে ফসল উৎপাদনের আওতায় আনতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেন। মূলত, এই দুর্দিনে হাত গুটিয়ে ঘরে থাকলে চলবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাঠে কাজ করে কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রাখতে হবে।

সম্প্রতি জানা গেছে , মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমলে নিয়ে কয়েকটি জেলা প্রাশাসন নিজ এলাকায় গণবিজ্ঞাপন জারি করেছেন ,যাতে বলা আছে “আবাদি জমি ফেলে রাখলে তা খাসজমি হিসাবে খাতিয়ানাভুক্ত  করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

এর মানে এই নয়, মানুষের জমি সরকার কেড়ে নিচ্ছেন। সরকারের উদ্দেশ্য, জমি কেড়ে নেওয়া নয় বরং প্রত্যেকটি জায়গা যেন আবাদের আওতায় চলে আসে। কারণ এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

অনেকে ঢাকায় থাকেন, যাদের গ্রামে জমিজমা আছে কিন্তু জমিতে চাষাবাদ করেন না, বর্গাচাষ ও দেন না, আবার অনেকে  জমি চাষ না করে ফেলে রাখেন। সেসব জমিতে সরকার নিজ উদ্দেগ্যে চাষ করার পরিকল্পনা করছে। যাতে এই দুর্দিনে খাদ্য চাহিদা পূরণ করা যায়।

কৃষি খাতকে রক্ষা করতে বাজেটে কিছু নতুন প্রস্তাবনা আনা হয়েছে। ২০০-২১ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য জিডিপির ২.৮৯ শতাংশ হিসেবে ১৬ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ২.৫৮ শতাংশ। ৫ হাজার কোটি টাকার কৃষি প্রণোদনা প্যাকেজ বরাদ্দ করা হয়েছে। এমনকি ক্ষুদ্র আয়ের কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  এছাড়া কৃষি উপকরণে শূন্য শুল্ক হার অব্যাহত রাখা হয়েছে।

করোনাকালে কৃষির হাত ধরেই জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা এগিয়ে যাবে। হাজার বছর ধরে চলতে থাকা এদেশের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি, আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই বঙ্গে কৃষির প্রাধান্য এখনো শেষ হয়নি।