ন্যাভিগেশন মেনু

জীবননগরে আউশ ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি


জীবননগর প্রতিনিধি:

জীবননগরে পুরোদমে চলছে রোপা আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। ক’দিন আগেও যারা কর্মহীন ছিল তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাকডাকা ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা মাঠে ধান কাটছেন।

মাঠের পর মাঠ ধানের সোনালী শীষের দোলায় কৃষকের সমস্ত কষ্ট দুর হয়ে গেছে। সোনালী ধানের মতোই চিক চিক করছে কৃষকের মুখ। গৃহস্থের ঘরের আঙ্গিনা এখন ধানে ধানে ভরপুর।

আবহাওয়া এবং কৃষির পরিবেশ অনকূলে থাকায় উপজেলার কৃষকরা এবার আউশ ধানের আশাতীত ফলন পেয়েছেন। চলতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন ও কাঙ্খিত দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

উপজেলায় ২০-২৫ দিন আগে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০ ভাগ ধান কেটে মাড়াই শেষে কৃষক তা ঘরে তুলেছেন। অবশিষ্ট ধান আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে কাটা শেষ হবে। 

জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার উপসী রোপা আউশ জাতের ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৯ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ১১৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উপসী রোপা জাতের আউশ ৭ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমিতে এবং ১ হাজার ৮৬১ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল রোপা আউশ জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। আর ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৩৫ মেট্রিকটন। 

এলাকার ধান চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষেতে সেচ দেওয়া লাগেনি। চারা ক্রয়, রোপণ, সার, কীটনাশক, নিড়ানি, কাটা, মাড়াই ও পরিবহনসহ প্রতিবিঘায় খরচ হয়েছে ৯ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা। যেখানে ধান হবে বিঘাপ্রতি সর্বোচ্চ ১৭ থেকে ১৯ মণ। বাজারে এখনো ধানের দাম প্রতি মণ ৯৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। আর এ হিসাবে গড়ে বিঘাপ্রতি ১৮ মণ ধান ৯৫০ টাকা করে বিক্রি করলে কৃষক পাচ্ছেন ১৭ হাজার টাকা। সে অনুপাতে বর্তমান বাজার দরে ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ বাদে প্রতি বিঘায় কৃষকের লাভ হচ্ছে ৭ হাজার টাকা।

উপজেলার একতারপুর গ্রামের কৃষক জামাত আলীর নিজের জমি নেই। প্রতিবছর অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে যে ফসল পান তা দিয়েই মেটাতে হয় সারাবছরের খোরাক। এ বছর তিনি এক একর জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে তার জমিতে এ বছর বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ৫০ মণ। সব খরচ বাদে তার লাভ হবে ২০ হাজার টাকা। 

জীবননগর শহরে ধান বিক্রি করতে আসা দেহাটি গ্রামের বর্গা চাষী লিটন গাজী জানান, ধানের বর্তমান বাজার বেশ ভালো। বাজারে ধানের ন্যায্যমূল্য মিলেছে। 

কেবল জামাত আলী ও লিটন গাজী নয়, জীবননগরের অধিকাংশ কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পেয়ে বেজায় খুশি। শেষ পর্যন্ত ধানের দাম এ রকম থাকলে চাষীরা লাভবান হবেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, বিঘাপ্রতি ধানের উৎপাদন খরচ চলতি মৌসুমে কম হয়েছে। এবার বৃষ্টি বেশী হওয়ায় জমিতে সেচে দিতে হয়নি। আবার কৃষকরা ধানের দাম মনপ্রতি ১ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারনে উপজেলায় প্রতি বছরই ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামীতে এ অঞ্চল খাদ্যভান্ডার এলাকা হিসাবে পরিগণিত হবে।

এস কে/এডিবি