ন্যাভিগেশন মেনু

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীর শীর্ষ সম্মেলনে সি চিন পিংয়ের ভাষণ


ছাই ইয়ু মুক্তা

চিনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীর অনলাইন শীর্ষক সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেন, মহামারি পরবর্তী পর্যায়ে জাতিসংঘের উচিত উচ্চতর ন্যায়বিচার বজায় রাখা, আইনের শাসন কার্যকর করা, সহযোগিতাকে উত্সাহিত করা এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে মনোনিবেশ করা। চিন বরাবরের মতোই বহুপক্ষবাদ মেনে চলবে, ইতিবাচকভাবে বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার ও প্রতিষ্ঠায় অংশ নেবে, এবং মানবজাতির অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিট গড়ে তুলতে কাজ করে যাবে।

সি চিন পিং বলেন, ৭৫ বছর আগে বিশ্বের জনগণ রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর বিশ্বের ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে দুর্দান্ত বিজয় অর্জন করে। এটি ছিল ন্যায়বিচারের জয় ও জনগণের বিজয়। গত শতাব্দীর প্রথমার্ধে মানবজাতি দু’বার বিশ্বযুদ্ধের বিপর্যয় দেখেছে। এরপর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের নতুন ইতিহাস শুরু হয়।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বর্তমান বিশ্ব দুর্দান্ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারি হলো গোটা বিশ্বের জন্য এক ধরণের কঠিন চ্যালেঞ্জ। মাবজাতি পারস্পরিক যোগাযোগ ও সংযুক্তির নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন দেশের সম্পর্ক এবং স্বার্থ এখন পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। বিশ্বব্যাপী হুমকি ও চ্যালেঞ্জ গোটা বিশ্বের একসাথে মোকাবিলা করা উচিত। নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে সকলের উচিত জাতিসংঘের ভূমিকা পালন নিশ্চিত করা।

সি চিন পিং আরও বলেন, বড় বা ছোট দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সাম্যতা হল সময়ের অগ্রগতি এবং জাতিসংঘের সংশবিধানের প্রাথমিক নীতিমালার অংশ। সকল দেশকে যৌথভাবে সাধারণ নিরাপত্তা সুরক্ষা করতে, উন্নয়নের সাফল্য ভাগ করতে, এবং বিশ্বের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব ও কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে হবে।

আইনগত প্রশাসন কার্যকর করতে হবে। জাতিসংঘের সংবিধান ও নীতি হলো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মোকাবিলার মৌলিক নীতি এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীল শৃঙ্খলার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। বিভিন্ন দেশের সম্পর্ক ও স্বার্থ শুধুমাত্র নীতি ও নিয়মের আওতায় হতে হবে। বড় দেশগুলোর উচিত আন্তর্জাতিক আইনগত প্রশাসনের উকিল ও রক্ষক হিসাবে নেতৃত্ব দেওয়া। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা হলো জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও জাতিসংঘ সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতার ওপর নির্ভর করে, শুধু নিজস্ব আদর্শকে আঁকড়ে ধরে জিরোসাম গেইম খেলে সমস্যার সমাধান করা যায় না বা মানবজাতির মুখোমুখি সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায় না।

সি বলেন, বহুপক্ষবাদ বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতিসংঘের দায়িত্ব হলো সমস্যা সমাধান করা। সুরক্ষা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার প্রচারের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে, ‘টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা, ২০৩০’ বাস্তবায়নের সুযোগ কাজে লাগিয়ে, জনস্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন অপ্রচলিত সুরক্ষা চ্যালেঞ্জগুলির প্রতিক্রিয়ার জন্য একটি অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করতে হবে। বিশ্বব্যাপী ম্যাক্রো কাঠামোয় উন্নয়নের বিষয়গুলো বিশিষ্ট অবস্থানে রাখতে হবে। বেঁচে থাকার ও উন্নয়নের অধিকারের প্রচার ও সুরক্ষার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

চিনা প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, চিন হলো জাতিসংঘের সংবিধানে স্বাক্ষরকারী প্রথম রাষ্ট্র। চিন হলো জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাতা দেশগুলোর মধ্যে একটি ও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র উন্নয়নশীল দেশ। চিন বরাবরই বহুপক্ষবাদ বজায় রাখবে, ইতিবাচকভাবে বিশ্বের প্রশাসন ব্যবস্থার সংস্কার ও প্রতিষ্ঠায় অংশ নেবে, দৃঢ়ভাবে জাতিসংঘকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সুরক্ষা করবে, দৃঢ়ভাবে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা সুরক্ষার কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে।

ছাই ইয়ু মুক্তা,চায়না মিডিয়া গ্রুপের একজন কর্মী