ন্যাভিগেশন মেনু

কেরু চিনিকলের জমি লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা


চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু চিনিকলটিতে সার্বিক বিবেচনায় লাভজনক প্রতিষ্ঠন হলেও চিনি উৎপাদন বিভাগে কোনভাবেই লাভবান হতে পাচ্ছে না। কি কারণে লোকশান হচ্ছে তা আজ দৃশ্যমান। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চিনিকল কর্তৃপক্ষ বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

এই চিনিকলটির আওতায় আছে প্রায় ৩ হাজার ৪শ একর জমি। আখ উৎপাদনের জন্য চিনিকলের রয়েছে নিজেস্ব ৯টি কৃষি খামার ও ১টি বীজ উৎপাদন খামার। 

প্রতি মৌসুমে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ১৫শ থেকে ১৮শ একর জমিতে আখ চাষ করে থাকেন। আখ উৎপাদন করতে গিয়ে প্রতিবছরই কর্তৃপক্ষকে গুণতে হয় লোকশান। বাকি জমি অলস পড়ে থাকে। 

প্রতিষ্ঠনটিকে আরও লাভবান করতে কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলোক আখ লাগানোর শর্তে ৮টি কৃষি খামারের ১৮শ বিঘা জমি লিজ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জমি লিজ থেকে বাড়তি কোটি টাকা আয়ের সম্ভবনা আছে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছেন।

১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় গড়ে ওঠে কেরু চিনিকলটি। বাংলাদেশের শিল্প স্থাপনাগুলোর মধ্যে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিঃ একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠনের প্রধান কাঁচামাল আখ। যা চিনিকল কর্তৃপক্ষ এবং এলাকার চাষিরা উৎপাদন করে তাকে। আর উৎপাদিত আখ চিনিকলে সরবরাহ করে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত মৌসুমে চিনিকলের আওতায় আখ ছিলো ৭ হাজার ৩৭৫ একর। চলতি মৌসুমে আখ চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৫৩২ একর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর আখ চাষ বেশি হয়েছে ১ হাজার ১৫৭ একর। 

এ প্রতিষ্ঠানের আওতায় মোট জমির পরিমান খামার ৩ হাজার ৩৩৫ দশমিক ৫৬ একর। ৯টি কৃষি (হিজলগাড়ি, বেগমপুর, ফুরশেদপুর, ঝাঝরি, আড়িয়া, ফুলবাড়ি, ছয়ঘরিয়া, ঘোলদাড়ী ও ডিহি)  খামারে চাষযোগ্য জমির পরিমান ৩ হাজার ৫৫ দশমিক ৮৪ একর। 

আর আকন্দবাড়ীয়া পরীক্ষামূক বীজ উৎপাদন খামারে রয়েছে ২৭৯ দশমিক ৭২ একর। প্রতি মৌসুমে চিনিকল কর্তৃৃপক্ষ ১৫ থেকে ১৮ একর জমিতে আখ রোপন করলেও বাকি জমি অলস পড়ে থাকে। এসব অলস জমির কিছু অংশে কয়েক বছর ধরে কর্তৃপক্ষ খণ্ডকালীন সময় সবজিসহ ডাল চাষ করে থাকে।

৮২ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম ৮টি কৃষি খামারের জমি লিজ দিয়ে আখ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। 

বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক যোগদানের পর লোকশানমুখী প্রতিষ্ঠনটিকে লাভজনক করতেই নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে সাধারণ শ্রমিক কর্মচারীরা মনে করছেন।

আর এ কৃষি খামারের ১৮শ বিঘা জমি আখ চাষের জন মিলের মৌসুমী ও স্থায়ী শ্রমিক/কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের মাঝে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। যেখানে আখ চাষ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

কেউ ৬ একরের বেশি জমি নিতে পারবে না। এর মধ্যে ঘোলদাড়ি কৃষি খামার বাদে ফুরশেদপুরে ৮৩ একর, বেগমপুরে ১শ একর, ঝাঝরি ৭৭ একর, আড়িয়ায় ১১০ একর, হিজলগাড়িতে ৫০ একর, ডিহিতে ১২৫ একর, ফুলবাড়ি ১০ একর এবং ছয়ঘরিয়ায় ৪৫ একর জমি। 

যেখানে লিজের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১ সেপ্টম্বর ২০২০ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সাল পর্যন্ত। এ লিজে কানামনা/চুক্তিভিত্তিক বা দৈনিক হাজিরায় নিয়োজিত কোন শ্রমিক বা কর্মচারী অংশ গ্রহণ করতে পারবে না।

শুধু তাই নয় আখ চাষের সাথে সাথী ফসল হিসাবে কোন অবস্থাতেই মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, ভুট্রা, তামাক, কলা অথবা পেঁপের চাষ করতে পারবে না।

প্রশ্ন উঠেছে, চিনিকল কর্তৃপক্ষের ১৭ প্রকার শর্তমেনে অর্থ বিনিয়োগ কেউ করবে কি? যেখানে পাবলিকের জমি বার্ষিক ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় লিজ পাওয়া যাচ্ছে। লিজ গ্রহীতা তার ইচ্ছেমতো যে কোন ফসল আবাদ করার সুযোগ পাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিনিকলের কয়েকজন স্থায়ী শ্রমিক বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব জমিতে আখ চাষ করে থাকে। যার কারণে জমি সমতল নয়। এখন শ্রমিকরা খণ্ড খণ্ড জমি লিজ নিয়ে সেই জমি সমতল করে চাষ উপযোগী করতে হলে প্রচুর জনবল এবং চাষ বাবদ খরচ হবে। প্রতিষ্ঠনের স্বার্থে উদ্যোগ ভালো তবে বাস্তবায়ন কঠিন হবে।

কয়েকজন আখ শ্রমিক বলেন, পাবলিকের এক একর জমি লিজ নিতে কম পক্ষে ৩০ হাজার টাকা লাগবে। তাও আবার ১২ মাসের জন্য। সেখানে ১৮ মাসের জন্য চিনিকলের জমি পাওয়া যাচ্ছে। সেই সাথে সাথী ফসল করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণে অন্যন্য ফসল ঘরে নাও উঠতে পারে, আখের ক্ষেত্রে তেমনটা হবার চান্স খুবই কম।

আখ চাষি জমির, তালেব, শুকুর আলী, জহির, ছানোয়ার, শহিদুল, সবুর, তাইজেল বলেন, সঠিক পরিচর্জা করে যদি আখ চাষ করা যায় একর প্রতি ২০ থেকে ২৫ টন আখ করা সম্ভব। যার মূল্য দাড়াবে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। বর্তমানে কেরুজ চিনিকলে আখের টাকা পেতে বোগান্তি পোহাতে হয় না চাষিদের।

আখচাষি কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারি বিশ্বাস বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ লাভজনক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একদিকে জমি লিজের টাকা অন্যদিকে আখ নিয়ে কোন টেনশণ পোহাতে হবে না। শুধু চিনকলই লাভবান হবে না যারা আখ লাগাবে তারাও লাভবান হবে। 

এ ব্যাপারে উপ-ব্যবস্থাপক (মিলস ফার্ম) হুমায়ুন কবির বলেন, প্রতিষ্ঠনের স্বার্থে আমাদের আখ চাষ করা দরকার। সেই সাথে জমি লীজ হলে প্রতিষ্ঠন পাবে অর্থ কমে আসবে ফার্মের লোকসান, উৎপাদন হবে আখ। এখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সবাই হবে লাভবান।

চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ চিনিকলটি এলাকার একমাত্র অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। এর সাথে জড়িত আছে অনেকের রুটিরুজি। প্রতিষ্ঠনটিকে লাভের জায়গায় নিয়ে যেতে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে ফার্মের লোকশান কমাতে এরই মধ্যে দিন হাজিরার পাহারাদার ছাটাই করা হয়েছে। তাতে করে বার্ষিক ২ কোটি টাকার মত সাশ্রয় হবে। ৬শ একর জমি লিজ দিতে পারলে সেখানেও প্রায় ১ কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে। রাষ্টায়াত্ব এ চিনকলটিকে বাঁচিয়ে রাখতে এলাকাবাসীকেই এগিয়ে আসতে হবে। সইে সাথে প্রতিষ্ঠনের কেউ ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করলে তাকে এতটুকু ছাড় দেয়া হবে না।

এনআই/এডিবি