ন্যাভিগেশন মেনু

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে চীনের নানামুখী উদ্যোগ


গত ১০ বছরে চীন তার‘ভাতের বাটি’ স্থিতিশীলভাবে ধরে রেখে খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছে। এর পিছনে চীনের ২৪টি ঐতিহ্যবাহী সৌরপদের রয়েছে বিশাল ভূমিকা। বর্তমানে চলছে মাং চৌং সৌরপদ। এখন ক্ষেতগুলোতে চাষ করে ফসল কাটার ভাল সময়। বর্তমানে চীনের বসন্তকালীন চাষ করা খাদ্যের আয়তন প্রায় ৬.৩ লাখ বর্গকিলোমিটার। এবার বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষের অগ্রগতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা দ্রুত হয়েছে।

মোট ১৪০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার বড় দেশ হিসেবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা চীনের জন্য চিরকালইএকটি চ্যালেঞ্জ। তাই তার বারো লাখ বর্গকিলোমিটার আবাদি জমিতে শস্য সংরক্ষণ ওপ্রযুক্তির সাহায্যে শস্য সংরক্ষণ করার কৌশল ত্বরান্বিত করেছে চীন।  ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের ১ নম্বর দলিলে দৃঢ়তার সাথে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার তলানি ধরে রাখার দাবি জানানো হয়।

“খাদ্য মানুষের প্রথম প্রয়োজন”। খাদ্য নিরাপত্তাকে সবসময় “মহান বিষয়” হিসেবে দেখা হয়। সিপিসি’র ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীন “খাদ্যশস্যের মৌলিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিশ্চিত করা, পরম শস্য নিরাপত্তা” নতুন খাদ্য নিরাপত্তা ধারণা উত্থাপন করে। শুধু নিজের হাতে চীনা বীজ ধরে, চীনের চালের বাটির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে, খাদ্য নিরাপত্তা বাস্তবায়িত হবে।

২০২১ সালে চীনের খাদ্যের মোট উত্পাদন পরিমাণ ছিল ৬৮ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার টন। যা ২০২০ সালের চেয়ে ২.০ শতাংশ বেশি এবং ২০১২ সালের ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ৭০ হাজার টনের চেয়ে ১৫.৮২ শতাংশ বেশি। খাদ্য উত্পাদনে চীনে ১৮টি ধারাবাহিক ফসল বাস্তবায়িত হয়।

“চীনে খাদ্যের সামগ্রিক উত্পাদন পরিমাণ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। বহু শক্তিশালী নীতি ও ব্যবস্থার সঙ্গে মৌলিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে”।চাইনিজ একাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সের(সিএএসএস) পল্লী উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের কৃষি পণ্য বাণিজ্য ও নীতি গবেষণা বিভাগের পরিচালক হু বিং ছুয়ান একথা বলেন।

চি লিন প্রদেশের নোং আন জেলার ছেন চিয়া তিয়ান গ্রামের চৌং ই কৃষি যন্ত্রপাতি পেশাদার সমবায়ের গুদামে একটি উচ্চ অশ্বশক্তির ট্র্যাক্টরের টায়ার মানুষের মতো উঁচু। এই ধরনের ট্র্যাক্টর ভুট্টার খড় ৪০ সেন্টিমিটার নিচে মাটিতে নিয়ে যাবে।ফলে ভুট্টার শিকড় আরও গভীরে যায়। সমবায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছেন চৌং কুও বলেন, উচ্চ কার্যকর জমিচাষ পদ্ধতিতে প্রতিহেক্টর জমিতে দুই শতাধিক কেজি রাসায়নিক সার বাঁচানোর পাশাপাশি খাদ্যের উত্পাদন ৫ শতাংশ পরিমাণ বাড়ায়।

ছেন চিয়া তিয়ান গ্রামের “চাষের সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ” জমিচাষ বাস্তব অনুশীলন ঠিক চীনের আবাদি জমির সংখ্যা নিশ্চিত করা, আবাদি জমির গুণগতমান উন্নত করা এবং আবাদি জমির স্পেস সমন্বয় উন্নয়ন সামগ্রিকভাবে পরিকল্পনা করার ক্ষুদ্র চিত্র।

আবাদি জমি হচ্ছে খাদ্য উত্পাদনের “জীবন রক্ত”।  জাতীয় খাদ্যের মোট উত্পাদন পরিমাণেরএক পঞ্চমাংশেরও বেশি উত্তর-পূর্ব সমতল ভূমির কালো মাটি থেকে আসে। একে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার “ধানের বাটি মাঠ” বলে গণ্য করা হয়। গত দশ বছরে চীন অব্যাহতভাবে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত, প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়নকারীসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে সার্বিক ও যথাযথভাবে “আবাদি জমির অতিকায় পান্ডা”কে রক্ষা করেছে।

২০১৯ সালে চীনের আবাদি জমির গড় শ্রেণী ছিল ৪.৭৬, যা ২০১৪ সালের চেয়ে ০.৩৫ শ্রেণী বেশি। এর মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গড় শ্রেণী ৩.৫৯, যা সারা দেশে শীর্ষ।

খাদ্য সমস্যা সমাধান করার মৌলিক পথ—বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও নতুন ধারণা সমর্থন হিসেবে “নতুন প্রত্যাশা” সারা চীনে ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে।

একটি খাদ্য গুদামে শতাধিক সেন্সর আছে। পোকার অতিরিক্তি বংশ বৃদ্ধি আংশিক তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে যথাসময়ে আবিষ্কার করা হয়। চলমান বক্স টাইপ নাইট্রোজেন তৈরির মেশিনটি ব্যাপকভাবে কীটনাশক হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নাইট্রোজেন তৈরির মূল্য হ্রাস পায়।

“অফিসে কীবোর্ডে চেপে খাদ্য গুদামের সার্বিক পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করা যায়।” নানচিং নতুন কৃষি উন্নয়ন গ্রুপের মহাপরিচালক দাই খাংশুন বলেন, বর্তমানে ৩টি খাদ্য গুদাম এবং বাজার ও সিনোট্রান্স কোম্পানির মোট প্রায় ৩শ’ কর্মী আছে। অতীতে শুধু একটি খাদ্য গুদামে প্রায় ২শ’ কর্মী দরকার ছিল। 

বর্তমানে চীনের ভালো শস্য রয়েছে ৬৫ কোটি টনেরও বেশি। শস্য সঞ্চয়ের শর্ত প্রায় বিশ্ব অগ্রগতির মানে পৌঁছেছে। ধান ও গম দু’টো প্রধান খাদ্যের সঞ্চয় এক বছরের পণ্যভোগ চাহিদা পূরণ করা যায়।

বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে বীজগুলি আরো বিশাল মাটিতে বদ্ধমূল ও অঙ্কুরিত হয়। কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সূক্ষ্ম জাত চীনা খাদ্য উত্পাদন বৃদ্ধিতে অবদানের হার ৪৫ শতাংশেরও বেশি। 

গত দশ বছরে চীনের কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আধুনিক কৃষি উন্নয়নের সমর্থন ও নেতৃত্বাধীন দক্ষতা স্পষ্টভাবে উন্নত হয়েছে। কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রগতির অবদানের হার ২০১২ সালের ৫৩.৫ শতাংশ থেকে ২০২০ সালের ৬০.৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৫ সালে তা ৬৪ শতাংশে উন্নীত হবে।

সিপিসি’র ১৮তম জাতীয় কংগ্রেস থেকে চীন কৃষি ও গ্রামের অগ্রাধিকার উন্নয়নে অবিচল থেকে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন কৌশল কার্যকর করে, কৃষকদের শস্য চাষের প্রেরণা বজায় রাখে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থ ২ হাজার কোটি ইউয়ান বরাদ্দের ভিত্তিতে শস্য চাষ করা কৃষকদের আবার ১ হাজার কোটি ইউয়ান ভর্তুকি দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে কোভিড মহামারী এবং ভূ-রাজনৈতিক বিরোধে বিশ্ব খাদ্য বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ উঠছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চীনা মানুষের বাটি দৃঢ়ভাবে নিজের হাতে রাখার বাস্তব তাত্পর্য আরো গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ব খাদ্য বাজার পরিবর্তনে বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্য উত্পাদন দেশ এবং তৃতীয় বৃহত্তম খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে চীনের খাদ্য নিরাপত্তা বিশ্বব্যাপী তাত্পর্যপূর্ণ।

দশ-বারো বছরে চীনের সংকর ধান কয়েক ডজন দেশ ও অঞ্চলে তুলে ধরা হয়েছে। এর গড় হেক্টর উত্পাদন পরিমাণ স্থানীয় সূক্ষ্ম প্রজাতির চেয়ে প্রায় ২ টন বেশি হয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা—চীন দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা ২০টিরও বেশি দেশে চালু হয়েছে। ফলে লক্ষাধিক মানুষ সরাসরি কল্যাণ লাভ করেছে।

জাতিসংঘ খাদ্য শীর্ষ সম্মেলনের বিশেষ দূত বলেন, চীন ভালোভাবে নিজের খাদ্য মজুত করেছে। যা চীনা মানুষের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্ব জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অবদান রাখছে।

“চীনের কৃষি বিশ্লেষণ রিপোর্ট (২০২২-২০৩১)”-এ দেখা গেছে, আগামী দশ বছর চীনের খাদ্যশস্যের মৌলিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং পরম শস্য নিরাপত্তা পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত করা হবে। তখন খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার হার ৮৮ শতাংশের দিকে উন্নীত হবে। (তথ্য: সিএমজি)