আফগানিস্তানের কাবুল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনীর পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের কয়েকদিন আগে এক ড্রোন হামলায় দশজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কাবুল বিমানবন্দরে হামলার পর হওয়া ওই ড্রোন হামলাটি ছিল আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর শেষ কার্যক্রমগুলোর একটি।
শনিবার ১৮ (সেপ্টেম্বর) বিবিসি জানায়, মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের এক তদন্তে উঠে আসে, একজন সহায়তাকর্মীর পরিবারের ৭ জন শিশুসহ ৯ জন সদস্য ২৯ অগাস্টের ওই ড্রোন হামলায় মারা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি জানান, মারা যাওয়া সহায়তাকর্মীকে আইএসকের - আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট গ্রুপের স্থানীয় শাখা - সদস্য ভেবে ভুল করেছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। জেনারেল ম্যাকেঞ্জি ওই হামলাকে 'দুঃখজনক ভুল' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং মন্তব্য করেছেন যে তালেবান ওই হামলার পেছনে গোয়েন্দা সংস্থার সাথে জড়িত ছিল না।
কাবুল বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলার কয়েকদিন পরই ভয়াবহ এই ড্রোন হামলা হয়। তালেবানের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে সেসময় কাবুল বিমানবন্দর হয়ে যাত্রীদের আফগানিস্তান ছাড়ার হিড়িক চলছিল।
জামাইরি আকমাদি নামে ওই সহায়তাকর্মী ২৯ অগাস্ট তার নিজের বাড়িতে যখন গাড়ি রাখছিলেন, তখন হামলার ঘটনা ঘটে। বিমানবন্দর থেকে তার বাড়ির দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। আকমাদি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন বলে জানান ভুক্তভোগীর আত্মীয়রা।
মারা যাওয়াদের মধ্যে ছিলেন আহমাদ নাসের, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সাথে অনুবাদক হিসেবে কাজ করেছেন। অন্যান্য ভুক্তভোগীরাও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে কাজ করেছেন এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাও ছিল।
মার্কিন বাহিনীর এই ভুলের পর আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে - বিশেষ করে এখন যখন আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নেই। পাশাপাশি এতোদিন ধরে চলা যুদ্ধে আসলে কী পরিমাণ বেসামরিক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সাম্প্রতিক এই ভুলের পর সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া শুরু করার পর দুই সপ্তাহের মধ্যে তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেয়। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল তালেবানের দখলে আসে ১৫ অগাস্ট। এদিন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান।
এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী এবং আফগানিস্তানে তাদের সহযোগীদের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়ার হিড়িক শুরু হয়।
সে সময় কয়েকদিন কাবুল বিমানবন্দরে আতঙ্ক ও ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল। মার্কিন সেনাবাহিনীর বিমানে করে পালানোর চেষ্টার সময় কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে।
এরপর ২৬ অগাস্ট কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। ওই হামলায় ১৭০ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৩ জন মার্কিন সেনা সদস্য নিহত হন। আইএস-কে সেসময় হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
এডিবি/