ন্যাভিগেশন মেনু

দেবর-ভারী পরকীয়ায় সিলেটে প্রাণ গেল স্বামীর


খালাতো দেবর-ভারীর পরকীয়া কারণে সিলেটে প্রাণ হারালেন আনোয়ার হোসেন (৪২)। তিনি পেশায় আইনজীবী। তাঁকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী শিপা বেগমকে  (৩৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট নগরের তালতলার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিপা সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার রণকেলী গ্রামের আজমল আলীর মেয়ে।নিহত আনোয়ার হোসেন সিলেট জেলা বারের আইনজীবী ও সিলেট সদর উপজেলার দিঘীরপাড় এলাকার মৃত রেসালত হোসেনের ছেলে।

এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বুধবার সিলেটের আদালতে দরখাস্ত মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি (নং-৩(৬)২০২১) রেকর্ড করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলায় শিপা বেগম ছাড়াও মামলায় আরও সাত জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার তদন্তু কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াছিন আলী বলেন, গ্রেফতারকৃত শিপাকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আরেক আবেদনে মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

পরকীয়ায় জড়িয়ে বিয়ে করা শিপা বেগমের বর্তমান স্বামী খালাতো ভাই সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ি রহমত আলীর ছেলে শাহজাহান চৌধুরীকে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।

অপর আসামিরা হল- শিপা বেগমের মা রাছনা বেগম (৫০), এনামুল হাসান (৪৫), এসএম জলিল (৩৫), জাকির আহমদ (২৫), ফয়ছল আহমদ (২৬) ও নাইমার (২৫)।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহান জানান, খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে শিপা বেগমের পরকীয়া ছিল। এরই জেরে গত ৩০ এপ্রিল স্বামীকে হত্যার পর স্বজনদের জানায় ডায়বেটিস কমে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে।

 কিন্তু দাফনের ১০ দিনের মাথায় ওই নারী তার খালাতো ভাই শাহজাহান চৌধুরীকে বিয়ে করে নগরের তালতলায় সংসার করছিলেন। এতে স্বজনদের সন্দেহ হয় আইনজীবী আনোয়ার হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন, সিলেট নগরের তালতলা এলাকায় নিজ বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী ছিলেন। কিন্তু তার অগোচরে শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে স্ত্রী শিপা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। এর জেরেই আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, গত ৩০ এপ্রিল সেহেরি খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়েন অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন। এদিন অভিযুক্ত নাইমারসহ কয়েকজন বাসায় আসে। পরদিন বিকাল ৩টার দিকে স্ত্রী শিপা বেগম নিহতের স্বজনদের জানান, আনোয়ার হোসেন ডায়াবেটিস কমে গিয়ে মারা গেছেন।

পরে তাকে নিজ গ্রামের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার শিবেরবাজারের দীঘিরপার গ্রামে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেনের পরিবার জানতে পারে, পরকীয়ার জেরে আনোয়ার হোসনকে হত্যা করে স্ত্রীসহ কয়েকজন মিলে।

সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে বিচারক হত্যার অভিযোগে দরখাস্ত মামলা করলে শুনানি শেষে কোতোয়ালি থানার ওসিকে ৩০২/১০৯/৩৪ ধারায় মামলা রুজু করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, নিহত আনোয়ার ও শিপা দম্পতির ঔরসজাত দুই সন্তান রয়েছে। তারা হলেন-মেয়ে অনিমা (১৪) ও ছেলে হুমায়ন আনোয়ার মাহি (১০)। আনোয়ার হোসেনের অনেক সহায় সম্পত্তি রয়েছে।

 প্রধান আসামি শাহজাহান চৌধুরী মক্কেল হিসেবে প্রায় বাসায় আসতো। ঘটনার ২/৩ দিন আগে শিপার মা রাছনা বেগমও বাসায় আসেন। তখন রমজান মাস ছিল। শিপার সঙ্গে তার স্বামীর প্রায়ই ঝড়গা হতো। বছরখানে যাবত অ্যাডভোকেট আনোয়ার একা আরেকটি কক্ষে থাকতেন।

ঘটনার দিন হত্যার পর শিপা ফোনে বাদীকে জানায় তার ভাই মারা গেছেন। মরদেহ দাফনের পর বাসার কাজের বুয়া স্বপ্নার মাধ্যমে এক বছর ধরে পরকীয়া চলে আসার বিষয়টি জানতে পারেন। যে কারণে দাফনের পরই বাড়িতে না থেকে শিপা শহরে চলে আসেন এবং মৃত্যুর ১০ দিনের মাথায় খালাতো ভাইকে বিয়ে করেন। এতে তাদের ধারণা হচ্ছে, আসামিরা পরস্পর সহযোগিতায় অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

এস এস