ন্যাভিগেশন মেনু

করোনায় বাংলাদেশ যেসব বিশিষ্টজনকে হারালো


দিন দিন বাংলাদেশে চরম রূপ ধারণ করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। করোনায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মারা গেছেন দেশের অনেক বিশিষ্টজন, পুলিশ, ডাক্তার, সাংবাদিক। প্রতিদিনই আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম এবং ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’কে স্মরণ করে বলেছেন, ‘একই দিনে পরপর দুজনের মৃত্যু অত্যন্ত কষ্টকর।

আমাদের এই সংসদে বারবার শোক প্রস্তাব আনতে হচ্ছে। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে রবিবার (১৪ জুন) সংসদে শোক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।

দুই নেতাকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন,  ‘আমি দেশে ফেরার পর পদে পদে আমাকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এসময় যে দুজনকে আমি সব সময় পাশে পেয়েছি একই দিনে তাদের হারালাম।’

এদিকে আক্রান্তের সংখ্যায় চিনকে ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ১৭১ জনে পৌঁছেছে।

একই সময়ে সারাদেশে এই ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ১৪১ জনের শরীরে। এ নিয়ে মোট সনাক্ত হয়েছেন ৮৭ হাজার ৫২০ জন।

রবিবার  দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

কিন্তু বেসরকারি হিসেবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এর চেয়েও বেশি বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।

বিশিষ্টজনের মধ্যে দেশে করোনায় প্রথম বলি হন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। 

গত ১৪ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মৃতদেহ থেকে নমুনা নিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হলে জানা যায় তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত একুশে ও স্বাধীনতা পদক এবং ভারত সরকারের পদ্মভূষণ সম্মান অর্জন করেছেন।

বর্ষীয়ান এই বুদ্ধিজীবীকে হারিয়ে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে।

মোহাম্মদ নাসিম: শাসকদল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও করোনাভাইরাসের শিকার হয়েছেন। ১ জুন জ্বর-কাশিসহ ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হলে মোহাম্মদ নাসিমের করোনা ধরা পড়ে। এরপর শুক্রবার ভোরে তিনি ব্রেনস্ট্রোক করেন। শনিবার রাজপথের সংগ্রামী এই নেতা পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।

ডা. মঈন উদ্দিন : সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন গত ১৫ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। করোনায় মৃত দেশের প্রথম ডাক্তার তিনি।

ভিসি ড. নাজমুল করিম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. নাজমুল করিম গত ৭ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

আনোয়ারুল কবির: বিএনপি জোট সরকারের আমলের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আনোয়ারুল কবির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১০ মে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)  মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বিএনপির সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের ভাতিজা। 

অধ্যাপক মনিরুজ্জামান: দেশের অন্যতম হেমাটোলজিস্ট এবং ল্যাবরেটরি মেডিসিন স্পেশালিস্ট অধ্যাপক কর্নেল (অব.) মো. মনিরুজ্জামান করোনাভাইরাসের শিকার হয়ে গত ৩ মে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় মৃত্যুবরণ করেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো দেশের দ্বিতীয় চিকিৎসক তিনি।

ড. মো. মনিরুজ্জামান আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিফ হেমোটোলজিস্ট ছিলেন।

দুদক পরিচালক জালাল সাইফুর রহমান: করোনার আগ্রাসনের শুরুতে গত ৬ এপ্রিল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক জালাল সাইফুর রহমান মারা যান। তিনি রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকন: করোনায় আক্রান্ত হয়ে দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খোকন গত ২৮ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

নিলুফার মঞ্জুর: ২৪ মে মারা যান সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা নিলুফার মঞ্জুর। তিনি ১৯৭৪ সালে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সানবিমস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দেশ-বিদেশে এই স্কুলের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। রেফারি হুমায়ুন কবীর জুয়েল : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৬ মে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ক্রীড়াঙ্গনের মেধাবী মুখ এশিয়ান কারাতে ফেডারেশনের রেফারি ও বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেসনের সদস্য হুমায়ুন কবীর জুয়েল (৫০)।

ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৭ জুন রাজধানীর অভিজাত স্কয়ার হাসপাতালের পরিচালক (মেডিক্যাল সার্ভিস) ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট মির্জা নাজিম উদ্দিন মারা যান। তিনি বলেন, প্রায় সপ্তাহ দুই আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন মির্জা নাজিম উদ্দিন।

আহসান উল্লাহ হাসান: ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানও গত ৭ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গুলশানের শাহাবউদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

সাংবাদিক আবদুল মোনায়েম খান: করোনার শিকার হয়ে গত ৭ জুন মারা যান কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল মোনায়েম খান। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার  তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শিল্পপতি আজমত মঈন: দেশের চা-শিল্পের খ্যাতিমান ব্যবসায়ী বিশিষ্ট শিল্পপতি আজমত মঈন করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৬ জুন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সাবেক সচিব এম বজলুল করিম চৌধুরী: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাবেক সচিব এম বজলুল করিম চৌধুরী গত ৩১ মে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান।

মো. ইমামুল কবীর শান্ত: করোনা মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে মারা  যান শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস (প্রা.) লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মো. ইমামুল কবীর। গত ৩০ মে সকাল ৮টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মোস্তফা কামাল সৈয়দ: বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাপরিচালক, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির উপদেষ্টা (অনুষ্ঠান), এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ গত ১ জুন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে করোনার আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সহিদুল ইসলাম খান: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের পরিকল্পনা ও গবেষণা বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সহিদুল ইসলাম খান মৃত্যুবরণ করেন।

রেডজোন চূড়ান্ত: করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা লাল, হলুদ, সবুজ হিসেবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। 

রাজধানীর ঢাকার কোন কোনো এলাকা রেডজোন হবে এবং লকডাউন করা হবে তাও নির্দিষ্ট করা হয়েছে।  এ বিষয়ে একটি গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কোনো এলাকায় গত ১৪ দিনের মধ্যে যদি প্রতি লাখে ৬০ জন বা তার বেশি লোক সংক্রমণের শিকার হন তবে ওই এলাকা ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

এলাকাগুলো হচ্ছে- আদাবর, আগারগাঁও, আজিমপুর, বাবুবাজার, বাড্ডা, বনশ্রী, বনানী, বংশাল, বাসাবো, চকবাজার, ডেমরা, ধানমণ্ডি, ইস্কাটন, ফার্মগেট, গেণ্ডারিয়া, গ্রিনরোড, গুলশান, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, কল্যাণপুর, কলাবাগান, কাকরাইল, কামরাঙ্গীরচর, খিলগাঁও, লালবাগ, লালমাটিয়া, মালিবাগ, মিরপুর, মিরপুর-১, মিরপুর-১২, মগবাজার, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, মুগদা, পল্টন, রাজারবাগ, রামপুরা, রমনা, শাজাহানপুর, শাহবাগ, শ্যামলী, শান্তিনগর, শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁও, উত্তরা, ওয়ারী।ঢাকা সিটির ক্ষেত্রে বিগত ১৪ দিনে কোনো এলাকায় ৩ থেকে ৫৯ জন নিশ্চিত করোনা রোগী থাকলে সেটি হবে ইয়েলো জোন।

শহরের কোনো এলাকায় রেড জোন ঘোষণা হলে সেখান থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবেন না। সব কাজ (ফ্যাক্টরি, অফিস) ঘরে বসেই করতে হবে। তবে গ্রাম এলাকায় কৃষি কাজ করতে বাধা নেই। অসুস্থ হলেই শুধু হাসপাতালে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে।

এস এস