ন্যাভিগেশন মেনু

খিচুড়ি রান্নার রেসিপি


খিচুড়ি পছন্দ করেন কিন্তু খিচুড়ি রান্নার রেসিপি জানেন না ? চিন্তার কারণ নেই! আজ আমরা এমন ভাবে খিচুড়ি রান্নার রেসিপি বর্ণনা করবো এর পর থেকে চোখ  বন্ধ করেই আপনার পছন্দের খিচুড়ি রান্না করে ফেলতে পারবেন।  

বাঙ্গালীর যেকোন ঋতু ও আয়োজনে স্বাদে- পুষ্টিগুণে এক অসাধারণ খাবার হলো খিচুড়ি। আর খিচুড়ি খেতে কে না পছন্দ করে! যেকোন মৌসুমে যেমন বৃষ্টি মানেই বাঙ্গালীর পাতে ইলিশ খিচুড়ি, শীত মানেই সবজি খিচুড়ি, বর্ষায় গোবিন্দভোগের খিচুড়ি,বাড়িতে কোন আয়োজনে মাংস খিচুড়ি ভিন্ন ও লোভনীয় স্বাদের খিচুড়ি ছাড়া যেন বাঙ্গালীর চলেইনা।

আসুন জেনে নিই যেভাবে খুব সহজ পদ্ধতিতে বাড়িতেই রান্না করতে পারবেন ভিন্ন স্বাদের খিচুড়ি

দেখে নিন গোবিন্দভোগের খিচুড়ি রান্নার রেসিপি: 

উপকরণঃ

  •  গোবিন্দভোগ চাল ৭৫০ গ্রাম
  • মুগ ডাল ২৫০ গ্রাম
  • কয়েকটি পেঁয়াজ কুঁচি
  • আদা বাটা ১ টেবিল চামচ
  • রসুন বাটা ১ চা চামচ
  • শুকনো মরিচের গুঁড়ো আধা চা চামচ
  • হলুদের গুঁড়ো এক চা চামচ
  • এলাচ কয়েকটি
  • দারুচিনি কয়েক পিস
  • কাঁচা মরিচ কুঁচি
  •  লবণ
  • তেল আধা কাপ
  • পানি পরিমাণমতো

প্রণালীঃ

প্রথমে মুগডাল সামান্য ভেজে পানিতে ধুয়ে নিন। এরপর চাল ও মুগের ডাল একসঙ্গে মিশিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।

একটি বড় প্যানে তেল গরম করে তাতে এলাচ ও দারুচিনি ভেজে নিন। এবার পেঁয়াজ কুঁচি ও কাঁচা মরিচ দিন। তারপর আদা, রসুন, মরিচের গুঁড়ো ও হলুদ গুঁড়ো দিয়ে দিন। এ সময় এক চা চামচ লবণ দিয়ে দিন।

সব মশলা ভালো করে ভেজে নিতে হবে। তারপর চাল-ডাল দিয়ে ভালো করে ভেজে নিন। এবার পরিমাণমতো পানি ঢেলে নিন। এই সময়ে শেষবারের মতো লবণ দেখুন। লাগলে আরও লবণ দিন।

এবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। চুলার আঁচ মাঝারি রাখুন। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা উঠিয়ে দেখুন, যদি সব পানি শুকিয়ে যায়, তাহলে একবার নেড়েচেড়ে চুলার আঁচ বন্ধ করে দিন।

সব শেষ বৃষ্টির দিনে পরিবারসহ বেগুন ভাজা, মাংস ভুনা আর চাটনি দিয়ে উপভোগ করুন গোবিন্দভোগের খিচুড়ি।

সবজি খিচুড়ি রান্নার রেসিপি

উপকরণ

  • পোলাও চাল- ১ কাপ
  • মিক্স সবজি ( গাজর, আলু, বরবটি, টমেটো, পেঁপে টুকরা )
  • পেঁয়াজ কুঁচি
  •  আদা এবং রসুন- ২ টেবিল চামচ
  • হলুদ, মরিচ, এবং ধনিয়া গুঁড়া মিলে ২ চা চামচ
  • জিরা গুঁড়া – ১ চা চামচ
  • কয়েকটা এলাচি, দারচিনি, তেজপাতা
  • আস্ত জয়েত্রী ২ -৩ টুকরা
  • লবণ স্বাদমতো
  • ধনিয়া পাতা কুঁচি
  • তেল- ২ টেবিল চামচ
  •  অল্প মাখন

প্রস্তুত প্রণালী

হাড়িতে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুঁচি লাল করে ভেজে নিন। এবার একে একে আদা রসুন ২ টেবিল চামচ, হলুদ মরিচ ধনিয়া গুঁড়া মিলে ২ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, কয়েকটা এলাচ, দারুচিনি আর তেজপাতা, আস্ত জয়েত্রী ২ -৩ টুকরা, লবণ স্বাদমতো দিয়ে মশলাটা কষিয়ে এতে চাল আর সবজি দিয়ে দিন। নাড়াচাড়া করে ২ কাপ গরম পানি দিয়ে রান্না করুন ২০ মিনিট। পানির আন্দাজটা কম বেশি হতে পারে তাই একটু দেখে দিবেন।

নামানোর আগে ধনিয়া পাতা কুঁচি দিন। একটুখানি গরম মাখন ঢেলে দিন। পেঁয়াজ বেরেস্তাও দিতে পারেন। টুকরো করা লেবুর পিস দিয়ে সাজিয়ে গরম গরম ডিম ভাজির সাথে পরিবেশন করুন এই হালকা মশলার সবজি খিচুড়ি।

মাংস খিচুড়ি রান্নার রেসিপি

উপকরণ 

  • গরুর মাংস- ১ কেজি (হাড়সহ ছোট করে টুকরা)
  • পোলাওয়ের চাল- ১ কেজি
  • মুগ ডাল- ১ কাপ
  • মসুর ডাল- ২/৩ কাপ
  • লবণ- ১ টেবিল চামচ
  • মরিচ গুঁড়া- ১ টেবিল চামচ
  • হলুদ গুঁড়া- দেড় টেবিল চামচ
  • ধনিয়া গুঁড়া- ১ চা চামচ
  • জিরা গুঁড়া- ১ চা চামচ
  • রসুন বাটা- ২ চা চামচ
  • আদা বাটা- ২ চা চামচ
  • দারুচিনি- ২ টুকরা
  • সবুজ এলাচ- ৫টি
  • লবঙ্গ- ৫টি
  • তেজপাতা- ২টি
  • পেঁয়াজ কুচি- দেড় কাপ
  • তেল- ১ কাপ
  • ঘি- ২ টেবিল চামচ 
  • কেওড়া জল- ৩ টেবিল চামচ

প্রস্তুত প্রণালি

মাংস ধুয়ে লবণ, হলুদ গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, রসুন বাটা, আদা বাটা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, তেজপাতা, পেঁয়াজ কুচি ও তেল দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। চুলায় প্যান চাপিয়ে মাঝারি আঁচে ঢেকে রান্না করুন ৮ থেকে ১০ মিনিট। পানি দেওয়ার দরকার নেই। মাংস থেকেই পানি বের হবে। ১০ মিনিট পর ঢাকনা তুলে কষিয়ে নিন মাংস। পানি শুকিয়ে গেলে ১ কাপ পানি দিয়ে আরও আধা ঘণ্টার জন্য ঢেকে দিন প্যান। 

এর মধ্যে ডাল টেলে নিন। মুগ ও মসুর ডাল একসঙ্গে প্যানে নেড়েচেড়ে নিন। পোলাওয়ের চালের সঙ্গে ভাজা ডাল মিশিয়ে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।

মাংস প্রায় সেদ্ধ হয়ে গেলে ঘি ও ধুয়ে রাখা চাল ডাল দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে ৫ মিনিট নাড়ুন। ৫ মিনিট পর ৮ কাপ পানি দিয়ে দিন। ভালো করে নেড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে উচ্চতাপে রান্না করুন ৮ থেকে ১০ মিনিটের মতো। বলক চলে আসলে নেড়ে কেওড়া জল দিয়ে ঢেকে দিন। ২০ মিনিট মতো রান্না করুন একদম কম আঁচে। ঢাকনা তুলে আলতো হাতে নেড়ে দিন খিচুড়ি। আরও ৫ মিনিট দমে রেখে পরিবেশন করুন গরম গরম। 

ইলিশ খিচুড়ি রান্নার রেসিপি

উপকরণ:

  • ইলিশ মাছ ৫-৬ টুকরো
  •  রসুন বাটা- ১ চামচ
  • পোলাওয়ের চাল- ২ কাপ
  • পেঁয়াজ কুচি- ২ চামচ
  •  মুসুর ডাল- আধা কাপ
  • আদা বাটা- আধ চামচ
  •  পেঁয়াজ বাটা- ২ চামচ
  •  ধনে গুঁড়া- ১ চামচ
  •  হলুদ- ১ চামচ
  •  মরিচের গুঁড়া- ১ চামচ
  •  কাঁচামরিচ ৫-৬টি
  •  এলাচ- ২টি
  •  তেল- আধা কাপ
  •  দারচিনি- ২ টুকরো
  •  লবণ- পরিমাণ মতো

প্রণালি

বড় বড় টুকরো করে কাটা ইলিশ মাছে সামান্য লবণ ও হলুদ দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে অন্তত ৩০ মিনিট। কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি লাল করে ভেজে সব মসলা দিয়ে কষাতে হবে। কিছুক্ষণ পর কড়াইতে মাছের টুকরোগুলো ছেড়ে দিয়ে একসঙ্গে কষাতে হবে মিনিট পাঁচেক।

মাছ কষানো হলে সাবধানে তুলে রাখতে হবে। ওই মসলাতে এ বার চাল ও ডাল দিয়ে কষিয়ে মাপ মতো গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। খিচুড়ির পানি কমে এলে তুলে রাখা মাছগুলো দিয়ে কাঁচামরিচ ছেড়ে দমে দিন ১০ মিনিটের জন্য। বেরেস্তা ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

খিচুড়ির পুষ্টিগুণ: খিচুড়িতে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের ব্যালান্স ঠিকভাবে থাকে। তাই খিচুড়িকে পরিপূর্ণ খাবার বলা হয়। খিচুড়ি তৈরি করা হয় ডাল ও চাল দিয়ে। ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, ভিটামিন ‘সি’, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও ১০টি অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড। এক কাপ খিচুড়ি থেকে প্রায় ২৭২ ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। খিচুড়ির সঙ্গে সামান্য ঘি ও কয়েক ধরনের সবজি মিশিয়ে দিলেই পরিপূর্ণ ব্যালান্সড খাবার হবে।

ডায়রিয়া, বমি, জন্ডিস, জ্বর ইত্যাদির সময় পাতলা খিচুড়ি খেলে শারীরিক দুর্বলতা কাটে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।