ন্যাভিগেশন মেনু

করোনায় ভালো নেই দিনাজপুরের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষ


করোনায় পাল্টে গেছে পৃথিবীর অর্থনীতি। কর্মহীন হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। এর প্রভাব পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা দিনাজপুরের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষের মধ্যেও।

বুধবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ১১টায় দিনাজপুর শহরের উত্তর শেখপুরা আদিবাসী ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির ফুলমতি মুর্মুর বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখা যায় তিনি এইমাত্র চুলা ধরাচ্ছেন।

ফুলমতির বাড়িতে রান্না হয়নি। অনেক কষ্টে আজ ভাতের হাড়ি চড়িয়েছেন চুলায়। তার সাথে কথা বলতেই তিনি হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, 'করোনার কারণে তাদের আয়ের পথ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। একবেলা খাই তো দুবেলা না খেয়েই থাকি! কেউ কাজ দেয় না।'

কথা হলো পলাশী তিকগা’র সাথে। সে জানায়, এই গ্রামে রয়েছে ৮টি নৃ-গোষ্ঠি পরিবার। করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের হাতে কোনো কাজ নেই। স্থবির হয়ে পড়েছে তাদের জনজীবন।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নেতারা মুখে বড় বড় কথা থাকলেও বাস্তবে তারা আমাদের কোনো সাহায্য এনে দিতে পারেননি।

আদিবাসী নেতা রবিন সরেন, বিশ্বনাথ সিং, ফাবিয়ান মন্ডল দাবি করেছেন, তাদের নৃ-গোষ্ঠিী আদিবাসীরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না এবং শিক্ষা কার্যক্রম থেকেও তারা বঞ্চিত হয়ে পড়েছে।

তারা বলেন, দিনাজপুরের ১৩টি থানায় সব মিলিয়ে প্রায় ২ লক্ষাধিক নৃ-গোষ্ঠি বসবাস করেন। করোনার পর থেকে এ সমস্ত নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কোন কাজ নেই, সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সরকারি অনুদান প্রয়োজন। তাহলে আদিবাসী ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। আদিবাসী গোষ্ঠীরা দিনাজপুর জেলায় সর্বত্র ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা বা চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

চিকিৎসার বিষয়ে দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস কুদ্দুছ জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আদিবাসীরাই ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন।

ভুক্তভোগী নৃ-গোষ্ঠীর নেতারা বলেন, 'আমরা এ দেশের নাগরিক। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা এবং লেখাপড়ার সুযোগ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু আমরা যেনো অবহেলার পাত্র হয়ে গেছি। অথচ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় থেকে বিভিন্ন সময়ে দেশের হয়ে অকাতরে জীবন দিয়েছেন তারা।'

তারা জানান, দিনাজপুরের ১৩টি থানায় সব মিলিয়ে প্রায় দুই লক্ষাধিক নৃ-গোষ্ঠি বসবাস করেন। করোনার পর থেকে নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কোন কাজ নেই, সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পরিমান সরকারি অনুদান প্রয়োজন। তাহলে তারা স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপনসহ সন্তানদের পড়াশোনা করানোর সুযোগ পাবেন।

তারা আরও বলেন, অভাব-অনটনে জর্জড়িত তারা। তারমধ্যে দীর্ঘদিন যাবত করোনা মহামারির মধ্যে আরও কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের পারিবারিক জীবন। কাজ না থাকায় আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন তারা।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। যাতে করে তাদের সন্তানদের পড়ালেখা, সুচিকিৎসা এবং কর্মের ব্যবস্থা করে দেন। এ ছাড়াও বিত্তবান এবং বেসসরকারি সংস্থার প্রতি তারা আবেদন জানিয়েছেন যেনো তাদের ছেলেমেয়েরা প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়ে অনলাইনে ক্লাশ করতে পারে।

দিনাজপুরে ইতিহাসের পাতায় দেখা যায়, দিনাজপুর অঞ্চলে ১৫ থেকে ১৮টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী আছে। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আদিবাসীদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু আদিবাসীদের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি আদিবাসী নেতারা সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। যাতে করে তাদের সন্তানদের পড়ালেখা, সু-চিকিৎসা এবং কর্মের ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়াও বিত্তবান এবং বেসসরকারি সংস্থার প্রতি তারা আবেদন জানিয়েছেন যেনো তাদের ছেলেমেয়েরা প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়ে অনলাইনে ক্লাশ করতে পারে।

এম এ এস/ এস এ /এডিবি