ন্যাভিগেশন মেনু

টিকা ছাড়া মহামারী বিনাশ হয় না


ডা: বাসির 

বিশ্বে নানা সময়ে বহু মহামারীর আবির্ভাব ঘটেছে। কেড়ে নিয়েছে মানুষের প্রাণ। যেকোন মহামারী এভাবে চলতে চলতে একসময় এনডেমিক বা নিয়মিত ও স্থানীয় রোগে পরিনত হয়ে  তখন সহনীয় হয়ে যায়।

প্রশ্ন হলো কখন সেটা হবে?

নির্ভর করবে যখন রোগটির সংক্রমণ সংখ্যা অর্থাৎ নতুন রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করবে।

তবে তা কিভাবে কমবে?

ধরা যাক একটা ঘরে ১০০ মানুষ আছেন এবং এখন রোগীর সংখ্যা ২ জন। প্রতি তিন দিনে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। তাহলে ২-৪-৮-১৬-৩২ এভাবে বাড়বে। যেদিন ৩২ জন রোগী ধরা পড়বে সেদিন মোট রোগীর সংখ্যা হবে ৬২। পরদিন মোট লোক বাকি থাকবে ৩২। তখন রোগটি কমতে থাকবে। কারণ আর লোক নেই।

যারা লকডাউন করে তারা যদি ৪ জনের দিন করে তবে মাত্র ৪ জন দিয়েই রোগ শেষ। আর ৬২ জনের দিন করলে লকডাউন করা আর না করা সমান।

সমস্যা হলো, আমাদের দেশে কেবল লক্ষনযুক্তদের পরীক্ষা করা হয়। কোন র্যা ন্ডম স্ক্রিনিং নেই। না থাকবার ফলে অ্যাসিম্পটম্যাটিক কোন রোগীকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি না। যার জন্য নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না মোট জনসংখ্যার কতভাগ আসলে আক্রান্ত হয়েছে।

যেসব দেশে রেখাচিত্রে অসুখের সংখ্যা পিক বা চূড়া স্পর্শ করে নামতে শুরু করেছে, সেসব দেশে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে এটা কৃত্রিমভাবে আনা হয়েছে। 

যেমন চিনের উহানে, কোরিয়ায়, ভিয়েতনামে, শ্রীলংকায়, নেপালে।

এরা লকডাউন করেছে, টেস্ট করেছে, ট্রেস করেছে। রোগীদের দ্রুত সমাজ থেকে আলাদা করেছে। যার ফলে সংক্রমনকে কৃত্রিম ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ঠেকিয়েছে।

তাদের মতো করে আমাদের পিক আসবে না। কারণ আমরা যথাযথ লকডাউন করিনি। আমাদের টেস্টিং ও ট্রেসিং দুর্বল।

ফলে যারা বলছেন আমরা খুব তাড়াতাড়ি পিকে পৌঁছাবো তারা ঠিক বলছেন না। আমাদের পিক আসবে স্বাভাবিক গতিতে ফলে বহু লোক আক্রান্ত হবে, অনেকের দুঃখজনক পরিনতি হবে। আমাদের জনসংখ্যা অনেক বেশী হওয়ায় ২-৪-৮ করে সবচেয়ে দ্রুত অর্থাৎ ৩ দিনের সাইকেলে চললেও বহুদিন লেগে যাবে।

কেবল দিনে ১০০০০ লোক আক্রান্ত হলেই একমাস পরে আমরা কোথাও কোন হাসপাতালে সাধারন বিছানাতেও রোগী ভর্তি করতে পারবো না। জায়গা থাকবে না।

মানুষ বেশী হবার কারনে এর মধ্যে জীবানুটির একাধিক মিউটেশন হবার সম্ভাবনাও আছে। আমাদের কপাল খারাপ হলে এটা আরো ভিরুলেন্টও হয়ে উঠতে পারে আবার এর ক্ষমতা কমতেও পারে। কমলে ভালো। যদি বাড়ে? তখন পুরোটাই কপাল এর লিখন হয়ে দাড়াবে।

তাই আমাদের গ্রাফের চূড়া অনেক উঁচুতে হবার সম্ভাবনা। শুধু তাই না এটা আসবে দেরীতে , আর গ্রাফ যতো উঁচু ও যতো দেরী, এটা নামবেও দেরীতে। 

“জীবন না জীবিকা” বলে বলে আমরা ঠিকমতো লকডাউন না করাতে ,  আমাদের অনেক দিন নষ্ট হয়েছে ও রোগটা এখন হবেও বেশী। 

করোনার এপিসেন্টার ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তি এলাকাকে ফুল লকডাউন করলে ও সারা দেশে প্রচুর পরীক্ষা করলে এখনও রোগের সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। তা না হলে দুসপ্তাহের মধ্যে এটা আরো ভয়ংকর হয়ে উঠবে। তখন আর কিছু করার সময় পার হয়ে যেতেও পারে।

আর এভাবে চললে ও অফিস আদালত সব খুলে দিলে,  আগামী দু থেকে তিন মাস অনেক বেশী বিপদজনক হয়ে উঠবে। তখন সেপ্টেম্বরের আগে করোনা তার উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে মনে হয় না। অন্তত ৭৫ থেকে ৯০ দিন লাগবেই।

যারা বলছেন আমরা পিকে (Peak) পৌঁছে গেছি তারা বোকার স্বর্গে আছেন। এটা কেবল আইসবার্গের peak।  

প্রিয়জনদের হারানোর বেদনার মধ্য দিয়ে, মুরুব্বী ও স্নেহময় মানুষদের জীবনের বিনিময়ে , জীবনকে বাদ দিয়ে জীবিকার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে নিজের অজান্তেই অনেকে হবো প্রিয়জনদের হত্যাকারী আর অনেকে আত্মহত্যার মতোই নিজেকে বিপদে ফেলবো।

সাবধানতার তাই আর কোন বিকল্প নাই।

কারণ ছাড়া বাসা থেকে বের হবেন না।

মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন। 

দয়া করে নিজে সংক্রমিত না হতে চেষ্টা করুন ও অন্যকে সংক্রমণ না দিতে চেষ্টা করুন।

লেখক: নাক,কান,গলা বিশেষজ্ঞ