শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ডাকা ‘দ্রোহযাত্রা'র পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে দ্রোহযাত্রা শুরু হয়ে পরে সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর ও টিএসসি হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। দ্রোহযাত্রায় দাবি উঠানো হয়, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। রোববারের মধ্যে সরকারকে পদত্যাগ না করলে সেদিন বিকাল তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু হবে।অন্যদিকে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে শতাধিক শিল্পী ও সাধারণ মানুষ ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদে শামিল হন। তারাও হত্যার দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি তুলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী দ্রোহযাত্রায় অংশ নিতে বেলা তিনটার আগে থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানুষেরা উপস্থিত হতে থাকেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
যাত্রার শুরুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বক্তব্যে বলেন, তাঁদের দাবি এখন একটাই, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে আনতে হবে। সরকারের কাছে কোনো কিছু চাওয়ার নেই। ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের’বিচার করতে হবে, আরও অনেক বিচার বকেয়া রয়েছে। আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, এখন প্রধান এজেন্ডা (আলোচ্য বিষয়) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তর কীভাবে হবে। এরপর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দ্রোহযাত্রাটি শুরু হয়ে সোয়া চারটার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছায়। দ্রোহযাত্রায় জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সি আর আবরার, আসিফ নজরুল, উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা উপস্থিত ছিলেন।দ্রোহযাত্রা শেষে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম। তিনি বলেন, গণগ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে, গ্রেপ্তার সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। রোববারের মধ্যে কারফিউ তুলে নিতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। রোববারের মধ্যে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এসব দাবি পূরণ না হলে রোববার বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু হবে।
রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এদিকে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের সামনে শতাধিক শিল্পী ও সাধারণ মানুষ ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদে শামিল হন। সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সমাবেশে দৃশ্যশিল্পী,আলোকচিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, লেখকসহ অনেক সাধারণ নাগরিক অংশ নেন।শিল্পীরা হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য নিয়ে দীর্ঘ ক্যানভাসে লাল রঙের প্রতিবাদী চিত্র অঙ্কন করেন। বৃষ্টির কারণে অঙ্কন দ্রুত শেষ করতে হয়। তবে এরপর তাঁরা ‘আস্থা-অনাস্থা’ নামের একটি বেদনাবিধুর আবেগময় পারফরম্যান্স আর্ট পরিবেশন করেন।
পথচলতি শত শত মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিবাদী আয়োজনে অংশ নেন। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশ দীর্ঘতর হতে থাকে। এসময় আয়োজকদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও স্লোগানে কণ্ঠ মেলান। চারপাশে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা আয়োজনে কোনো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি।এ‘পারফরম্যান্স আর্ট’ পরিবেশন ছাড়াও সংগীতশিল্পীরা উদ্দীপনাময় গণসংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ‘জনতায় আস্থা, স্বৈরাচারে অনাস্থা’। এছাড়াও ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এমন বিভিন্ন স্লোগানে এলাকা মুখর করে তোলা হয়।পারফরম্যান্সে অংশ নেন অসিত রায়, নুজহাত তাবাসসুম, আয়মান, আনন, জোহান, সাজন, জাহিদ ইসলাম, জাকির হোসেন, সোহেলী, আফসানা শারমিন, অপূর্ব, অনিকা, আদৃতা, অহর্নিশ, শেহজাদ চৌধুরীসহ অনেকে।আয়োজকদের পক্ষে সমাবেশের বিবৃতিপত্র পাঠ করেন কবি অরূপ রাহী। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাও এই সমাবেশে অংশ নেন। তবে তিনি বক্তব্য না দিয়ে বলেছেন, সাধারণ মানুষের মতোই তিনি শিল্পীদের প্রতিবাদের অংশ নিয়েছেন।আয়োজনে সমাপনী বক্তব্যে আহ্বায়ক শিল্পী মোস্তফা জামান বলেন, শিল্পীসমাজ চলমান রাষ্ট্রীয় অনাচার, অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কর্তব্য মনে করেছে। দেশে গণমানুষের রাজনৈতিক অধিকার হারিয়েছে, ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে যখন ছাত্রদের কোটা সংস্কারের দাবি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে তথন শিল্পীসমাজ ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংহতি জানাতে পথে নেমেছে। এই আন্দোলন চলবে।