ন্যাভিগেশন মেনু

চিনের শেনচেন বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর


শুয়েন ফেই ফেই

২৬ আগস্ট হল চিনের শেনচেন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী। মাত্র ৪০ বছরে একটি ছোট মত্সগ্রাম এখন কোটি কোটি জনসংখ্যার একটি আধুনিক বড় শহরে পরিণত হয়েছে। শহরটি চিনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতির সুফলের সাক্ষী।

চিনের প্রথম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে শেনচেনের উন্নয়নে চিনের কয়েক প্রজন্মের নেতাদের বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা কাজে লেগেছে। শেনচেনের উন্নয়ন-প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে অনেক স্মরণীয় গল্পও আছে।

২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর সি চিন পিং চিনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাত্র দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর একমাস অতিক্রান্ত হয়েছে। তিনি দেশের ভিতরে সফরের প্রথম ধাপ হিসেবে শেনচেনকে বেছে নেন। সফরকালে স্থানীয় লোকজনের খোঁজ-খবর নেন সি চিন পিং। তাঁর শেনচেন সফর দেশ-বিদেশে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

লিয়ানহুয়া পাহাড়ে, প্রেসিডেন্ট সি চিনের সাবেক নেতা তেং সিয়াও পিং-এর মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন এবং সেখানে একটি কাউন্সিল গাছের চারা রোপণ করেন। এর কাছাকাছি শেনচেনের সিয়ানহু উদ্ভিদোদ্যানেও একটি কাউন্সিল গাছ আছে। আর সেটি ১৯৯২ সালে তেং সিয়াও পিং দক্ষিণ চিন পরিদর্শনের সময় রোপণ করেছিলেন। সেই বছর তাঁর বিশ্ববিখ্যাত ‘চিনের দক্ষিণাঞ্চল সফর’ চিনে আরেক দফা সংস্কার ও উন্মুক্তকরণে প্রাণশক্তি যোগায়।

যারা তেং সিয়াও পিং-এর সঙ্গে ‘চিনের দক্ষিণাঞ্চল সফর’ করেছিলেন, তাদেরকে প্রেসিডেন্ট সি বলেন: দেশের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর প্রথম অভ্যন্তরীণ সফরে তাঁর চিনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ শুরু হওয়ার জায়গায় যাওয়া উচিত। তিনি চেয়েছিলেন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করতে এবং এই প্রক্রিয়াকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে। তিনি বলেন, “এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, সিপিসির নেওয়া সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। ভবিষ্যতেও আমরা এই সঠিক পথ, দেশকে সমৃদ্ধ করার পথ এবং জনগণকে ধনী করার পথে অবিচল থাকবো।”

শেনচেন শহর ত্যাগ করার পর প্রেসিডেন্ট চুহাই, ফোশান এবং কুয়াংচৌ শহর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে প্রেসিডেন্ট সি বার বার জোর দিয়ে বলেন যে, ‘সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ হল আধুনিক যুগে চিনের ভাগ্যকে পরিবর্তন করার গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি’। ১১ মাস পর আয়োজিত চিনের ১৮তম কংগ্রেসের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে চিনে নতুন দফার সার্বিকভাবে সংস্কার সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। ৩ শতাধিক সংস্কার কার্যক্রম তখন পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন শুরু হয়।

২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার ৪০তম বার্ষিকীতে, চিনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আবারও শেনচেন শহরে যান। বৈশ্বিক পরিবেশে অনিশ্চিত উপাদান বেড়ে গেছে এবং অভ্যন্তরীণ সংস্কার-প্রক্রিয়া প্রবেশ করেছে কঠিন সময়পর্বে। এমন প্রেক্ষাপটে, চিন কিভাবে সিদ্ধান্ত নেবে?

লিয়ানহুয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ প্রদর্শনশালায় প্রেসিডেন্ট সি একটি বিখ্যাত স্লোগানের সামনে দাঁড়ান। স্লোগানটি এমন: ‘সময় মানে টাকা আর কার্যকারিতা প্রাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ’। গত শতাব্দীর আশির দশকে এই স্লোগান শেনচেন শহরের শ্যখৌ শিল্প অঞ্চলে লাগানো ছিল। এটা সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের স্রষ্টাদেরকে অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নে মিরাকল সৃষ্টিতে উত্সাহ দিয়েছিল। এখন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। প্রেসিডেন্ট সি আবারও ঘোষণা করেছেন যে: ‘চিনের সংস্কার থামবে না, উন্মুক্তকরণ থামবে না’। তিনি বলেন, “৪০ বছরে চিনের উন্নয়ন-প্রক্রিয়ার সাফল্য উল্লেখযোগ্য। উন্নয়নের পথ আরও সুষ্ঠু ও আরও ভালো হচ্ছে। তাহলে কেন আমরা এই পথে অবিচল থাকবো না? কিছু সমস্যা ও কঠিনতা থাকলেও, আমরা অব্যাহতভাবে এই পথে অবিচল থাকবো, যাতে সকল সমস্যা সমাধান করা যায়। আমাদের উচিত সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পথে এগিয়ে যাওয়া, আরও গভীর ও বিস্তৃত ক্ষেত্রে উন্নতি করা। চিনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কখনই থামবে না। পরবর্তী ৪০ বছরে চিন, নিশ্চয়ই আরও উজ্জ্বল ও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করবে।”

প্রেসিডেন্ট সি’র পরিকল্পনা এবং নির্দেশনায়, নতুন যুগে চিনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ধাপ আরও দৃঢ় হয়েছে। 'কুয়াংতুং-হংকং-ম্যাকাও বৃহত্তর উপসাগীয় অঞ্চল’-এর নির্মাণ, হাইনান অবাধ বাণিজ্য এলাকার স্থাপন, সার্বিকভাবে বাজারে প্রবেশের নেতিবাচক তালিকা ব্যবস্থা চালু, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের মাধ্যমে‘ চিনের বন্ধুর সার্কেল ’আরও বড় করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে ও হচ্ছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের কঠিন পর্যায়েও চিনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ থেমে থাকে নি। শেয়ার কোম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বৈদেশিক পুঁজিবিনিয়োগ সহজতর করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্টসি বলেন, ‘সমাজতান্ত্রিক আধুনিক শক্তিশালী দেশ গড়ে তোলা এবং চিনা জাতির মহান পুনরুত্থানের চিনা স্বপ্ন বাস্তবায়ণ করা একটি রিলে দৌড়ের মতো’। তিনি বলেন, “আমাদের উচিত এই রিলে দৌড়ে সমন্বয় বজায় রেখে দৌড়ানো। প্রত্যেক প্রজন্মকে পরের প্রজন্মের জন্য দৌড়াতে হবে। গোটা সিপিসি এবং দেশের বিভিন্ন জাতির জনগণের উচিত আরো কঠোরভাবে চিনা কমিউনিস্ট পার্টিকে কেন্দ্র করে চিনের বৈশিষ্ট্যময় সমাজতন্ত্রের মহান চেতনা অনুসারে, গোড়ার লক্ষ্য ও  কর্তব্যকে মনে রাখা, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণকে শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা, অব্যাহতভাবে সুন্দর জীবন সম্বন্ধে জনগণের সুন্দর আকাঙ্খা বাস্তবায়ন করা, নতুন যুগে চিনা জাতির জন্য নতুন ও আরও বড় মিরাকল সৃষ্টি করা, বিশ্বের কাছে বিস্ময়কর নতুন ও আরও বড় মিরাকল সৃষ্টি করা।”

শুয়েন ফেই ফেই, চায়না মিডিয়া গ্রুপ