ন্যাভিগেশন মেনু

চাটমোহরে বেশি দামে এলপিজি বিক্রির অভিযোগ


প্রায় তিন দশক ধরে দেশে এলপি গ্যাস বাজারজাত হয়ে আসলেও দীর্ঘদিন সরকারিভাবে এলপিজির মূল্য নির্ধারিত ছিল না। বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন দামে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে। এতে ঠকতে হয়েছে ভোক্তাকে।

জনস্বার্থ বিবেচনায় ২০১৬ সালে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করলে দীর্ঘ দিন পরে হলেও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিশ্ব বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) মূল্য সমন্বয় শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো বিইআরসি এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। ২৯ এপ্রিল দাম সমন্বয় করা হয়। বিশ্ববাজারে দাম কমায় দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সর্বশেষ মূল্য সমন্বয়ে বিইআরসি বেসরকারি খাতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজি মূসকসহ ৯০৬ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৪২ টাকা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য করে। এ সিদ্ধান্ত গত ১ জুন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও চাটমোহরের এলপিজির পাইকারী ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা এই সিদ্ধান্ত না মেনে বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করে আসছে। এতে হাজার হাজার ভোক্তা প্রতি সিলিন্ডারে ৭৮ থেকে ১০০ টাকা, কোথাও কোথাও তার চেয়ে বেশি টাকা গুনছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাটমোহরের বিভিন্ন হাট বাজারে বিস্ফোরক সনদ ছাড়াই এলপিজি বিক্রি করছেন শত শত দোকানি। চায়ের দোকান, মুদি দোকানেও দেদারছে বিক্রি হচ্ছে গ্যাসের সিলিন্ডার। এসব দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। ডিলাররা খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতি সিলিন্ডারের দাম নিচ্ছেন ৮৮০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা যানবাহন ভাড়া দিয়ে দোকানে নিয়ে যাচ্ছেন এলপিজি সিলিন্ডার। এতে দূরত্বভেদে খুচরা বিক্রেতাদের কেনা খরচ পড়ছে ৮৯০ থেকে ৯০০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা সিলিন্ডার প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ করছেন। ফলে ভোক্তাকে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজি কিনতে হচ্ছে ৯২০ থেকে ৯৩০ টাকায়। গ্রামাঞ্চলে এর চেয়েও বেশি দাম নিচ্ছেন অনেক বিক্রেতা। প্রতি সিলিন্ডারে ভোক্তা ঠকেছেন ৭৮ টাকা থেকে প্রায় ১০০ টাকা।

চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার বাসিন্দা মোহাইমিনুল হালিমসহ কয়েকজন ভোক্তা জানান, '১২ কেজির বোতল হাতবদলের ক্ষেত্রে পরিবহন ভাড়াসহ ডিস্ট্রিবিউটর বা বিপণন চার্জ ৫০ টাকা, ডিলার, রিটেইলারের চার্জ ৩০ টাকা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৮৪২ টাকার সাথে যুক্ত থাকলেও চাটমোহরের হাট-বাজারে প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডার ৯২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।'

পাশাপাশি খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, 'প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডার আমদের ৮৭০ থেকে ৮৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। পরিবহন খরচসহ ৮৯০ টাকা পরে যাচ্ছে। ৯২০ টাকায় বিক্রি না করলে আমাদের লাভ থাকছে না। সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে আমাদের এলপিজি সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে। তাই ক্রয় মূল্য বেশি হওয়ায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে আমরা এলপিজি বিক্রি করতে পারছি না।'

চাটমোহর পৌরসদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত কাওসার ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী কাওসার হোসেন চাটমোহরসহ পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় একটি এলপিজি কোম্পানির ডিলার।

তিনি জানান, 'কোম্পানি আমাদের নিকট থেকে প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নিচ্ছে ৯০৫ টাকা। বিক্রির একটি টার্গেট ও দিয়ে দিচ্ছে কোম্পানি। টার্গেট পূরণ করতে পারলে পরবর্তী সরবরাহের সময় ৪৫ টাকা ফেরত দিচ্ছেন সমন্বয়ের মাধ্যমে। আর টার্গেট পূরণ করতে না পারলে ৩৫ টাকা ফেরত দিচ্ছেন সমন্বয়ের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে পতি সিলিন্ডারের দাম পরছে ৮৬০ বা ৮৭০ টাকা। আমরা কমপক্ষে ২০ সিলিন্ডার বিক্রির সময় ৮৬০ টাকা এবং ৫ সিলিন্ডার বিক্রির সময় ৮৭০ টাকা দাম নিচ্ছি। এ টাকায় কিনে একজন খুচরা বিক্রেতাকে ৯০০ থেকে ৯২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।'

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈকত ইসলাম জানান, কোনো ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করতে পারেন না। বিষয়টি আমি খুব দ্রুত খতিয়ে দেখছি।

আইকেআর/এসএ/এডিবি/