ন্যাভিগেশন মেনু

ধানমন্ডি থেকে ওয়াটার ট্যাক্সিতে গুলশানে যেতে পারবেন নগরবাসী


ধানমন্ডি থেকে গুলশান-বারিধারায় রাজধানীর যানজট ঠেলে পৌঁছতে ঘণ্টা-দুয়েকের নিচে বা কখনো ৫ ঘণ্টাও লেগে যায়। তবে এবার যানজটের বিড়ম্বনা এড়াতে ধানমন্ডি লেক থেকে নৌকা বা ওয়াটার ট্যাক্সিতে হাতিরঝিল হয়ে গুলশান-বারিধারায় যেতে পারবেন নগরবাসী।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) পান্থপথের বিদ্যমান রাস্তায় দখল হওয়া খালটি পুনরুদ্ধার করে ধানমন্ডি লেক ও হাতিরঝিলকে যুক্ত করে তৈরি হবে দীর্ঘ এ নৌরুট।

জানা গেছে, ১৯৮০-এর দশকেও এই পান্থপথ সড়কটি ছিল খাল। এই খালটিসহ আরও অন্তত ১৫ কিলোমিটার খাল বিদ্যমান ছিল। যেখানে বর্তমানে বক্স কালভার্টের মাধ্যমে সড়ক করে দেওয়া হয়েছে। ফলে খালগুলো মূল অস্তিত্ব হারিয়েছে।

রাজধানী ঢাকার খালগুলোর মালিক মূলত ঢাকা জেলা প্রশাসন। কিন্তু আশির দশকে খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায় ঢাকা ওয়াসা। ২০০১ সালের দিকে অধিকাংশ খাল ভরাট করে তাতে বক্স কালভার্ট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় ওয়াসা। এতে জলাবদ্ধতা না কমে উল্টো বেড়ে যায়। প্রকল্পটি ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৬ সালের ১৫ জুন একনেকে ঢাকার খালগুলো থেকে বক্স কালভার্ট তুলে উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে। তখন খালের আগের রূপ ফিরিয়ে আনতে ঢাকা ওয়াসা, রাজউক ও সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ অবস্থায় পান্থপথ খালটি উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক। খালের মাধ্যমে হাতিরঝিলের সঙ্গে যুক্ত করা হবে ধানমন্ডি লেককে। খাল উদ্ধারে অর্থায়ন করবে রাজউক। হাতিরঝিল লেক ধানমন্ডি লেকের সঙ্গে যুক্ত হলে বারিধারা হতে ধানমন্ডি পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার অবিচ্ছিন্ন জলপথ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী  হাতিরঝিল লেক এবং ধানমন্ডি লেকের মধ্যে জলপথে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে পান্থপথ খাল পুনরুদ্ধার ও খাল এলাকার উন্নয়ন করবে সংস্থাটি।

বোর্ডসভায় রেজুলেশনে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর যথাযথ বসবাসযোগ্যতা নিশ্চিত করে জলাধারগুলো রক্ষার বিকল্প নেই। অথচ ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন অবৈধ দখলের কারণে এই শহরের খাল, পুকুর, বন্যা প্রবাহ এলাকাগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থার প্রতিকারে একদিকে যেমন শক্ত নজরদারি ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা জরুরি, অন্যদিকে জলাধারগুলো পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়াটাও সমভাবে জরুরি।

এতে আরও বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর দুইটি উল্লেখযোগ্য জলাধার হলো—হাতিরঝিল লেক এবং ধানমন্ডি লেক। পান্থপথ খাল পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হলে এই বৃহৎ জলাধার দুটির মধ্যে জলপথে সংযোগ স্থাপিত হবে। এতে একদিকে যেমন জলাধারের পরিমাণ বাড়বে অন্যদিকে ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, কাওরান বাজার প্রভৃতি এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। শহরে বন্যা প্রবণতা হ্রাস পাবে। ভূগর্ভস্থ পানি রিচার্জের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।  সর্বোপরি উক্ত এলাকার বসবাসযোগ্যতার উন্নতি হবে। খাল ও খাল সংলগ্ন এলাকায় সরল রৈখিক পার্ক, ওয়াকওয়ে, জগিং লেন, বাইসাইকেল লেন, বিশ্রামের স্থান প্রভৃতির সংস্থান করে উক্ত এলাকার নাগরিক সুবিধাদি সৃজন করা যাবে।

জানা যায়, খাল উদ্ধার ও খাল এলাকার উন্নয়নের নিমিত্তে উক্ত প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি, বিস্তারিত ভৌত জরিপ সম্পাদন এবং ডিটেইলড অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান এর ব্যয় প্রাক্কলন রাজউকের বোর্ড সভায় অনুমোদন করা হয়। ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদনের ব্যয়ভার সরকারি উৎস থেকে গ্রহণ করার নিমিত্তে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুশাসন চেয়ে পত্র প্রেরণ করে। পরবর্তীতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গত ১৫ জুলাই এক পত্রে প্রকল্পটি রাজউকের নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করে।

রাজউক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় ১৫ কিলোমিটারের মতো বক্স কালভার্ট রয়েছে। এর ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। এর মধ্যে রয়েছে রাসেল স্কয়ার থেকে গ্রিন রোড হয়ে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল, হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজা থেকে সোনারগাঁও হোটেল, পান্থপথ থেকে পরীবাগ, ইব্রাহিমপুর বাজার থেকে মিরপুর বাউনিয়া খাল, সেগুনবাগিচা থেকে আরামবাগ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, খিলগাঁও থেকে তিলপাপাড়া পর্যন্তসহ আরও কয়েকটি স্থানে স্বল্পদৈর্ঘ্যের বক্স কালভার্ট সড়ক রয়েছে। রাসেল স্কয়ার থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত পান্থপথের প্রায় পুরো রাস্তাই পড়েছে বক্স কালভার্টের ওপর।

এ বিষয়ে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘পান্থপথ খালটি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তার আগে বিষয়টির ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য বুয়েটকে দায়িত্ব দেব আমরা।’

তিনি বলেন, ‘ওই এলাকায় খাল নেই। এর জায়গায় বক্স কালভার্ট রয়েছে। ওপরে রাস্তাও আছে। আমরা চ্যানেলটা ওপেন করে দেব, যেটি ধানমন্ডির সঙ্গে হাতিরঝিল সংযুক্ত করবে।’

ড্যাপ পরিচালক আরও বলেন, ‘পান্থপথের ওই এলাকায় একটি রাস্তা রয়েছে। তাই এর আশপাশের ট্রাফিক ইমপ্যাক্ট কেমন হবে, কতটুকু খাল হলে ড্রেনেজ ক্যাপাসিটি ঠিক থাকবে। এ ছাড়া আশপাশে ভবন হয়ে গেছে। এ বাস্তবতায় খাল কতটুকু প্রশস্ত হওয়া উচিত। এসব সামগ্রিক বিষয় নিয়েই মূলত ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য বুয়েটকে প্রস্তাবটি পাঠাব।’

এছাড়া ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে রাজধানীর খাল উদ্ধার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রয়োজনে বক্স কালভার্টগুলোকেও উন্মুক্ত করে দিতে হবে। যান চলাচলের জন্য বক্স কালভার্টের ওপরে ছোট আকৃতির ওভারপাস তৈরি করা যেতে পারে।

ওআ/