ন্যাভিগেশন মেনু

চীনা গ্রামবাসীদের ভাগ্যের পরিবর্তনে কফি


চা, ঘোড়ার রাস্তা,বন্য প্রাচীন চা গাছ ও পুয়ের চা নিয়ে বিশ্ব বিখ্যাত চীনের ইউন নান প্রদেশের পুয়ের শহর। গেল কয়েক বছরে শহরটি চীনের সবচেয়ে বড় কফি চাষ ও উত্পাদন এলাকায় পরিণত হয়েছে। পুয়ের কফির বিশেষ স্বাদ সারা বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে।

চায়ের তুলনায় পুয়ে শহরে কফি চাষের ইতিহাস তেমন পুরোনো না। কর্কটক্রান্তিরেখা শহরকে অতিক্রম করেছে। ফলে সেখানে উষ্ণ অঞ্চল বেশি এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সেখানকার এই ভাল পরিবেশ সবধরনের কফি চাষের জন্য সহায়ক এবং উপযোগী। তাই একে সোনালী এলাকা বলে ডাকা হয়।

যখন চীনে শুরু হয় সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতির বাস্তবায়ন, তখন পুয়ে শহরে মাত্র দশ থেকে বারো লাখ বর্গমিটার জমিতে কফি চাষ হতো। গত শতাব্দীর ৮০-এর দশকে স্থানীয় শিল্প কাঠামোর সমন্বয় কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করে কফি। কফি চাষ ও উত্পাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ২০১২ সালে পুয়ে শহরটি চীনের কফি শহরের নাম পায়।

সিপিসির ১৮তম অধিবেশনের পর থেকে পুয়ে শহর কফির চাষ, গবেষণা, প্রক্রিয়াকরণ, বিক্রয় এবং গুদামজাতকরণসহ কফি শিল্প চেইন তৈরি করে। আর শহর ও জেলা পর্যায়ে কফি প্রসাশন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে। চীনে প্রথম গ্রীন কফি টার্গেট প্রাইস ইন্স্যুরেন্স চালু করে এবং স্থানীয় কফি কোম্পানি লালনপালন করে।

পুয়ে শহরে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কফির চাষ করা হয়। সেখানে ২০০ বর্গকিলোমিটার কফি এবং ৭০ বর্গকিলোমিটার কফি ক্ষেত যথাক্রমে নেসলে এবং স্টারবাকসের স্বীকৃতি পায়।

জাতীয় কফি পরীক্ষা প্রধান ল্যাবরেটরি ও ইউন নান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রান্তীয় ফসল ইনস্টিটিউটসহ নানা সংস্থায় কফি গবেষণা ও শিক্ষাদান চলছে। তাছাড়া, পুয়ে প্রতিষ্ঠা করে আন্তর্জাতিক কফি বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম এবং শিল্প পরিষেবা প্ল্যাটফর্ম, সেখানে বিশ্বের কাছে কফির দামের সূচক প্রকাশ করা হয়।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউন নান চীনের কফি চাষের বৃহত্তম প্রদেশ। ২০২১ সালে পুয়ে শহরে কফি চাষের আয়তন ছিল ৪৫ হাজার হেকটর এবং উত্পাদন পরিমাণ ৪৬ হাজার টন। তা চীনে কফি উত্পাদন ও মূল্যের পরিমাণে সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি, প্রতিবেশি মিয়ানমার ও লাওসের কফি চাষ শিল্পও এগিয়ে নিয়ে যায়।

আজ, পুয়ে শুধু একটি চায়ের নাম নয়, বরং কফি অনুরাগীরাও এখন এ নাম ভাল করে জানে।

২০২১ সাল থেকে অ্যারাবিকা কফি বিনের ক্রয় মূল্য বেড়েছে প্রতি কেজি ৩০ ইউয়ান। আর ২০২১ সালে পুয়ে কফি চাষীদের গড় আয় ছিল ৪,১৭৫ ইউয়ান। পুয়ে শহরের মেং লিয়ান জেলায়, গত শীত্কাল থেকে লাকু জাতি ওয়া জাতির মানুষসহ স্থানীয়দের আয় ১৫ কোটি ইউয়ান বেড়েছে।

লাকু জাতির নানু জানিয়েছেন, তার পরিবার ১.২ হেক্টর কফি চাষ করে। আর প্রতি কেজি কফির দাম ৪.৭ ইউয়ান। এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ইউয়ানের কফি বিক্রি করেছেন তিনি। আর বাকি কফি বিক্রি হলে আরো ৩০ হাজার ইউয়ান আয় হবে তার।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক, বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ও উদ্যোক্তা পুয়ে এসে কফি ব্যবসা শুরু করেছে। 

গত সেপ্টেম্বরে ইয়াং হং চিয়ান নামে একজন ছেলে কাজ পরিত্যাগ করে পুয়ে এসে একটি কফি বাগান ভিত্তিক খামার তৈরি করে। তিনি বলেন, এখন পরিবহন, লজিস্টিক ও ইন্টারনেট অনেক উন্নত হয়েছে। তাই তিনি আশা করেন, কফির মাধ্যমে পুয়ের আরও বেশি পণ্য পাহাড়ের বাইরে যেতে পারবে।

কফি বীজ ছোট হলেও এটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পণ্য। পাহাড়ের কফি চাষীরা মোবাইলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কফি ফিউচার মূল্য ও স্থানীয় কোম্পানির ক্রয় মূল্য জানতে পারে এবং তারা সমবায় প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের ব্র্যান্ড তৈরি করে। 

পুয়ে শহরে অবস্থিত ইউন নান আন্তর্জাতিক কফি বিনিময় কেন্দ্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি লিউ হাই ফেং সম্প্রতি দশম পুয়ে গ্রিন কফি প্রতিযোগিতা আয়োজনে ব্যস্ত আছেন। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভাল কফি বিন বাছাই করা হবে। আর কৃষকদেরকে ভাল কফি বিনের দামও বেশি হবে এমন ধারণা জানাবে। এ পর্যন্ত প্রতিযোগিতার জন্য ১২০ ধরনের কফি বিন পাওয়া গেছে, তা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।  

পুয়ে আওলেই কফি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ইয়াং ছুন হং জানিয়েছেন, আগে তার কোম্পানি প্রতিবছর ৬,০০০ টনের বেশি কফি রপ্তানি করতো। আর ২০২১ সাল থেকে তাদের সব কফি বিন অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি হয়। ক্রমবর্ধমান চাহিদা এ শিল্পের সম্ভবনা বাড়ায়।  

ইউন নান কফি শিল্প চেনের কাঁচামাল সরবরাহ পর্যায়ে থাকার সমস্যা সমাধানে গভীর প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি ও কফি পর্যটন শিল্প উন্নয়ন শুরু করে।

সি মাও এলাকার খাই হ্য গ্রামে ৬৬৭ হেক্টর কফি চাষ করা হয় এবং গ্রামের ২৪০টি পরিবার কফি চাষ করে। হুয়া রুন মেই তার পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের কফি চাষী। তার উদ্যোগে গ্রামের বাসিন্দারা জৈব কফি চাষ শুরু এবং বৈশিষ্ট্যময় কৃষি খাবার ব্যবসা করে। গত বছর গ্রামের বাসিন্দাদের গড় আয় ১৮.৪ হাজার হয়। হুয়া রুন মেই জানিয়েছেন, তার সমবায় প্রতিবছর ৫০ টনের বেশি কফি উত্পাদন করে। আর প্রতি কেজির দাম ৬০ ইউয়ান। আগে এক কেজি কফি বিনের দাম এক কাপ কফির চেয়ে কম ছিল। আর হুয়া রুন মেই  জৈব কফি চাষের মাধ্যমে এ ইতিহাস পরিবর্তন করেন। গত বছর থেকে ২০ হাজারের বেশি কফি অনুরাগী এ গ্রাম ভ্রমণ করেছেন।

চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণে জন্ম হয় পুয়ের কফি শিল্প। আর ভবিষ্যতে কফির মতো আরো বেশি পণ্য চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করা যায়। - লি ওয়ান লু শিশির, সিএমজি