ন্যাভিগেশন মেনু

চুয়াডাঙ্গার এক পরিবারের ১৩ সদস্যের বিরুদ্ধে ৯৫টি মাদক মামলা


চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার আকন্দবাড়িয়া গ্রামের একটি আলোচিত পরিবারের ১৩ জন সদস্য কোনো না কোনোভাবে মাদকের সাথে জড়িত। আর মাদক কারবার করতে গিয়ে ওই পরিবারের ১৩ জন সদস্যের নামে রয়েছে ৯৫টি মাদক মামলা। 

মাদককে নেশা আর পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে এদের মধ্যে কেউ কেউ নানা কৌশলে এখনও চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মাদক কারবার। আবার কেউ প্রশাসনের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযান অব্যাহত থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ওই পরিবারের কোনো কোনো সদস্য চালিয়ে যাচ্ছে মাদক কারবার।

এলাকাবাসী জানায়, দেশ বিভাগের পর ভারত থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে এসে আশ্রয় নেয় ইউছুপ মোল্লা। সেখান থেকে সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইউছুপ পরিবার পরিজন নিয়ে চলে আসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের আকন্দবাড়িয়া গ্রামে। ইউছুপ মোল্লা মৃত্যুর আগে ৫ মেয়ে আর ১ ছেলে রেখে গেছেন। আশির দশকের দিকে ইউছুপের ছেলে-মেয়েরা কেউ অভাবে আবার কেউ স্বভাবে মাদক কারবারের সাথে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ওই পরিবারের ১৩ জন সদস্যের নামে রয়েছে ৯৫টি মাদক মামলা।

‌জানা গেছে, ইউছুপ মোল্লার ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে আছে রহিমা, হামিদা, রাশিদা, হিবলি, ছোট বুড়ি ও একমাত্র ছেলে কাউছার। রহিমার আছে ৪ ছেলে কামরুল, রনি, জনি ও সজিব। দুই মেয়ে জোস্না ও আলপনা। হামিদার দুই ছেলে হামিদ ও মোল্লা মেয়ে শিপ্রা। রশিদার দুই ছেলে জুলু ও জেলার।  ছেলে জুলু ফেনসিডিল আনতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফর গুলিতে নিহত হয়। ছোট বুড়ির এক ছেলে ও ২ মেয়ে। ইয়াছিন, তানজিলা ও

তারিনা। এ ছাড়াও আকলী, মুনিয়া, লালবানু এই পরিবারের সদস্য। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদের মধ্যে রহিমার নামে ৭টি, হামিদার নামে ১০টি, রশিদার নামে ২২টি, ছোটবুড়ির নামে ১০টি, কাউছারের নামে ১টি, কামরুলের নামে ৯টি, রনির নামে ৬টি, জনির নামে ১২টি, হামিদার নামে ১টি, জুলুর নামে ২টি, জুলিয়ার নামে ১৩টি, ইয়াছিন আলীর নামে ১টি ও আকলীর নামে ৩টি মাদক মামলা রয়েছে। 

এ ছাড়াও পরিবার সংশ্লিষ্ট আব্দুল কাদেরের ছেলে শাজাহানের নামে ৪টি, ছানুর ছেলে ওয়াশিমের নামে ৭টি ও দুখুর ছেলে ইস্রাফিলের নামে ২টি মাদকের মামলা রয়েছে। 

মাথায় এতো মাদকের মামলা থাকা স্বত্বেও এদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও বিভিন্ন কৌশলে ফেনসিডিল ও ইয়াবার কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের কয়েকজন জানিয়েছে, এ পরিবারের মাদক কারবারিরদের মধ্যে ২জন মারা গেছে, কয়েকজন জেলে আছে। জেলে থাকলেও সেখান থেকে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। এই একটি পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকের কারবার করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। এরা প্রশাসন কিংবা মামলার ভয় পায় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে এদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। ভয় এবং আত্মসম্মানের কারণে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। কারণ এদের সাথে মাদকাসক্ত অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়িত।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ফেনসিডিলের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় এরা ইয়াবা বিক্রি করছে। ফেনসিডিলের চাইতে ইয়াবা শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় লুকিয়ে রাখা যায়। যা সহজে খদ্দেরদের হাতে পৌঁছে দিতে পারে। নারী পুলিশ ছাড়া অভিযান চালোনা এবং গ্রেপ্তার করা পুরুষ পুলিশ সদস্যদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এই পরিবারের নারী মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে প্রশাসনের অনেক সদস্যকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তাই প্রশাসনের কাছে তথ্য থাকলেও সহসা তাদের সাথে ঝামেলায় জড়াতে চায় না।

আকন্দবাড়িয়া গ্রাম মাদকের অভারণ্য বলেই এখন সকলের কাছে পরিচিত। মৃত ইউছুপের পরিবারকে মাদকের রমরমা ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব হলে আকন্দবাড়িয়া গ্রামে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে সচেতনমহল মনে করছে।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শরিয়ত উল্লাহ বলেন, এ পরিবারের সদস্যরা ভয়ানক। তারপরও আমরা থেমে নেই। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলেই অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে। ইয়াবা আকারে ছোট হওয়ায় ওই পরিবারের নারীরা শরীরের বিভিন্ন জায়গায়; এমন কি চুলের খোপার মধ্যেও রেখে দেয়। মোবাইলে যোগাযোগ করে খদ্দের আসামাত্রই সরবরাহ করা সহজ হয়। 

দর্শনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান কাজল বলেন, মাদকের সাথে কোনো আপস নয়। মাদককারবারিরা জাতির শত্রু। তাই শত্রু দমন করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। দর্শনা থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকায় অনেক মাদককারবারি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। আবার অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আছে। দর্শনা থানা এলাকা মাদকমুক্ত করতে প্রয়োজন সকলের সহযোগিতা।

এসকে/এডিবি/