ন্যাভিগেশন মেনু

করোনাক্রান্ত বাবা-ছেলেকে মৃত্যু ভয় তাড়া করে ফিরছে


বৈশ্বিক নভেল করোনাভাইরাসের হানায় মৃত্যুর মিছিল নেমেছে পৃথিবী জুড়ে। করোনা কার দোঁড়গোড়ায় গিয়ে কখন হানা দেয় এই ভয়ে সবাই তটস্থ। 

আর এই রোগ এমনি যে, একজন থেকে শতজন বা তারও বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

এই তো ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের একটি গ্রামে এক মহিলা করোনায় আক্রান্ত হয়। এরপর জামাতঘেসা ওই মহিলা দুরভিসন্ধি নিয়ে কয়েকজনের বাড়ি গিয়ে লুডু খেলার ফলে আরও ৩১ জন মহিলা করোনায় আক্রান্ত হন। 

ঢাকার স্বামীবাগে ইস্কন মন্দিরের পুরোহিতসহ সেখানকার সব সেবাইত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।করোনা হানার পর মন্দিরটি বন্ধ রাখা হয়েছিল। 

সেখান থেকে কেউ ঢুকতে বা বেরহতেও পারতেন না। অর্থাৎ একজন থেকে ৩৬ জনই আক্রান্ত হয়েছেন।এরপর স্বাস্থ্যবিভাগ মন্দিরটি লকডাউন করে দিয়েছেন।

অপরদিকে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে এক তরুণীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁর ৫ বান্ধবী ও ১ বন্ধু করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

এইজন্য বাড়ির একজনের করোনা হলে পরিবারের বাকি সদস্য বা পাড়ার লোকেরা ভয়ে বাঁচেন না।না জানি কী হয়? 

মারণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন গাজীপুরের সংবাদকর্মী পিতা-পুত্র। তারা রয়েছেন একই ছাদের নিচে। 

কিন্তু পিতৃহৃদয় কাঁদলেও বাবা ইকবাল সরকার  ছেলেকে একটু আদর তো দূরের কথা সন্তানের সঙ্গে কথাও বলতে পারছেন না। চলতি মাসের ১৪ তারিখ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে্ রয়েছেন পিতা-পুত্র। 

তারপর থেকে অসহায়ত্ব নিয়ে কাটছে প্রতিটি মূহূর্ত। জ্বর, ঠাণ্ডা ও গলাব্যথায় কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করোনা পরীক্ষার করান ইকবাল সরকার। 

পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ আসে। পরে পরিবারের অন্যদের পরীক্ষা করা হলেও শুধু মাত্র এক সন্তানের করোনা আক্রান্ত ধরা পড়ে। এরপর থেকে পরিবারের অন্য সদস্যদের সুরক্ষায় জন্য আত্মীয় বাড়িতে রেখে আসা হয়েছে।  

ইকবাল সাহেব পেশায় একজন সংবাদকর্মী। তার বাড়ি গাজীপুরে। গার্মেন্টস কর্মীদের নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরে তার কাছ থেকেই তার ছেলেও আক্রান্ত হয়েছে। 

বর্তমানে গোটাবিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯। প্রতিদিনই বাড়ছে লাশের সারি।যে যেভাবেই থাকুক সেখান থেকেই এই মারণব্যাধি ভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। 

ফলে জেগে বা ঘুমে অচেতনেও অনেকে করোনার আতঙ্কে ভুগছেন। ইকবালের ক্ষেত্রেও হয়নি তার ব্যতিক্রম। 

ইকবাল মিডিয়াকে বলেন, নিজে একা আক্রান্ত হওয়ার পরে যতটা না ভয় কাজ করছিলো তার চেয়ে বেশি ব্যথিত হয়েছি যখন নিজের ছেলেই আমার থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। 

এ দু:খ ভাষায় প্রকাশের নয়।এজন্য নিজেকেই দোষী মনে করছি।কিন্তু কিছু করার নেই, এক চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া। তদুপরি পরিবার ছেড়ে বিচ্ছিন্ন থাকার কষ্টটা বড় বেদনাদায়ক। 

তার ওপর আবার ছেলেকে নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তা ভর করেছে।এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা। তিনি বলেন, প্রতিমুহূর্ত এখন আমাদের  মৃত্যুভয় তাড়া করছে। 

ইকবাল আরও জানান, মাস্ক ব্যবহার থেকে শুরু করে গ্লাফস, সুরক্ষা পোশাক ব্যবহার ও সর্বোচ্চ সর্তক থাকলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার।নিজের কারণে তার সন্তানও ভয়াবহ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। 

হৃদয়ের মধ্যে ক্ষত বেড়েছে। কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছেন না তিনি। আবারও বেঁচে ফিরবেন কিনা তাও জানা নেই, সৃষ্টিকর্তাই শেষ ভরসা। 

চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, গাজীপুরে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা পেয়েছেন তিনি। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠাতে চেয়েছিলেন। 

তবে বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা থাকায় তিনি ঢাকা আসেননি। বাড়ির আলাদা দুই রুমে তিনি ও তার ছেলে হোম কোয়ানেন্টিনে আছেন। 

এমনিতে করোনার তেমন কোনো ওষুধ না থাকায় শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ওষুধ ও গরম পানির গড়গড়া, গরম পানি পান ও স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছেন। 

১১ দিন হয়ে গেল হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ইকবাল ও তার সন্তান। তবে এখনো তাদের জটিল কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। তাই  দুশ্চিন্তা অনেকটা কাটলেও কবে সুস্থ হয়ে প্রিয়জনের দেখা পাবেন তা নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই।  

ইকবাল জানান, তার এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা খুব কষ্টে জীবনযাপন করছে।  আর সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহার, বারবার সাবান–পানি দিয়ে হাত ধোয়াসহ নানা নির্দেশনা না মানায় করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। 

তার এলাকায় একই পরিবারের সদস্যরা এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আর প্রতিদিনই যেভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে আমাদের জন্য ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে। 

প্রসঙ্গত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রবিবার অবধি ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৪১৬। 

এস এস