১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপল্লক্ষ্যে তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকালে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শায়ান, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পী, সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডুসহ কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন ।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন।
যুদ্ধ চলাকালিন দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। পরে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে লন্ডন ও দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু। জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ভোরে। এদিন বঙ্গবন্ধু সকাল সাড়ে ৬টায় লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছে, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলেন। পরে ৯ জানুয়ারি ব্রিটেন বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করে পরের দিন ১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি দিল্লীতে নামেন । সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন এবং সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছালে অপেক্ষমান বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান।
রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে বিকাল পাঁচটায় তিনি ভাষণ দেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা দু-চোখে স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আপ্লূত হয়ে পরেন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হল বাংলার আকাশ-বাতাস।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৫ দিন পরে বিশ্ব জনমতের চাপে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। এরপর তিনি বিমানে করে লন্ডন যান। সেখান থেকে ৯ জানুয়ারি রাত ৮টায় ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানে লন্ডনে থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। দিল্লিতে ১০ জানুয়ারি সকালে যাত্রাবিরতি দিয়ে এক জনসভায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ও ভারতীয় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ফিরে আসেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।