ন্যাভিগেশন মেনু

চকরিয়ায় ৭ হাজার একর জমিতে আমন চাষে অনিশ্চয়তা


কক্সবাজারের চকরিয়ার বর্ষার শুরুতে টানা বর্ষনে বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে উপজেলার অন্তত সাত হাজার একর জমিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আমন চাষাবাদ।

মাতামুহুরি নদীসহ সংযুক্ত ছড়া খালগুলো ভরাট হয়ে থাকায় বৃষ্টির পানি নদীতে যেতে না পারায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করা না হলে আমন মৌসুমে অধিক খাদ্য উৎপাদন অর্জিত হবেনা বলে কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে।

চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ শওকত ওসমান আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে জানান, 'ইউনিয়নে চাউম্যাকাটা বিল (পুলেরছড়া) ও নলবিলা বিলে ৮ থেকে ১০ ফুট বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। নলবিলা কেন্দ্রিক দুটি ছড়া ও বাইশ্যারছড়া অত্যধিক ভরাট হওয়ার পাশাপাশি ছিকলঘাট অংশে ছড়াখাল ভরাট করে চাষাবাদ ও ঘর নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানি মাতামুহুরী নদীতে বের হতে পারেনা। ফলে প্রতি বর্ষায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে অন্তত দেড় হাজার একর জমিতে আমন চাষ হয় না। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে অবহিত করলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পেলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।'

লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছার জানান, 'এ ইউনিয়নের নলবিলা অংশে ও বাইন্যারকুম এলাকায় অন্তত ৫০০ একর জমিতে জলাবদ্ধতার কারনে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।'

কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল জানান, 'তার ইউনিয়নে জলাবদ্ধতার কারনে ছোট ভেওলা, খিলছাদক, ভরইন্যারচর, খোজাখালী ও মধ্যম কৈয়ারবিলস্থ অন্তত ১৫০ একর জমিতে আমন চাষ করা সম্ভব হবেনা।'

ডুলাহাজারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, 'ডুলাহাজারার উলুবনিয়া ও পাগলির বিল এলাকায় অন্তত ৫০০ একর জমিতে আমন চাষ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে জলাবদ্ধতার কারনে। ভরাট হয়ে যাওয়া পাগলির ছড়া খনন না হওয়ায় বৃষ্টির পানি জমে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।'

বরইতলীর বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া বলেন, 'সোনাইছড়ি খাল, হারবাংছড়া খাল, তোতকখালী খাল ও পহরচাঁদা খাল খনন না করায় বিবিরখিল, গোবিন্দপুর, ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদ, দক্ষিণ বরইতলী ও বানিয়ারছড়া এলাকার অন্তত এক হাজার ৮৫০ একর জমিতে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে জলাবদ্ধতার কারনে। উপরোক্ত ছড়াখাল খনন করে মাতামুহুরী নদীতে পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করলে এই ইউনিয়নের কমপক্ষে ৫ হাজার কৃষক পরিবার খাদ্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।'

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, 'জলাবদ্ধতা দুর করার অজুহাত দেখিয়ে হারবাংছড়া খালের উজানের ৬ কিলোমিটার অংশে খনন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও তা কোন কাজেই আসছেনা নিচের অংশ খনন না হওয়ায়। ফলে বরইতলীর বিশাল আবাদী জমি প্রতি বর্ষায় পানির নিচে তলিয়ে থাকায় চাষাবাদ হয়না। এতে হতদরিদ্র কৃষকরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে।'

চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ জসিম উদ্দীন জানান, 'আগে ছোট-বড় খাল ছিল। বৃষ্টি হলেই পানি ভাটির দিকে নেমে যেতো। এখন, রেললাইনসহ বাঁধ দেওয়ায় পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় পালকাটা, বুড়িপুকুর ও সওদাগর ঘোনাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে অন্তত ১০০ একর জমিতে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।'

এছাড়া হারবাং, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড়ভেওলা ও খুটাখালীতে দুই হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতার কারনে আমন চাষ হয়না বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, 'চকরিয়া খাদ্য উদ্বৃত্ত উপজেলা। চাহিদার বেশি উৎপাদন হয়। উৎপাদন আরও বাড়িয়ে সারাদেশের চাহিদা পূরণে অধিক সহায়ক হতো জলাবদ্ধতা দূরীকরণের ব্যবস্থা নেওয়া হলে। খোঁজখবর নিয়ে ও সরেজমিন দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যদের সাথে পরামর্শক্রমে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।'

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, 'বর্ষায় আমন চাষাবাদ নিশ্চিত করতে উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, কিছু কিছু ভরাট খাল খননের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভরাট হয়ে যাওয়া সবকটি ছড়াখাল খনন করে বর্ষা মৌসুমে আমন চাষ নিশ্চিতপূর্বক খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে কৃষক পরিবারে হাসি ফোটাতে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অচিরেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এসএএম/সিবি/এডিবি/