ন্যাভিগেশন মেনু

তালেবান ও বিরোধীদের যুদ্ধ স্থায়ী হলে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধের হুঁশিয়ারি


আফগানিস্তানে তালেবান এবং বিরোধী বাহিনী শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) কাবুলের উত্তরে পঞ্জশির উপত্যকা নিয়ন্ত্রণের জন্য যুদ্ধ শুরু করেছে। আফগানিস্তানের শেষ প্রদেশটি তালেবান গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। শীর্ষ মার্কিন জেনারেল সতর্ক করে বলেছেন যে, ইসলামপন্থী তালেবানরা যদি ক্ষমতা সংহত করতে ব্যর্থ হয় তাহলে 'গৃহযুদ্ধ' হবে।

ইউএস জেনারেল মার্ক মিলি, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান, এই দুর্বল পরিস্থিতির ওপর জোর দিয়ে বলেন, 'আমার সামরিক অনুমান হলো, গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমি জানিনা তালেবান ক্ষমতা সংহত করতে এবং শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে কি-না।'

জার্মানির রামস্টেইন বিমানঘাঁটি থেকে ফক্স নিউজের সাথে কথা বলার সময় মিলি বলেন, যদি তারা তা না করতে পারে তাহলে 'আল কায়দার পুনর্গঠন বা আইএসআইএস বা অন্যান্য অসংখ্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বাড়বে'।

রয়টার্স জানায়, উভয়পক্ষই পঞ্জশির তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে দাবি করলেও চূড়ান্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।

তালেবান ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করার সময়ও এই পঞ্জশির উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। গত সপ্তাহে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর আফগানিস্তান থেকে চূড়ান্ত প্রত্যাহারের আগেই তালেবান গোষ্ঠী দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

তালেবান মুখপাত্র বিলাল করিমি বলেন, পঞ্জশির প্রদেশের খিনজ ও উনাবা জেলা দখল করা হয়েছে। ফলে তালেবান বাহিনী প্রদেশের সাতটি জেলার মধ্যে চারটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে।

ট্যুইটারে তিনি বলেন, 'মুজাহিদিন (তালেবান যোদ্ধারা) কেন্দ্রের (প্রদেশের) দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।'

কিন্তু আফগানিস্তানের ন্যাশনাল রেজিস্টেন্স ফ্রন্টের স্থানীয় নেতা আহমদ মাসউদের অনুগত গোষ্ঠী বলছে, তারা খাওয়াক পাসে 'হাজার হাজার সন্ত্রাসীদের' ঘিরে রেখেছে এবং তালেবানরা দশতে রেওয়াক এলাকায় যানবাহন ও সরঞ্জাম বাতিল অবস্থায় ফেলে রেখেছে।

ফ্রন্টের মুখপাত্র ফাহিম দাশতি যোগ করেন 'ভয়াবহ সংঘর্ষ' চলছে।

এক ফেসবুক পোস্টে মাসুদ জোর দিয়ে বলেছেন, পাঞ্জশির 'দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।' 'আমাদের সম্মানিত বোনদের' প্রশংসা করে তিনি বলেন, পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত শহরে নারীরা তাদের অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে যে আফগানরা ন্যায়বিচারের দাবি ছেড়ে দেয়নি এবং 'তারা কোনও হুমকির ভয় পায় না।'

ইতালির চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ইমার্জেন্সি জানিয়েছে, তালেবান বাহিনী শুক্রবার রাতে পাঞ্জশির উপত্যকায় আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে অনাবা গ্রামে পৌঁছেছে যেখানে এই সংস্থার চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে।

ইমার্জেন্সির জরুরি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'আমরা আনাবা সার্জিক্যাল সেন্টারে অল্পসংখ্যক আহত মানুষ পেয়েছি।' কয়েক দিনে এখান থেকে অনেক লোক পালিয়ে গেছে।

সঙ্কীর্ণ প্রবেশদ্বার ছাড়া পাহাড়ের প্রাচীরযুক্ত পাঞ্জশিরের ঘটনা নিশ্চিতকরণ দ্রুত সম্ভব নয়।

এদিকে, তালেবানদের পাঞ্জশির দখল করার খবর ছড়িয়ে পড়ায় শুক্রবার কাবুলে উৎসবমুখর গোলাগুলি শুরু হয়। সংবাদ সংস্থাগুলো জানায়, এতে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত এবং ৪১ জন আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, শনিবার পাকিস্তানের গুপ্তচর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদ কাবুলে পৌঁছেছেন। সেখানে তার অ্যাজেন্ডা কি তা স্পষ্ট নয়। তবে পাকিস্তানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন, শক্তিশালী ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) অ্যাজেন্সির প্রধান হামিদ ফয়েজ তালেবানকে আফগান সামরিক বাহিনী পুনর্গঠনে সহায়তা করতে পারেন।

ওয়াশিংটন পাকিস্তান এবং আইএসআইকে কাবুলে মার্কিন সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে ন্যাটো বাহিনীর দুই দশকের লড়াইয়ে তালেবানকে সমর্থন করার অভিযোগ করেছে, যদিও ইসলামাবাদ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

শুক্রবার কাবুলে তালেবান যোদ্ধারা প্রায় এক ডজন মহিলার একটি বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং এই গ্রুপকে শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে নারীর অধিকারকে সম্মান করার আহ্বান জানায়।

একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সশস্ত্র জঙ্গিরা মুখ ঢাকছে এবং কাশি দিচ্ছে। একজন বিক্ষোভকারী নারী বলেছেন, যোদ্ধারা যারা ব্যানার এবং ফুলের তোড়া নিয়ে ছিল তারা বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের উপর কাঁদানে গ্যাস এবং টিজার ব্যবহার করেছে।

বিক্ষোভকারীদের একজন সুরায়া বলছিলেন, 'তারা একটি বন্দুকের ম্যাগাজিন দিয়ে একজন বিক্ষোভরত মহিলাদের মাথায় আঘাত করে, এতে তিনি রক্তাক্ত হয়ে পড়েছিলেন।'

এর আগে ক্ষমতায় থাকাকালীন তালেবানরা হিংসাত্মক শাস্তি আরোপ করেছিল। তারা আগে ক্ষমতায় থাকাকালীন নারী ও বয়স্ক মেয়েদের স্কুল ও চাকরিতে বাধা দেয়, কিন্তু এবার তারা আরও নমনীয় অবস্থান দেখাতে চেয়েছে।

অন্যদিকে তালেবানের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে নতুন সরকারের ঘোষণা দেওয়া হবে।

তালিবানের কিছু সূত্রের খবর, তালেবান সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নেতৃত্বে নতুন সরকারে আফগানদের সব গোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত হবে।

সূত্র আলজাজিরা টেলিভিশনকে জানায়, 'আমরা তাদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সরকার নিরাপত্তা দেবে, কারণ এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়।'

কাবুলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে বলেও জানান তিনি।

আফগানিস্তানে কাতারের রাষ্ট্রদূত বলেন, একটি টেকনিক্যাল টিমের সহায়তায় কাবুল বিমানবন্দর পুনরায় চালু করতে সক্ষম হয়েছে। আল জাজিরা তাদের প্রতিনিধির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পুনরায় চালু হয়েছে।

৩০ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মার্কিন নাগরিক, অন্যান্য বিদেশি এবং তালেবানের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ আফগানদের সরিয়ে নেওয়ার পর থেকে বিমানবন্দরটি বন্ধ রয়েছে।

তাছাড়া তালেবান প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, কাবুলের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনা আবার চালু হয়েছে। তালেবানদের দখলের পর আফগানিস্তানের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে এবং নগদ মুদ্রা অভাব দেখা দিয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এটিকে মানবিক বিপর্যয় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এই বিপর্যয় এড়াতে ১৩ সেপ্টেম্বর একটি আন্তর্জাতিক সহায়তা সম্মেলন ডাকবেন বলে জানায় জাতিসংঘ।

পশ্চিমা শক্তি বলছে, তারা তালেবানদের সাথে সম্পৃক্ত এবং মানবিক সাহায্য পাঠানোর জন্য প্রস্তুত, কিন্তু সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এবং বৃহত্তর অর্থনৈতিক সহায়তা মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য শুধু প্রতিশ্রুতি নয় - তা কর্মের উপর নির্ভর করবে। সূত্র: রয়টার্স

এডিবি/