প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের বৃহত্তম ৫২ তম জশনে জুলুস শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। জুলুসে অংশ নিয়েছেন লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে মুরাদপুরের ষোলশহর আলমগীর খানকা-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে শুরু হয় জুলুস।
এ বছর জুলুসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবের শাহ্ ।
জুলুছে প্রধান মেহমান হিসেবে আছেন সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ । এ জুলুসের আয়োজক সংস্থা আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট এবং সার্বিক সহযোগিতা করে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ।
এদিকে জুলুস উপলক্ষে নগরজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। নগর ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনাও।
সিএমপির নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, জুলুস বিবিরহাট হয়ে মুরাদপুর, মুরাদপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে ডান দিকে মোড় নিয়ে ষোলশহর ২ নম্বর গেট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে জিইসি মোড়, লর্ডস ইন হোটেল থেকে ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর বামে মোড় নিয়ে বিবির হাট থেকে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ ফিরে আসবে। এ সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এছাড়াও নগরের বিবিরহাট, মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, হামজারবাগ, শোলকবহর, মির্জারপুল রোডের মুখ, বায়েজিদ বোস্তামী রোডের মুখ (শেরশাহ মোড়), বেবি সুপার মার্কেট, প্রবর্তক মোড়ের মুখ, জাকির হোসেন রোডের মুখ, গোলপাহাড় রোডের মুখ ও পুনাক মোড়ে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন করা হবে। ফলে এই সময়ে র্যালি অভিমুখে সকল ধরণের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
বিভিন্ন মোড়ে সুসজ্জিত তোরণ দেওয়া হয়েছে। সড়ক বিভাজকে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা, আনজুমানের পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। ভোর থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে বাস, ট্রাক, জিপে করে আসছেন মানুষ। সুন্নিয়া মাদরাসা, বিবিরহাট, মুরাদপুর এলাকায় লাখ লাখ মানুষের সমাগমে পরিণত হয়েছে।
জুলুসকে ঘিরে রেললাইনের দুই পাশে এক কিলোমিটারজুড়ে বসছে ভাসমান মেলা। টুপি, মেসওয়াক, তসবিহ, ইসলামি বই, আতর, পতাকা, পাঞ্জাবি, পাজামা, জুতোসহ মুখরোচক খাবার বিক্রি হচ্ছে মেলায়। অনেকে তবররক হিসেবে শরবত, পানি, চকলেট, জিলাপি, খেজুর, আপেল বিতরণ করতে দেখা গেছে।
গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেছেন, চট্টগ্রামে জশনে জুলুসের প্রবর্তন হয়েছে ৫০ বছর আগে ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল। দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের (পাকিস্তান) তৎকালীন সাজ্জাদানশীন, আধ্যাত্মিক সাধক, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রা.) এ জশনে জুলুসের প্রবর্তন করেন।
প্রথম জুলুসটি গাউসে জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ্ (রহ.)-এর দিকনির্দেশনায় নগরীর বলুয়ারদীঘি পাড় খানকাহ্ শরিফ থেকে আনজুমানের সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে এসে শেষ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ৫২তম জুলুস শুরু হয়। এবারের জুলুসে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ অংশ নিচ্ছেন।
আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্সের (এএসএফ) রবিউল হাসান জুয়েল জানান, এএসএফের ৩০০ প্রশিক্ষিত সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এর বাইরে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের কর্মী ও জামেয়ার হাজার হাজার ছাত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।
জশনে জুলুস আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সহ সভাপতি মো. আমির হোসের সোহেল।
উল্লেখ্য, এই জুলুসটি ১৯৭৪ সালে আল্লামা তৈয়্যব শাহ (রহ.) চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লার ভুলোয়ার দিঘীর পাড় থেকে সূচনা করেন। এরপর থেকে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর ১২ই রবিউল আউয়াল পালিত হয়ে আসছে এ জুলুস।