ন্যাভিগেশন মেনু

দেশে জুলাইতে চিনের করোনার টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে


পক্ষকালের মধ্যে অর্থাৎ জুলাই মাসেই চিনের করোনার টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাংলাদেশে শুরু হতে পারে। বন্ধুপ্রতীম চিন করোনা আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে সহায়তা করতে চলতি মাসেই ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পাঠায় বাংলাদেশে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) চিনা প্রতিষ্ঠান সিনোভেকের অংশীদার হিসেবে এই পরীক্ষা চালাবে।

সরকারি কর্মকর্তা ও আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা এতথ্য জানিয়েছেন। টিকার পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল) ব্যবহারের বিষয়টি করোনা প্রতিরোধের আলোচনায় কিছুটা সামনে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের বক্তব্যের কারণে।

তবে এ ব্যাপারে কাজও অনেকটা এগিয়েছে। গত শুক্রবার বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘বাংলাদেশে করোনা: ছয় মাসের পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে করোনা মোকাবিলায় সরকারের আগামী দিনের প্রস্তুতির তথ্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, চিনা একটি প্রতিষ্ঠানের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা বাংলাদেশে হবে, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাংলাদেশের কোন কোন প্রতিষ্ঠান ওই টিকা উৎপাদন করতে পারবে, তা’ও জানার চেষ্টা করছে সরকার। আইসিডিডিআরবির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, চিনের সিনোভেক বায়োটেক ও আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে বাংলাদেশের প্রায় চার হাজার ব্যক্তিকে নিয়ে টিকার এই পরীক্ষা চালাবে। দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই সপ্তাহে চুক্তি হতে পারে।

চুক্তি হওয়ার পর টিকা পরীক্ষার অনুমোদনের জন্য আইসিডিডিআরবি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জানাবে। খ্যাতিসম্পন্ন টিকা বিশেষজ্ঞ এবং আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় টিকার ট্রায়াল শুরুর পরিকল্পনা আছে আইসিডিডিআরবির।

এটি কবে শুরু হবে, এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কেননা, অনেকগুলো বিষয়ের ওপর এটি নির্ভর করে। করোনার চিকিৎসার এখন অবধি সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তবে তা স্থায়ী সমাধান নয়। কার্যকর টিকা পাওয়া গেলে তা সংক্রমণ থেকে অনেকটাই সুরক্ষা দেবে, মানুষ স্বস্তিতে থাকবে।

সারা বিশ্ব টিকার জন্য অপেক্ষা করে আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবশেষ ২৪ জুনের খসড়া তালিকা অনুযায়ী এখন সারা বিশ্বে টিকা বানাতে ১৪৩টি উদ্যোগ চালু আছে। ২ জুন এমন উদ্যোগের সংখ্যা ছিল ১৩৩। অর্থাৎ তিন সপ্তাহের মধ্যে আরও ১০টি টিকার উদ্যোগ যুক্ত হয়েছে।

এখন ১৪৩টি উদ্যোগের মধ্যে ১৬টির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা মানবদেহে পরীক্ষা চলছে। বাকি ১২৫টি টিকা প্রথম বা দ্বিতীয় ধাপে আছে। পরীক্ষা সফল হলে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। করোনা প্রতিরোধের টিকা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে। সিনোভেক আছে এই তালিকায়।

টিকার পরীক্ষামূলক ব্যবহার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে আইসিডিডিআরবির। কলেরার টিকার কার্যকারিতা নিয়ে তারা বড় গবেষণা করেছে। এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অধ্যাপক ফেরদৌসী কাদরি। এ ছাড়া অতীতে সিনোভেকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও তাদের আছে।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, সিনোভেক ও আইসিডিডিআরবির মধ্যে চুক্তি হওয়ার পর তারা বাংলাদেশে মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) আবেদন করবে। এ ক্ষেত্রে নীতিবিষয়ক কমিটির অনুমোদন দরকার হবে। তারপর মাঠপর্যায়ে কাজটি কীভাবে হবে, তার অনুমোদন দেবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।কার্যকর টিকা উদ্ভাবিত হলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চিনের মানুষের টিকা পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম খবর দিচ্ছে।

কারণ, এসব দেশের বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠান টিকা উদ্ভাবন প্রক্রিয়ায় যুক্ত এবং এসব দেশে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ টিকা উৎপাদন করার মতো প্রতিষ্ঠানও আছে। বাংলাদেশে আগের থেকেই  টিকা ব্যবহারের হার অনেক বেশি।

দেশে টিকাদান ব্যবস্থাপনাও অনেক উন্নত। বাংলাদেশের শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির অনন্য সাফল্যের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’

সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। রাষ্ট্রসংঘ সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীকে এ সম্মাননা দেয় গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই বা গ্যাভি)। গত ৪ মে এই গ্যাভি অ্যালায়েন্স আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল বৈশ্বিক টিকা সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেখানে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য দ্রুত টিকা উদ্ভাবনের তাগিদ দেন।

এস এস