ন্যাভিগেশন মেনু

চাটমোহরে সরকারি সহায়তা ও ভালো দাম থাকায় বেড়েছে পাট চাষ


পাবনার চাটমোহরে গত দুই বছর যাবত পাটের ভালো দাম পাওয়ায় এবং পাট চাষ সম্প্রসারণে সরকার কৃষককে সহায়তা করায় পাট চাষের পরিধি বেড়েছে।

গত মৌসুমে চাটমোহরের ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের পাট চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে ৮ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দেশি ১৩৫ হেক্টর, তোষা ৮ হাজার ৪৪৫ হেক্টর এবং মেস্তা ১৪০ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে এ বছর ৬২০ হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস পাট চাষের সার্বিক বিষয় দেখাশোনা করলেও পাট অধিদপ্তরের জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তারা পাট চাষ সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছেন।

চাটমোহরে কর্মরত উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া জানান, পাট অধিদপ্তরের অধীনে চাটমোহরে তালিকাভূক্ত পাটচাষীর সংখ্যা ৫০০ জন। পাট অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে চাটমোহরের ২ হাজার ৪৮৫ জন কৃষকের মাঝে রবি-১ জাতের ২ হাজার ৪০০ কেজি পাটবীজ ও চাষী পর্যায়ে উৎপাদিত ৯৮৯৭ জাতের ৮৫ কেজি পাটবীজ সর্বমোট ২৪৮৫ কেজি পাটবীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। পাটবীজ পাওয়া কৃষকদের ৬ কেজি করে ইউরিয়া ৩ কেজি করে টিএসপি ও ৩ কেজি করে পটাশ সারও বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

তিনি আরও জানান, গত বছরের শেষ দিকে বীজ উৎপাদন মৌসুমে ৩৩০ জন চাষীকে ১০ শতক করে জায়গায় বীজ উৎপাদনের জন্য বিনামূল্যে সার বীজ ও কীটনাশক বিতরণ করা হয়েছিল। হরিপুর, ডিবিগ্রাম,পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নে বীজ উৎপাদন করা হয়। পাট চাষে দক্ষতা বাড়াতে খুব শীঘ্রই ১০০ জন পাটচাষীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তালিকাভুক্ত চাষীদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের নাম কর্তন করে নতুন নাম সংযোজনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পাটচাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান পাটচাষীরা পাট খেতে আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন। চাষ, বীজ, সার, দুই দফা আগাছা পরিষ্কার, কাটা, পঁচানো, আশ ছড়ানোসহ এক বিঘা জমিতে পাট চাষে প্রায় ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। গড় ফলন পাওয়া যায় প্রায় ৮ মণ। বিঘাপ্রতি প্রায় ২ হাজার টাকার পাটকাঠিও পাওয়া যায়। গত বছর ভর মৌসুমে প্রতিমণ পাট ২ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও ক্রমশই পাটের দাম বাড়তে থাকে। যারা ভরা মৌসুমে পাট বিক্রি করে দিয়েছিলেন তারা বিঘাপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা লাভ পেয়েছিলেন। আর যারা বেশ পরে বিক্রি করেন তারা বিঘাপ্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকা লাভ পেয়েছেন।

জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে জানান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাটজাত দ্রব্যের বিকল্প নেই। সরকার পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি ও পাটজাত দ্রব্য তৈরীতে বিশেষ নজর দিয়েছে। চাষীরা পাটের উপযুক্ত মুল্য ও পাচ্ছে। এমতাবস্থায় চাটমোহরে স্থানীয়ভাবে পাটের বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। পাট অধিদপ্তর কৃষকের নিকট থেকে কিছুদিন আগে ২০০ টাকা কেজি দরে ৮৫ কেজি পাটবীজ ক্রয় করে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। বর্তমানে প্রায়শই বৃষ্টি হচ্ছে, গরম পরছে। এমন আবহাওয়ায় পাট ভালো বাড়ে। কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে এবং পাটের বাজার মূল্য ভাল থাকলে আবার পাটের সুদিন ফিরবে, চাষীরা উপকৃত হবে। বিশ্বে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার আরও বাড়লে সোনালী আঁশখ্যাত পাটশিল্পের আরও প্রসার ঘটবে।  

আইকেআর/এসএ/এডিবি/