ন্যাভিগেশন মেনু

দিনাজপুরে ধানের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও বেড়েছে চালের দাম


দিনাজপুরে এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান মাড়াই শেষ হয়েছে সবেমাত্র। এর মধ্যেই মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা চালের (৫০ কেজি) দাম সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।

এমনিতেই ভোক্তারা করোনার অভিঘাতে বিপর্যস্ত। অনেকের আয় কমে গেছে। আবার অনেকের আয় একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধি মানুষের মাথায় বাজ পড়ার মতো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা। যা পাঁচদিন আগে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। বিআর-২৮ প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১৫০ টাকা। যা পাঁচদিন আগে ২ হাজার ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। ২৮ চাল বস্তা প্রতি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬০০ টাকা কিন্তু এখন ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চালের বস্তা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা। যা ৫ দিন আগে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সেক্ষেত্রে দেখা গেছে বস্তা প্রতি চালে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

দাম বাড়ার এই প্রভাব পড়েছে দিনাজপুরের পাইকারি চালের বাজারে। শনিবার (৫ জুন) বাহাদুর বাজারের আড়ৎ ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা; যা পাঁচদিন আগে বিক্রি হয় ২ হাজার ৬০০ টাকা। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা। যা পাঁচদিন আগে বিক্রি হয় ২ হাজার ১০০ টাকা। এছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা। যা পাঁচদিন আগে বিক্রি হয় ২ হাজার ১০০ টাকা।

খুচরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদিন প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হয় ৬৫ টাকা। যা পাঁচদিন আগেও ৬০ টাকা বিক্রি হয়েছে। বিআর-২৮ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৫২-৫৪ টাকা। যা পাঁচদিন আগে ৪৮-৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয় ৫০-৫১ টাকা। যা সাতদিন আগেও ৪৫-৪৬ টাকা বিক্রি হয়েছে।

জানতে চাইলে দিনাজপুর চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোছাদ্দেক হুসেন বলেন, ‘বাজারে চালের দাম বাড়ার একমাত্র কারণ হলো ধানের দাম বৃদ্ধি। বিগত বছরে কৃষকরা ধান উঠানোর আগেই কাটা মাড়াই করে হাটে বিক্রি করতো। কিন্তু এ বছর সামান্য পরিমাণ ধান হাটে বিক্রি করে বাকিটা ঘরে মজুদ করে রেখে দিয়েছে। হাট-বাজারে ধানের আমদানি কম হওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে ধানের আমদানি কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেশি দামে ধান কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এতে চালের দাম বেড়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাল অ্যাজেন্সি জানান, বড় বড় মিল মালিকরা ধান কিনে মজুদ করে চালের দাম মিল পর্যায় থেকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যে কারণে দেশে ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়েছে। এছাড়া মিলারদের কারণেই বাজারে ধানের দামও কিছুটা বেড়েছে। আর এই দাম বাড়ার অজুহাতটাই এখন মিলাররা দেখাচ্ছে। তারা বলছেন, ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বেড়েছে।

চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ এবং মধ্যবিত্তরা। নাভিশ্বাস উঠে গেছে তাদের।

শুধু চাল নয়, বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। সীমান্ত এলাকায় লকডাউনের অজুহাতে বিক্রেতারা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। শনিবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬০ টাকা। যা সপ্তাহ আগে ৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫৫ টাকা। যা ৭ দিন আগে ৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে।

দিনাজপুরে খুচরা বাজারে ডাল, আদা, রসুন, শুকনো মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ ও মুরগির ডিমও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায় লক্ষ্য করা গেছে।

টিসিবি বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চাল শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের ২৬ দশমিক ৪৪ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে। খোলা সায়াবিন প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ২ শতাংশ ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর আমদানি করা রসুন ৪ শতাংশ, দেশি আদা ১০ শতাংশ, শুকনা মরিচ ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, দারুচিনি ১ দশমিক ২৫ শতাংশ, লবঙ্গ ১১ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি হালি ফার্মের ডিমের দাম ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে।

যে সব পণ্যের দাম বেড়েছে শনিবার দিনাজপুরের বাহাদুর বাজার, রেলবাজার, পুলহাট, বউবাজার, রামনগর, সুইহারী বাজার ঘুরে সেসব পণ্যের কোনো সংকট দেখা যায়নি। ক্রেতারা তাদের চাহিদা অনুযায়ি পণ্য কিনতে পারছেন। তবে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।

ক্রেতারা জানান, বাজারে কোনো ধরনের পণ্যের সংকট নেই। তারপরও দাম বাড়তি। বাজার তদারকি সংস্থার গাফিলতির কারণে বিক্রেতারা সুযোগ বুঝে সিন্ডিকেট করে বাড়তি মুনাফা করতে জিনিষের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা স্থানীয় প্রশাসনকে বাজার তদারকি করে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।

এএস/এসএ/এডিবি/