ন্যাভিগেশন মেনু

জঙ্গিবাদ দমনে সঠিক কৌশল অনুপস্থিত: শাহরিয়ার কবির


বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স-এর বিষয়টি এখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। তবে জঙ্গিবাদ দমনে সত্যিকার অর্থে সুদূর প্রসারি কোন পরিকল্পনা এখনও নেয়া হয়নি। তাই জঙ্গি তৎপরতা স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে না’বলে -এ অভিমত পোষণ করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রধান শাহরিয়ার কবির। নিউইয়র্কে ৮ জুন শনিবার ‘দক্ষিণ এশিয়ায় চরমপন্থার উত্থান এবং জঙ্গিবাদ দমনের কৌশল’ শীর্ষক এক আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে সাংবাদিক-চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মানবাধিকার সংগঠক শাহরিয়ার কবির আরো বলেন, ‘জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রেসক্রিপশন তথা ব্যবস্থাপত্র তৈরী করতে হবে। আর এ প্রেসক্রিপশনে থাকবে বহুমাত্রিকতা। থাকবে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতিসহ সর্বস্তরে জঙ্গিবাদ নির্মূলের কর্মকান্ড। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও তা কার্যকর করতে হবে।’

২০০৪ সালে টাটরিস্তান পরিভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে শাহরিয়ার বলেন, ‘দেশটি দাবি করে যে তারাই বিশ্বে একমাত্র মুসলিম প্রধান দেশ, যেখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি নিয়ে কোন প্রশ্নের অবতারণা করা হয় না।

খ্রিস্টানের সাথে মুসলমানের, ইহুদির সাথে মুসলিম, মুসলমানের সাথে হিন্দুর বিয়ে হচ্ছে। এমন ইন্টারফেউথ ম্যারিজের কথা আমেরিকাতেও কেউ কল্পনা করতে পারে না। সেখানে খ্রিস্টানের সংখ্যা ৪০% এবং মুসলমান ৪৮%। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং ইহুদিসহ অন্য ধর্মের লোকজনও আছেন। এমনি অবস্থায় ইন্টারথেইথ ম্যারিজের হার হচ্ছে ৩৩%।’ কয়েক বছর আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে থিঙ্কট্যাংক ‘আটলান্টিক কাউন্সিল’র এক সেমিনার শেষে ঢাকায় দায়িত্ব পালনকারি মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম শাহরিয়ার কবিরের সাথে আলাপকালে দাবি করেন যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র গণতান্ত্রিক হচ্ছে জামায়াতে ইসলামি। কারণ, আওয়ামী লীগ আর বিএনপিতে নেতা নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরন করা হয় না। এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাকে জানাই যে, জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের কাছে জেনে আপনি একটি ফতোয়া দিলেন, যা আদৌ সত্য নয়। আপনি ঢাকায় গিয়ে আমাদের সাথে তো এ নিয়ে কথা বলেননি। তাহলে জানতে সক্ষম হতেন যে, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে নারী ও পুরুষ সমান নয়। মজলিসে সুরাতে কোন নারী নির্বাচিত হতে পারবে না। কলেমা শাহাদৎ-কে যারা বিশ্বাস করে না, তারা জামায়াতের সদস্য হতে পারে না-এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র? অর্থাৎ অমুসলিমরা জামায়াতের সদস্য হতে পারে না। যে দল ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভাজনের রেখা টানে, সে দল কী করে গণতান্ত্রিক হয়?

সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধানে রয়েছে যে, রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি হলেন জনগণ। অপরদিকে জামাতীরা বলেছে যে, তারা আল্লাহ্্ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে। এজন্যে তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। জামায়াতে ইসলামের গঠনতন্ত্র হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।’ শাহরিয়ার কবির যুক্তি-তর্কের অবতারণা করে উল্লেখ করেন যে, জঙ্গিবাদ কখনোই শক্তি প্রয়োগ করে দমন করা যাবে না। মূলত: আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। শক্তি প্রয়োগ করতে হয় সাময়িকভাবে। হলি আর্টিজানে যখন হামলা হয়, তারা যখন নিরীহ নাগরিকদের জিম্মি করেছিল, সে সময় শক্তি প্রয়োগের বিকল্প ছিল না। কিন্তু শক্তিরও একটি সীমা আছে। তবে সন্ত্রাসকে চিরতরে মোকাবেলার জন্যে দরকার হচ্ছে তাত্ত্বিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একটি ধর্ম, মানবতার সামগ্রিক কল্যাণের একটি আদর্শকে জামাতীরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে মতলবি রাজনীতির স্বার্থে। জঙ্গিবাদে বিশ্বাসীরা যে ইসলাম ধর্মের প্রচার করছে, তার বিরুদ্ধে সত্যিকারের ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে হবে। ইসলাম যে কখনোই নির্বিচারে মানুষ হত্যাকে সমর্থন দেয় না-তা সর্বসাধারণকে অবহিত করতে হবে। তাহলেই জঙ্গিবাদ দমনে দৃশমান সাফল্য আসবে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের সভাপতি ফাহিম রেজা নূরের সভাপতিত্বে জুইশ সেন্টারের এই আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি স্বীকৃতি বড়ুয়া।

মঞ্চে আরো উপবেশন করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা কবির আনোয়ার, লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস ও কৌশিক আহমেদ।

বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরো ছিলেন জঙ্গিবাদ বিরোধী কর্মকান্ডে সোচ্চার শিতাংশু গুহ, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আনোয়ার বাবলু, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, ঐক্য পরিষদের নবেন্দু দত্ত এবং টমাস দুলু রায়, ডেমক্র্যাটিক পার্টির নেতা মোর্শেদ আলম, জাতিসংঘ উইমেন গিল্টের প্রেসিডেন্ট রানু ফেরদৌস, ড. সব্যসাচি দস্তিদার, ডা. মাসুদুল হাসান, লেখক বেলাল বেগ, খোরশেদুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সামাদ আজাদ প্রমুখ । এ সময় ইসলাম ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের উত্থান এবং বিভিন্ন দেশে জঙ্গি নির্মূলের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য ঘটনাবলির আলোকে নির্মিত দুটি ডক্যুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। মিথাল্্স ড্রিম এবং ভয়েস অব কনসাইন্স নামক দুটি ডক্যুমেন্টারি নির্মাণ করেছেন সাংবাদিক-লেখক শাহরিয়ার কবির।

সূত্র: এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক

এসএস