ন্যাভিগেশন মেনু

তাড়াশে নৃ-গোষ্ঠীর কারাম উৎসব উদযাপিত


সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশীতে ধর্মীয় উদ্দীপনার সাথে কারাম উৎসব উদযাপন করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সাঁওতাল, উঁরাও, মাহাতো, বড়াইক, কুর্মি, সিং, পাহান, মাহালিসহ আরও কতিপয় ক্ষূদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ রীতিতে এই উৎসব উদযাপন করেন।

কারাম নামক গাছের ডাল কেটে বিভিন্ন প্রাচীন প্রথা মান্য করে এই উৎসব করা হয় তাই এর নাম কারাম উৎসব। ডাল পুতে পুঁজো করা হয় তাই এটি কোথাও কোথাও ডাল পুঁজো নামেও পরিচিত।

‘গিঁইরালাই ভাদারআ মাসঅ, লাগালাই কারাম কেএ আঁস’, এর অর্থ হলো ‘পড়েছে ভাদ্র মাস, মনে কারাম উৎসবের আশা জেগেছে।’

মাহাতো জনগোষ্ঠীর কুড়মালি ভাষায় ভাদ্র মাসকে ‘করম মাস’ বলা হয়ে থাকে। কারাম ভাদ্র মাসের শুক্ল একাদশীতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে কোনও কোনও জনগোষ্ঠী আবার অন্য তিথিতেও আয়োজন করে থাকেন।

কারাম উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা পাঁচদিনের। কোথাও কোথাও সাতদিন পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে। যারা কারাম পূজায় অংশগ্রহণ করেন (কেরমেতি) প্রথমদিন থেকেই তাদের আমিষ খাবার যেমন - হলুদ, তেল ও সকল প্রকার মসলা জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হয়। কেরমেতি বলতে যারা কারাম পুঁজায় অংশগ্রহণ করেন তাদের বোঝায়। 

তারা বিশ্বাস করেন, যদি এই খাবার পদ্ধতির কেউ অনিয়ম করে তাহলে তার অংশের বীজের অঙ্কুরোদগম (জাঁওয়া) মরে যায়। জাঁওয়া বলতে বোঝায় মাটি, বালি, মুং, কুর্থি, ছোলা ইত্যাদি উপকরণের সমন্নয়ে চারা গাছের অঙ্কুরোদগমের যে ডালা তৈরি করা হয়। এটি বৃহৎ অর্থে বৃক্ষের তথা কৃষির বিভিন্ন বীজের অঙ্কুরোদগম, লালন পালন ও সংরক্ষণকেই বোঝায়।

ধারণা করা হয়, হাজার হাজার বছর পূর্বে আদিবাসীরা কৃষির সূচনা করেন। কারাম উৎসবে মূলত বীজের অঙ্কুরোদগম, বীজ থেকে চারা তৈরি সন্তান স্নেহে লালন-পালন ও সংরক্ষণ প্রতীকী অর্থে প্রকৃতিকেই বন্দনা করা হয়। বিভিন্ন রকম আচার ও গীতের মাধ্যমে জাঁওয়া তোলা হয়। 

প্রত্যেকদিন রাতে একই রকম আচার, গীত ও ঝুমুরের মধ্যদিয়ে জাঁওয়াতে পানি দেওয়া ও জাগানো হয়। অর্থাৎ প্রকৃতির বন্দনা করা হয়। নিয়মিত পরিচর্যায় বীজগুলো এ সময় দুই পাতা বিশিষ্ট হলুদাভ সবুজ চারাগাছে পরিণত হয়। শেষের দিন কেরমেতিরা সন্ধ্যায় আঙ্গিনায় কারাম ডাল পুতে শাপলা ফুল, শশা, ফিতা প্রভৃতি দিয়ে সাজিয়ে, ডালের গোড়ায় ডালাগুলো রেখে জলন্ত প্রদীপ ও বরণডালা সাজে সজ্জিত কাসার থালা নিয়ে অধীর আগ্রহে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রথা বুকে লালন করে পুঁজোয় মনোনিবেশ করেন। কার্মা ধার্মার উপদেশমূলক গল্প জানা বৃদ্ধার নীতিগল্প শুনতে শুনতে এবং সঠিক সময়ে ডালকে প্রণাম ও ফুল ছিটিয়ে ওই রাতেই পুঁজোর কাজ সমাপ্ত হয়।

ইন্ডিজেনাস সোসাইটি অ্যান্ড কালচারের চেয়ারম্যান এবং লেখক ও গবেষক উজ্জল মাহাতো জানান, কারাম উৎসব হাজার হাজার বছরের প্রাচীন একটা উৎসব। কৃষির উদ্ভবের সাথে এই উৎসবের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই উৎসবে মেয়েরা বাবা, ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করেন সেইসাথে উৎসবটি ছোটদের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তাড়াশ উপজেলা আদিবাসী বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি বীরেন্দ্র নাথ উঁড়াও বলেন, এই উৎসবে বীজের অঙ্কুরোদগম তথা সন্তান স্নেহে লালন-পালন ও সংরক্ষণ প্রতীকী অর্থে প্রকৃতিকেই বন্দনা করা হয় উৎসবের দিন।

এমএসএম/এডিবি/