ন্যাভিগেশন মেনু

চাঁদা না দেওয়ায় গণপরিবহনে শিক্ষার্থীকে লাঞ্চিত, দুই হিজড়াকে গণধোলাই


ঢাকার সাভারে একটি গণপরিবহনে ভ্রমনরত এক শিক্ষার্থী যাত্রীর কাছে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে তাকে মারধর ও লাঞ্চিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে কয়েকজন হিজড়ার বিরুদ্ধে, এঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্ত দুই হিজড়াকে গণধোলাই দিয়েছে বাস যাত্রীরা। শনিবার (৬ মার্চ) বেলা পোনে ১২টা নাগাদ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাজার বাস স্টান্ড এলাকায় এঘটনা ঘটে। 

আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুলফিকার আলী।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সকালে নবীনগর থেকে ঢাকাগামী একটি গণপরিবহণে উঠে অন্যান্য সময়ের মত যাত্রীদের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করছিলো দু’জন হিজড়া। পরে ওই বাসে থাকা এক শিক্ষার্থী হিজড়াদের চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হয়, এসময় বাসে থাকা ওই শিক্ষার্থী ও হিজরাদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে, এক পর্যায়ে বাসের অন্যান্য যাত্রীরা মিলে দুই হিজড়াকে গণপিটুনি দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেয়।’

এদিকে বাস থেকে নেমে আবারও সাভার বাজার বাসস্টান্ড এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ী তথা হকারদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে হিজড়ারা। এসময় কয়েকজন ফুটপাত ব্যবসায়ীর দোকান ভাংচুর করাসহ তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাভার উপজেলা হকার্স লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ আব্দুল কাদির মোল্লা।

কাদির মোল্লা অভিযোগ করে আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, ‘সকালে বাস যাত্রীদের সাথে সংঘর্ষের পর সাভার বাস স্টান্ডে নেমে দলবদ্ধভাবে প্রায় ১৫/২০ জন হিজড়া হকারদের উপর চড়াও হয়। কেন হকাররা হিজড়াদের পক্ষ নিয়ে বাস যাত্রীদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়নি এমন অভিযোগ তুলে সেখানে থাকা ফুটপাতের কয়েকটি দোকান ভাংচুর ও হকারদের মারধর করে ৪ জন হকারের কাছ থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা ।’

তিনি বলেন, ‘হিজড়াদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে গেছি। প্রতিদিন সাভার বাজার বাস স্টান্ডের উভয় পাশে থাকা প্রায় ২ হাজার ফুটপাত ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ ও ২০ টাকা হারে অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে হিজড়ারা। দিনের পর দিন এভাবে তাদের অত্যাচার চললেও কোন মহল থেকেই এর প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।’

সাভার মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুলফিকার আলী বিলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, তবে যেই শিক্ষার্থীর সাথে হিজরাদের মারামারি হয়েছিলো, তাকে না পাওয়ায় বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।’

এদিকে সকালে হিজরাদের গণপিটুনির খবর জানাজানি হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হিজরাদের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন নেটিজেনরা। অনতিবিলম্বে গণপরিবহনে হিজরাদের চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য সরকার ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিও আহ্বান জানান তারা।

জানতে চাইলে নিয়মিত গণপরিবহনে চলাচলকারী মো. সুমন নামে বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক ব্যক্তি জানান, সাভার, আশুলিয়া অঞ্চলে চলাচলরত প্রতিটি গণপরিবহনে উঠেই নিয়মিত চাঁদাবাজি করে হিজরারা। যাত্রীদের কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তাকে হেনস্থ্যা করা হয়, অনেকটা আত্মমানসম্মানের ভয়েই হিজরাদের চাঁদা দিতে বাধ্য হন তারা।

সাভার মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ তথা হিজড়াদের পুনর্বাসন না করায় তাদের এই পথ থেকে ফেরানো যাচ্ছে না। কোন ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে আমরা খতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা নিতে পারি, কিন্ত তাতে স্থায়ী সমাধান আসবে না যতদিন না তাদের পুনর্বাসন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

বেআইনীভাবে প্রকাশ্যে গণপরিবহণে উঠে যাত্রীদের হয়রানী ও চাঁদা আদায় করলেও এটি বন্ধে পুলিশ কিছু করনীয় আছে কিনা, জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এক্ষেত্রে আসলে তেমন কিছু করার নেই, তবে কেউ যদি অভিযোগ করে তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এসএম/ওআ