ন্যাভিগেশন মেনু

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে মহানন্দার পাড়ে পর্যটকের ভিড়


নিজের দেশ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য ভিড় বেড়েছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা পাড়ে। মহামারি করোনাভাইরাসে বায়ুদূষণ কম থাকায় এবার আগেভাগে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা।

খালি চোখে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে হিমালয়ের দ্বিতীয় উচ্চতম ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গের এই চূড়াটি। মেঘমুক্ত আকাশে হেমন্তের সোনালি রোদে দেখা মিলছে সোনালি পাহাড়। সময়ের সঙ্গে তার রূপ বদলে কখনও লাল, কখনও গোলাপি আবার কখনও সাদা রঙের লুকোচুরিতে নিজেকে মেলে ধরছে বরফ আচ্ছাদিত হিমালয়।

করোনা মহামারির কারণে ভারত ভ্রমণ বন্ধ থাকায় বিনোদন বঞ্চিত ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে আসছেন পঞ্চগড়ের মহানন্দার পাড়ে। এজন্য কয়েকদিন ধরে তেঁতুলিয়া উপজেলার পিকনিক কর্ণার, পুরাতন ডাকবাংলো এলাকাসহ সকল বিনোদন কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সূর্যোদয় ও সুর্যাস্তের সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা মোহনীয় রূপ দেখতে ছুটে আসছেন অনেকে।


পর্যটকের ভিড়ে পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়ার সরকারি-বেসরকারি রেস্টহাউসগুলোতে আবাসন সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। হোটেল কিংবা রেস্টহাউসে জায়গা না পেয়ে অনেকেই মহানন্দার পাড়ে গাছতলায় ঠাই নিচ্ছেন। অনেকেই মোটরসাইকেলে ভোররাতে আসছেন সুর্যোদয় দেখতে।

গত ২৯ অক্টোবর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ষ্পষ্টভাবে প্রথম দেখা যায়। প্রচণ্ড কোয়াশায় মাঝখানে কয়েকদিন কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আগত পর্যটকরা। কিন্তু আকাশ পরিষ্কার হওয়ায় গত ১০ নভেম্বর থেকে আবারও খালি চোখে দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার।

স্থানীয়রা বলছেন, কার্তিকের শেষের সময়টাতে বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র পঞ্চগড় থেকেই খালি চোখে দেখা যায় হিমালয়ের সবচেয়ে উঁচু এই পর্বতশৃঙ্গের। এই পর্বতটির কিছু অংশ ভারতের সিকিম ও কিছু অংশ নেপালে অবস্থিত হলেও পঞ্চগড়ের প্রায় সব জায়গা থেকে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়।

স্থানীয়দের মতে, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যায়ে আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যেতো। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে বায়ুদূষণ কম থাকায় আগেভাগেই দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার। কাঞ্চনজঙ্ঘার পাশাপাশি এ বছর ভারতের দার্জিলিং সিকিম ও নেপালের ছোট ছোট পাহাড়ও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

নওগাঁ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসা আফাজ উদ্দীন বলেন, 'সূর্যোদয়ের সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে খুব সকালে পরিবারসহ মাইক্রোবাসে এসেছি। দেখাও হলো। দেশের মাটি থেকে এতো সুন্দরভাবে হিমালয়ের চূড়াটি দেখতে পারবো এটা কল্পনাও করতে পারিনি।'

দিনাজপুর থেকে আসা নিপুন বলেন, 'সকাল সকাল কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে মোটরসাইকেল নিয়ে ১৬ জন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দিনাজপুর থেকে এসেছি। ইচ্ছে ছিলো রেষ্ট হাউজে অবস্থান করবো। কিন্তু জায়গা না পেয়ে মোটরসাইকেলে এসেছি।

তেতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, আজকে মেঘমুক্ত আকাশ ঝলমলে রোদ এবং কুয়াশামুক্ত হওয়ায় পরিস্কারভাবে ভারতের কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতমালা দেখা যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ সাহা বলেন, আমাদের সরকারি রেষ্টহাউজের বাংলোতে রুম রয়েছে ৮টি। এছাড়াও কয়েকটি আবাসিক হোটেল মিলে সর্বোচ্চ ৫০ জন পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু পর্যটকের সংখ্যা কয়েকগুন। এ অবস্থায় বিপুল সংখ্যক পর্যটকের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতে উপজেলা পরিষদের উদ্যেগে কমিউিনিটি ট্যুরিজমের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের তাদের বাড়িতে কমপক্ষে একটি কক্ষে পর্যটকদের মেহমানের মতো থাকার ব্যবস্থা করতে জনগনকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এতে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে অবস্থান করে কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করতে পারবেন এবং তারাও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

বিআইবি/ ওয়াই এ/এডিবি