ন্যাভিগেশন মেনু

চীনের উন্মুক্তকরণের দরজা আরও প্রশস্ত করছে সিএন এক্সপো


সম্প্রতি চার-দিনব্যাপী ১৯তম চীন-আসিয়ান মেলা এবং চীন-আসিয়ান ব্যবসা ও বিনিয়োগ শীর্ষসম্মেলন কুয়াংসি’র নাননিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। তাতে মোট ১ হাজার ৬ শ’র বেশি প্রতিষ্ঠান অফলাইনে অংশগ্রহণ করেছে। আর ৮০টিরও বেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক প্রমোশন কার্যক্রম এবং ২০টিরও বেশি উচ্চ পর্যায়ের ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল নির্মাণের পরিষেবা থেকে শুরু করে “এক অঞ্চল এক পথ” উদ্যোগ আসিয়ান দেশসমূহে কার্যকর, এবং আরসিইপি’র কার্যকর বেগবান করা পর্যন্ত, সিএন এক্সপো চীনা উন্মুক্তকরণের দরজা আরও বড় এবং চীন-আসিয়ান আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণ প্রক্রিয়ার গভীরতাকে স্বচক্ষে দেখেছে। 

২০০৪ সালে ভিয়েতনামের ট্রুং গুয়েন লেজেন্ড কফি’র  ডিলার নমুনা নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে। তারপর কোম্পানির “ট্রুং গুয়েন জি-৭” ব্র্যান্ড বেশ কয়েক বছর ধরে সিএন এক্সপোয় কফি বিক্রির পরিমাণের দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে।  বেশ কয়েকটি পণ্য সুষ্ঠুভাবে চীনের কয়েকটি ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম ও অফলাইন সুপারমার্কেটে প্রবেশ করেছে।

সিএন এক্সপোয় ট্রুং গুয়েন লেজেন্ড কফি’র মতো উদাহরণ আরও অনেক আছে। ২০০২ সালের নভেম্বরে “চীন-আসিয়ান সার্বিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার কাঠামো চুক্তি” স্বাক্ষরের মাধ্যমে চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০০৩ সালে চীন আসিয়ানের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। ২০০৪ সালের নভেম্বরে প্রথম সিএন এক্সপো এবং চীন-আসিয়ান ব্যবসা ও বিনিয়োগ শীর্ষসম্মেলন উদ্বোধন হয়। বহু বছরের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে  সিএন এক্সপো প্রতিষ্ঠিত চীন ও আসিয়ানের মধ্যে বিনিময় চ্যানেল দিন দিন সুষ্ঠু হয়েছে। এটি চীনের আন্তর্জাতিক “বন্ধু চক্র” ধারাবাহিকভাবে সম্প্রসারণ করেছে। 

সিএন এক্সপো’র মহাসচিব ওয়েই ছাওহুই বলেন, চীন ও আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বহু বছর ধরে সিএন এক্সপো এবং শীর্ষ সম্মেলন আন্তঃযোগাযোগ, উত্পাদন ক্ষমতা, শুল্ক, স্বাস্থ্য ও অর্থসহ মোট ৪০টির বেশি ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের ফোরাম আয়োজন করছে। চীন-আসিয়ান তথ্য পোর্ট, চীন-আসিয়ান মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্স (সিএএমটিএ)-সহ কিছু সংখ্যক প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যকর ও সহজতর করেছে। এছাড়া চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের প্রতিষ্ঠা, চীন ও আসিয়ান একে অপরের প্রথম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হওয়া এবং আরসিইপি কার্যকর করাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সফলতা স্বচক্ষে দেখেছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী লি ফেই বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষ নাগাদ চীন ও আসিয়ানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বিমুখী বিনিয়োগ ৩৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছিল। দু’পক্ষ পারস্পরিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ইতিবাচক সহযোগিতামূলক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। 

২০১৪ সালে সিএন এক্সপো বিশেষভাবে আমন্ত্রিত অংশীদার ব্যবস্থা স্থাপন করে। ২০১৭ সালে সিএন এক্সপোয় “এক অঞ্চল এক পথ” প্রদর্শনী অঞ্চল স্থাপিত হয়। ২০২২ সালে সিএন এক্সপোয় আসিয়ান এবং আরসিইপি বুটিক প্রদর্শনী অঞ্চল স্থাপন করা হয়। প্রথম দিকে মালামাল বাণিজ্য প্রধান হিসেবে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক রূপ “কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া” পর্যন্ত, বিগ ডাটা, নতুন জ্বালানী, ই-বাণিজ্য, পরিষেবা বাণিজ্য, শিল্প সংযুক্তি ইত্যাদি বহু বছরে সিএন এক্সপো চীন এবং আসিয়ানের মধ্যে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার জন্য অব্যাহতভাবে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

সিএন এক্সপোর মাধ্যমে কিছু সংখ্যক অভ্যন্তরীণ বাজারে দাঁড়ানো, আসিয়ানমুখী, আরসিইপি’র অন্যান্য সদস্য দেশে সম্প্রসারিত প্রকল্প দ্রুততার সাথে কার্যকর হয়। চীন-আসিয়ান তথ্য পোর্ট যথাক্রমে লাওস, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে বিদেশী ক্লাউড হিসাব কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। চীন-আসিয়ান আর্থিক সিটিতে প্রবেশ করা আর্থিক সংস্থার সংখ্যা ৩ শতাধিক। চীন-আসিয়ান আর্থ-বাণিজ্যিক কেন্দ্র ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারসহ ৯টি দেশের ৪০টি সংস্থায় প্রবেশ করেছে।

সিএন এক্সপোর নেতৃত্বে, কুয়াংসি অনেক দেশের চীনের সঙ্গে সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ পথে পরিণত হয়েছে। আরসিইপি কার্যকর হবার পর আরও বেশি আসিয়ান প্রতিষ্ঠান দ্বিপাক্ষিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে মাল বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক উত্পাদন ক্ষমতা এবং আন্তঃসীমান্ত পার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা চালাতে আগ্রহী হয়েছে। 

চলতি বছর চীন-আসিয়ান সার্বিক কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কের সূচনা বছর। পাশাপাশি, আরসিইপি কার্যকর হবার প্রথম বছর। চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের ৩.০ সংস্করণ শুরু হতে যাচ্ছে। একাধিক ইতিবাচক উপাদান আঞ্চলিক সহযোগিতা অধিকতরভাবে গভীর ও বাস্তব হওয়ায় সহায়তা দিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে উন্নয়নের ফলাফল ভাগাভাগি করবে।

মালয়েশিয়া এবারের মেলার থিম দেশ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলছেন, চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য চুক্তি হলো চীন-আসিয়ান বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভিত্তি এবং দু’পক্ষের বাণিজ্য ত্বরান্বিতকরণে ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফলে প্রতিষ্ঠান এবং এতদঞ্চল লাভবান হবে। আসিয়ান এবং চীন অব্যাহতভাবে চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে আঞ্চলিক অর্থনীতির একীকরণে সাহায্য দেবে।

অনেক প্রতিষ্ঠান গভীরভাবে নতুন সুযোগ ও নতুন চালিকাশক্তি খননের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবারের মেলায় চীনের এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোং, লিমিটেড (সিইইসি)-এর আন্তর্জাতিক প্রকল্প দেড় হাজার কোটি ইউয়ানের চুক্তি স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা করেছে। বিষয়গুলি বায়ু ও আলো নতুন শক্তি এবং সঞ্চিত শক্তিসহ বেশ কয়েকটি শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রকল্পগুলি মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে বিতরণ করা হয়। 

সিইইসি’র প্রেসিডেন্ট সোং হাইলিয়াং বলেন, গত প্রায় ৩ বছর কোম্পানিটি আসিয়ান দেশে নতুন করে দেড় হাজার কোটি ইউয়ানের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বিনিয়োগের মোট পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৩শ’ কোটি ইউয়ান। নতুন সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সার্বিকভাবে সবুজ নিম্ন-কার্বন অর্থনীতি, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং শেয়ারিং অর্থনীতি—তিনটি অর্থনৈতিক আকারে যোগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের “বাইরে যাওয়া” থেকে “যোগ দেয়া” পর্যন্ত ত্বরান্বিত করেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে চীন-আসিয়ান মোট বাণিজ্যিক পরিমাণ ছিল ৪.০৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। চীন আরসিইপি’র অন্য ১৪টি সদস্য দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানির মোট পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.৫ শতাংশ বেশি। খুব শীঘ্রই শুরু হওয়া চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের ৩.০ সংস্করণ আরসিইপি’র সঙ্গে পারস্পরিক ত্বরান্বিত করে, শক্তিশালী-ভাবে আঞ্চলিক অর্থনীতির দ্রুত পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করবে। (সূত্র: সিএমজি)