ন্যাভিগেশন মেনু

জুস খাইয়ে পরে হত্যা: অজ্ঞানপার্টির ৭ সদস্য গ্রেপ্তার


কোমল পানীয় খাইয়ে অজ্ঞান করে সবকিছু হাতিয়ে কুমিল্লা দাউদকান্দি ব্রিজের কাছে ফেলে হত্যার দায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট অজ্ঞানপার্টি চক্রের মূলহোতা সাইফুল ইসলামসহ ছিনতাইকারী চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জে  র‌্যাব-১১-এর সদর দপ্তরে অধিনায়ক লে. কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে সোমবার (১৬ আগস্ট) দিবাগত রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলো - মোঃ সাইফুল ইসলাম (৩০), মোঃ শামীম (৪০), মোঃ রনি মিয়া  টনি (৩০), মোঃ আবদুল মান্নান শেখ (২২), মোঃ সুমন (৩৮), মোঃ মামুনুর রশিদ (৩৫) ও মোঃ হাবিবুল্লাহ (৫২)।

উল্লেখ্য, জাহিদুল ইসলাম কুমিল্লার নন্দিগ্রামে হরেক রকম মালামালের ব্যবসা করতেন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করতে গত ১৯ জুলাই নাটোরের সিংড়া যাওয়ার জন্য কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের কম টাকায় পরিবহনের আশ্বাস দেন ট্রাক চালক সাইফুল ইসলাম। ওই ট্রাকেই উঠেন জাহিদুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন আরও চার যাত্রী। ট্রাক চলাকালীন সময়ে ওই যাত্রীদেরকে ঘুমের ওষুধমিশ্রিত কোমল পানীয় খাওয়ানো হয়। তারা অজ্ঞান হওয়ার পর সব কিছু লুট করে কুমিল্লা দাউদকান্দি ব্রিজের একটু সামনে ফেলে দেয়া হয়।

এরমধ্যে একজন খেতে না চাওয়ায় তাকে বেধরক মারধোর করে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হয়। জাহিদুল ইসলামের কাছে টাকা কম থাকায় তাকে মারধর করে রূপগঞ্জের টেংরারটেক এলাকার একটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়।

পরে ২১ জুলাই ওই স্থান থেকে মরদেহ উদ্ধারের তিন দিন পর শনাক্ত করে তার পরিবার। গত ২৫ জুলাই জাহিদুলের ছেলে মোঃ কাজল হোসেন বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তানভীর পাশা জানান, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেপ্তারে র‌্যাব-১১-এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। র‌্যাব তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই ক্লুলেস ও লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়।

তিনি জানান, গত ১৮ জুলাই রাতে ওই অজ্ঞানপার্টি চক্রের মূলহোতা মোঃ সাইফুল ইসলাম ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থেকে এবং তার সহযোগী মোঃ রনি মিয়া গাইবান্ধা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় অবস্থানরত মোঃ শামীম, মোঃ আবদুল  মান্নান শেখ, মোঃ সুমন, মোঃ মামুনুর রশিদ ও মোঃ হাবিবুল্লাহসহ ৯ জনের একটি দল সাইফুলের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়। এই  চক্রের মূলহোতা সাইফুলের একজন অন্যতম সহযোগীসহ আরও ৫ জনের একটি দল নাটোর থেকে একটি ট্রাক নিয়ে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এসে সাইফুলের দলের সাথে মিলিত হয়। পরে ১৯ জুলাই ভোর রাতে নারায়ণগঞ্জ হয়ে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা ঘটনার দিন দুপুরে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় এসে পৌঁছালেও তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। সন্ধ্যার পর উক্ত অজ্ঞানপার্টি চক্রের মূলহোতা সাইফুল নিজে চালক সেজে ঈদে ঘরমুখো সাধারণ যাত্রীদেরকে কম টাকায় পরিবহনের আশ্বাস দিয়ে ভিকটিম জাহিদুল ইসলাম (৫০) ও তার সঙ্গী আলম (৫০), আরিফ (৩০), শরীফুল ইসলাম (৫০) ও  সবুজকে (৩০) কৌশলে তাদের ট্রাকে উঠিয়ে নাটোরের উদ্দেশে রওনা দেয়।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, অজ্ঞানপার্টি চক্রটি প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর যাবত দেশব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় কখনও এককভাবে আবার কখনও সংঘবদ্ধ হয়ে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মেশানোসহ বিভিন্নভাবে যাত্রীদের অজ্ঞান করে টাকা, মূল্যবান সামগ্রীসহ যাত্রীদের সর্বস্ব হাতিয়ে আসছিল।

এই চক্রের মূলহোতা মোঃ সাইফুল ইসলামসহ তার সহযোগী অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটনের দায়ে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসামীদের সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তানভীর পাশা।

এমএইচএস/সিবি/এডিবি/