ন্যাভিগেশন মেনু

চুয়াডাঙ্গায় ৮০০ হেক্টর জমিতে 'অটো' জাতের শিম চাষ


নজরুল ইসলাম: করোনায় যখন থমকে গেছে জীবযাত্রা, তখন চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন মাঠে অসময়ে আগাম 'অটো' জাতের ৮০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ করেছে চাষীরা। ফলন আশানুরূপ না হলেও বাজার দরে খুশি শিমচাষীরা। এরইমধ্যে বেচাবিক্রি করে অনেক চাষী চাষের খরচ তুলে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হয়েছেন। ফলে বদলে গেছে গ্রামীন অর্থনীতির চিত্র। পরিচর্যা আর বেচাবিক্রির মধ্যে ৬ মাস কেটে যাবে শিমচাষীদের।

চাষীরা মনে করছেন, অনুকুল পরিবেশ থাকলে আর্থিকভাবে প্রত্যাশার চাইতেও বেশি লাভবান হবেন।

চুয়াডাঙ্গায় মোট জমির পরিমান ৯৭ হাজার ৫৮২ হেক্টর। এরমধ্যে আবাদযোগ্য জমি ৭ হাজার হেক্টর। জেলাতে ভুট্টা আবাদের পর-পরই সবজি আবাদ বেশি হয়ে থাকে। আবহাওয়া তুলনামূলক অনুকুল এবং উচু সমতল জমি হওয়ায় জমিগুলো সবজি চাষের জন্য উপযোগী। তাই প্রতিবছর কোনও না কোনও প্রকার আগাম সবজির চাষ করে থাকেন জেলার কৃষকরা।

কৃষিসম্প্রাসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অসময়ে ৮০০ হেক্টর জমিতে আগাম অটো জাতের শিম চাষ হয়েছে। এরমধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯৫ হেক্টর, দামুড়হুদায় ৩৭২ হেক্টর, জীবননগরে ১৪৫ হেক্টর এবং সদর উপজেলায় ২৩৮ হেক্টর।

চলতি বছর বৃষ্টিপাত থেমে থেমে হওয়ায় অসময়ে শিমের আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। ফলে অনুকুল আবহাওয়ায় ফলন বেশি না হলেও বাজার দর ভালো থাকায় শিমচাষীরা বেশ খুশি। অন্যদিকে স্বল্প সময়ে সবজি বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পারায় এই শিম চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রামের মাঠে দিকে তাকালে দেখা যায় আবাদযোগ্য জমিজুড়ে শিম আর শিমের মাচা। 

মাটি থেকে সর্বোচ্চ ৪-৫ ফুট উচু বাঁশের মাচা তৈরি করে আবাদ করা হয়েছে উচ্চ ফলনশীল অটো জাতের শিম। শিম চাষ এলাকাটিকে সাজিয়েছে সবুজের আবরণে। সকাল-বিকেল চাষীরা তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে শিমের পরিচর্যায় ব্যাস্ত থাকেন। কারণ সকাল-বিকেল শিমের জমি পরিচর্যার উপযুক্ত সময়।

দোস্ত গ্রামের শিমচাষী ইউপি সদস্য আবু সালেহ, আবু হানিফ জানান, 'কয়েক বছর ধরে শিম চাষ করে আসছি। বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি। এ আবহাওয়ায় শিমের ফলন বেশি না হলেও বাজার দর ১১৫ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে বেচাবিক্রি হচ্ছে। অনেক চাষী আগ্রহী হয়ে শিম চাষ করেছে। ৬ মাস অবদি শিমচাষের মধ্যে সময় কাটবে। প্রতিবছর শিম বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করছে চাষীরা। অনেকেই শিম চাষেই জীবন-জীবিকার অবলম্বন হিসেবে বেঁচে নিয়েছেন।'

তারা আরও জানান, 'এভাবে বাজার দর থাকলে বিঘাপ্রতি লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবে চাষীরা। এরইমধ্যে কয়েক দফা বেচাবিক্রি করে ফেলেছি। শেষ পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকলে ৩ বিঘা জমিতে কমপক্ষে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার শিম বিক্রি করার প্রত্যাশা করছি। আমাদের মতো যারা এ সময়ে শিমচাষ করেছে তারা প্রত্যেকেই লাভবান হবে। লকডাউন উঠে যাওয়ায় বাজারে সব সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে।'

শিমচাষী মনু মিয়া, বোরহান, আমিরুল, মালেক মেম্বর, ফারুক, চান্দু, কাশেম, মালেক বিশ্বাস, মনির হোসেনসহ বেশ কিছু কৃষক শিম চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন। কৃষকরা জানান, তারা তাদের এ চাষ করতে হাতে কলমে কোনও প্রশিক্ষণ পাননি। নিজ উদ্যোগেই চাষ করছেন। বর্তমানে শিম চাষের নানা উপকরণের দাম বৃদ্দি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেশি।

তারা বলেন, বীজ লাগানোর পর থেকে এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করতে বীজ, সার, বাঁশ, তার, শ্রমিক, সেচ ধরে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। শিমের গাছ মাচায় উঠে গেলে ফুল এবং ফল ধরার সময় পোকা দমন এবং পচন রোধে প্রায় প্রতিদিন ওষুধ স্প্রে করতে হয়। ৬০ দিনের মাথায় শিম ধরা শুরু হয়। এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত শিম বাজারজাত করতে অন্য কোন স্থানে যেতে হয়না। ঢাকা থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে তাদের কাছ থেকে শিম কিনে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও কোনও কোনও কৃষক শিম নিজে তুলে পার্শ্ববর্তী বাজারে বিক্রি করে থাকে।' 

কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এলাকার জমি সবজি চাষের জন্য খুবই উপোযোগী। ভুট্টার পরপরই চাষীরা শিমসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে থাকে। সরকারিভাবে প্রদর্শনী প্লটের চাষী ছাড়া ঢালাওভাবে শিমচাষীদের পরামর্শ দেওয়া ছাড়া অন্যকোন সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতার দ্বার খোলা রয়েছে। আর অটো জাতের শিম এটা মানুষের দেওয়া নাম।

এনআই/এডিবি/