ন্যাভিগেশন মেনু

তাড়াশে আ. লীগের সম্মেলনের ৬ মাস পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি


সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে ছয় মাস সময় পেরিয়ে গেলেও  পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ায় এখন এক নেতার নেতৃত্বে চলছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। 

এ নিয়ে দলের মধ্যে বিভাজন থাকলেও জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনা অতিমারির কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হয়নি।

দলীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ আট বছর পর তাড়াশ উপজেলা দলীয় কর্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ম.ম.আমজাদ হোসেন মিলন ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাবেক ছাত্রনেতা সঞ্জিত কর্মকার। সঞ্জিত কর্মকার তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটিরও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

কাউন্সিলের পর তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যতঃ বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ ও সাবেক সংসদ সদস্য গাজী ম. ম. আমজাদ হোসেন মিলনের সমর্থকরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরে। কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া নিয়ে চলে নানা তৎপরতা। এরই মাঝে ১০ এপ্রিল ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন নবনির্বাচিত সভাপতি গাজী ম. ম. আমজাদ হোসেন মিলন। পরে ১৮ এপ্রিল তিনি মারা যান।

দলীয় সূত্র জানায়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে ২৪ মার্চ নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যৌথভাবে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্বাক্ষর করেন। ১১ এপ্রিল সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকারের নেতৃত্বে ওই কমিটি জেলা আওয়ামী লীগের কাছে অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ও সভাপতি গাজী ম. ম. আমজাদ হোসেন মিলনের মৃত্যুতে জেলা আওয়ামী লীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিতে পারেননি।

ওই কমিটি নিয়ে সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ অভিযোগ তোলেন, 'তার সাথে কোনও প্রকার আলোচনা না করেই কমিটি গঠন করে জেলা আওয়ামী লীগে জমা দেওয়া হয়েছে। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা হলে দল শক্তিশালী হবে।'

তবে তার এ অভিযোগ খণ্ডন করে সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকার বলেন, 'এ অভিযোগ সঠিক নয়। বিগত দুটি কমিটি থেকে ৭৫ ভাগ নেতাকর্মী এ কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। অনেক নেতাকর্মী মারা যাওয়ায় তাদের পরিবার থেকেও নেওয়া হয়েছে। বিতর্কিত কাউকে এ কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। তবে বিদ্রোহী বা দলের সঙ্গে যারা বেঈমানি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। তাদেরকে কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হবে না।'

সিরাজগঞ্জ জেলা ও তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক অসমর্থিত সূত্র জানায়, সভাপতি গাজী ম. ম. আমজাদ হোসেন মিলনের মৃত্যুর পরপরই কে হবেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ নিয়ে চলে জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত জোর লবিং।

উভয় গ্রুপই জেলা ও কেন্দ্রে যোগাযোগ রক্ষা করলেও, তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যতঃ এখন সাধারণ সম্পাদক নির্ভর হয়ে পরেছে। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি একাই সামলাতে হচ্ছে সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকারকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন না হলে এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের পাশাপাশি পৌর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অবস্থা আরও বেহাল। এরমধ্যে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ, উপজেলা যুবলীগের কাউন্সিল হয়েছে নয় বছর আগে, ছাত্রলীগের  কমিটি  এক বছর আট মাস অতিক্রান্ত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ায় তা চলছে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্ভর। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি সাত বছর আগে গঠিত হলেও তাদের কোনও কর্মসূচি তেমন একটা দেখা যায় না, কৃষক লীগের পকেট কমিটি  দু'বছর আগে গঠিত হলেও তাদেরও কোন কর্মসূচি নেই। মহিলা আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের অবস্থা আরও করুণ।

অথচ তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে পরিচিত। এ আসন থেকেই ( সে সময়ে তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া) জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সভাপতি মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ। পরবর্তীতে ৬৪ সিরাজগঞ্জ-৩ আসন (রায়গঞ্জ-তাড়াশ উপজেলা) নিয়ে গঠিত হলে, এ আসনের সবগুলো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তাড়াশ উপজেলায় আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করেছে বিপুল ভোটে। এ কারণে তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা দ্রুত আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ও সহযোগী সংগঠন গুলো কাউন্সিল হলে দল আরো উজ্জ্বীবিত হবে। 

সর্বশেষ ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর তাড়াশ দলীয় কার্যালয়ে আসলে সেখানেও নেতাকর্মীরা তার কাছে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদনের দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকার বলেন, 'আওয়ামীগ একটি বৃহৎ দল। এ দলে প্রতিযোগিতা থাকলেও, গ্রুপিং নেই। পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন হলেই এ সাময়িক সমস্যা কেটে যাবে। সবগুলো ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হওয়ায়, দল তৃণমূল পর্যায়ে আরও গতিশীল রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।' 

স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, 'আমি চাই ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হোক। আমার লোক বলে কথা নেই। যারা বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, তারাই উপজেলা কমিটিতে ঠাঁই পাক। ব্যক্তি বিশেষের পছন্দ লোক নয়, বঙ্গবন্ধু আদর্শের বিশ্বাসীদের দিয়ে কমিটি করা হোক। এখন বিভেদের সময় নয়, দল গোছানোর সময়। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়।'

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, করোনা অতিমারির কারণে নিয়মিত সভা করতে না পারায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হয়নি। অচিরেই এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হবে।

এমএসএম/এডিবি/