ন্যাভিগেশন মেনু

দ্রুত গতিতে চলছে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ


পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-১ এর রিয়্যাক্টর পিটের ফ্লোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কান্টিলিভার ট্রাস থেকে রিয়্যাক্টর পিটের নিচের ফ্লোর পর্যন্ত প্রায় ২৬ দশমিক ৩০০ মিটার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়।

এই প্রকল্পের মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রোসাটমের প্রকৌশল শাখার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট- এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ভাইস প্রেসিডেন্ট সের্গেই লাস্টোস্কিনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘২০২০ সালের নির্মাণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা সকল সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়েছি।

নির্মাণে নিয়োজিত কোম্পানি ট্রেস্ট রোজেম এলএলসি এর কর্মীগণ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-১ এর কান্টিলিভার ট্রাস থেকে রিয়্যাক্টর পিটের নিচের ফ্লোর পর্যন্ত প্রায় ২৬ দশমিক ৩০০ মিটার নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন করেছে। এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ঠিক ভাবেই অগ্রসর হচ্ছে।’

যাত্রা শুরু ২০১৩ সালে ২ অক্টোবর

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সাল তথা পাকিস্তান আমলে এ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো অগ্রগতি ছিল না। সেই সময়ে এ প্রকল্পের জন্য ২৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় পর্যায়ক্রমে আরও এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে।

২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০-এর জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা ও ২০১২ সালে বাংলাদেশ অটোমিক এনার্জি রেগুলেটরি অ্যাক্ট পাস করা হয়।

২০১৩ সালের ২ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নির্মাণ প্রকল্পের কাজের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ব্যয় হবে

এই প্রকল্পে রাশিয়ার দেওয়া প্রকল্প ব্যয়ের ৯০ শতাংশ সরবরাহ ঋণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে মেগা প্রকল্প এটি।

ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ঋণ হিসেবে রাশিয়া দেবে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকিটা ব্যয় হবে বাংলাদেশ সরকারের।

বাংলাদেশ পরমাণু ক্লাবের ৩২তম সদস্য 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের মূল নির্মাণ কাজ শুরুর (ফাস্ট কংক্রিট পৌরিং বা এফসিপি) জন্য ‘ডিজাইন অ্যান্ড কনষ্ট্রাকশন লাইসেন্স’ পাই আণবিক শক্তি কমিশন (বিএইসি)।

এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ‘বিশ্ব পরমাণু ক্লাব’ (নিউক্লিয়ার নেশন)-এ যুক্ত হয়। বাংলাদেশ এই ক্লাবের ৩২তম সদস্য। ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি অথরিটি (বিএইআরএ) শর্ত সাপেক্ষে এই লাইসেন্স দেয়।

নিরাপত্তাবলয়

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয়ে ও রাশিয়ায় নির্মিত প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় কোনো ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি মোকাবেলার সক্ষমতা নিয়েই তৈরি করা হচ্ছে এই পারমাণবিক রি-অ্যাক্টর।

অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও এর তেজস্ক্রিয়তা পদার্থ মানুষের সংস্পর্শে যাবে না। এ প্ল্যান্ট থেকে ধোয়া নির্গত ও শব্দও হবে না। প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সকল প্রকার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে একটি বিশেষ নিরাপত্তা দল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মূল প্রকল্পের বাইরে আবাসিক ভবন গ্রিনসিটি, রেলপথ-নৌপথ নির্মিত হচ্ছে।

এ প্রকল্পের জন্য আগেই ২৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা ছিল।

পর্যাপ্ত না হওয়ায় আরো ১০০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রকল্প এলাকার বাইরে তৈরি হচ্ছে গ্রিনসিটি আবাসন পল্লী। এটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ ও ১৬ তলার ২২টি সুউচ্চ ভবন তৈরি হবে। ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে।

প্রকল্পের জন্য ভারী মালপত্র নদীপথে আনা হবে। মোংলা থেকে চাঁদপুর, মাওয়া, গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী পর্যন্ত নৌপথ খনন করে ৯৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এই পথ দিয়ে ইতিমধ্যে ভারী যন্ত্রাংশ আনা শুরু হয়েছে।

রেলপথেও যন্ত্রপাতি আনা হবে। এজন্য ঈশ্বরদী থেকে প্রকল্প পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজও শেষের দিকে। এরমধ্যে ব্রডগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রুপান্তর করা হচ্ছে ১৭ দশমিক ৫২ কিলোমিটার।

এছাড়া সাড়ে ৪ কিলোমিটার লুপলাইন, একটি ‘বি’ শ্রেণি রেলওয়ে স্টেশন, ৭টি কালভাট, ১৩টি লেভেলক্রসিং গেট ও সিগনাল নির্মাণের কাজ শেষের দিকে। এজন্য ব্যয় হচ্ছে ৩৩৯ কোটি টাকা।

দুই ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, প্রথম চুল্লি চালু ২০২৩ সালে

এই প্রকল্পে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক (থ্রি প্লাস জেনারেশন) ‘ভিভিইআর ১২০০’ প্রযুক্তির পরামণু চুল্লি ব্যবহার করা হবে।

২০২৩ সালে এ প্রকল্পের প্রথমটি এবং পরের বছর দ্বিতীয় চুল্লিটি চালু হওয়ার কথা। বর্তমানে পৃথিবীর ৩১টি দেশে ৪৫০টি পারমাণবিক বিদ্যুতের ইউনিট চালু আছে।

এগুলোর সর্বমোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩ লাখ ৯২ হাজার মেগাওয়াট। দুই ইউনিটের এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রোসাটম। আর ঠিকাদার হিসেবে কারজ করছে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট।

বাস্তবায়ন ব্যয় বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদি এবং গ্যাস, তেল ও কয়লার মতো জ্বালানি খরচ না থাকায় তুলনামূলক সস্তা হবে এই বিদ্যুৎ। এ প্রকল্পের ‘লাইফ’ বা জীবনীশক্তি হবে ৫০ বছর। আর তা সংস্কার করলে দাঁড়াবে ৮০ বছর।

জে এইচ/এস এ / এস এস