ন্যাভিগেশন মেনু

নতুন জাতের মুরগি উদ্ভাবন দেশে


স্বাদের কারণে বাংলাদেশের মানুষের কাছে দেশি মুরগির চাহিদা খুব বেশি। কিন্তু দেশি মুরগি বড় হয়ে মাংসল হতে বেশ সময় নেয়। এ কারণে উৎপাদন কম। সেখানে লেয়ার বা লেগ হর্ন জাতীয় ফার্মের মুরগি দ্রুত বর্ধনশীল হলেও স্বাদ কম থাকায় মানুষ তেমন পছন্দ করেন না।

তবে দামের বিস্তর ফারাক থাকায় লোকে ফার্মের মুরগির মাংস কিনে থাকেন। ফার্মের মুরগি যেখানে প্রতি কেজি দেড়শো টাকার মধ্যে মেলে সেখানে দেশি মুরগি কিনতে হয় চারশো টাকায়। তবে পাকিস্তানি প্রজাতি ‘কক’ স্বাদে বা মাংসটা দেশি মুরগির কাছাকাছি হওয়ায় তিনশো টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হয়। 

দেশের মানুষের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট একটি নতুন দেশিয় জাতের মুরগি উদ্ভাবন করে এখন পরীক্ষামূলকভাবে বাজারজাত করার কাজ শুরু করেছে। গবেষণাগারে উদ্ভাবিত এই মুরগির পালক বহুবর্ণ হবার কারণে এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘মাল্টি কালার টেবিল চিকেন’। 

প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পোল্ট্রি উৎপাদন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাকিলা ফারুক বলেছেন, নতুন এই জাত মূলত মাংসের জাত। এটি দ্রুত পরিপূর্ণ আকার ধারণ করে অর্থাৎ খাওয়ার উপযোগী হয়। 

তিনি বলেন, ‘উদ্ভাবিত হয়েছে দেশে মুরগির মাংসের চাহিদাকে মাথায় রেখে। এই মুরগি আট সপ্তাহ মানে ৫৬ দিনে মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হবে।’

শাকিলা ফারুক আরও বলেন, এ মুরগি মূলতঃ দেশে মাংসের চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে উদ্ভাবন করা হয়েছে। মাল্টি কালার টেবিল চিকেন খুব দ্রুত বাড়ে। এটি মাংস খাওয়ার জন্য উৎপাদন করা হবে, ডিমের জন্য নয়।

আট সপ্তাহের মধ্যে এর ওজন সাড়ে নয়শ’ গ্রাম থেকে এক কেজির মতো ওজন হয়। কিন্তু এর স্বাদ এবং মাংসের গুণাগুণ দেশি মুরগির মতোই। মুরগির শারীরিক গঠন, ঠোট ও ঝুঁটি দেশি মুরগির মতো, এর পালকও অনেক রঙ এর হয়।

এই মুরগি দেখতে দেশিয় জাতের মুরগির মতো। এই মুরগিকে দেশিয় ব্রয়লার বলে থাকেন কেউ কেউ। প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট ২০১৪ সালে প্রথম নতুন মুরগির এ জাত নিয়ে গবেষণা শুরু করে। ২০১৮ সালে গবেষণাগারে সাফল্যের পর মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করা হয়।   

প্রাথমিক অবস্থায় খুলনা, বরিশাল এবং পাবনায় পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়েছে। এখন খুব অল্প পরিসরে মাল্টি কালার টেবিল চিকেন উৎপাদন করা হচ্ছে। 

শাকিলা ফারুক জানান, এই মুহূর্তে চারটি সরকারি এবং দুটি বেসরকারি খামারে নতুন জাতের মুরগি উৎপাদন করা হচ্ছে। এরমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে পরীক্ষামূলকভাবে বাজারজাত করার জন্য আফতাব বহুমুখী ফার্মসের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এখনও যৌথ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন জাত উদ্ভাবনে বিদেশি জাত এবং দেশিয় কয়েক জাতের মুরগির জার্মপ্লাজম মিলিয়ে করা হয়েছে।

মাল্টি কালার টেবিল চিকেন বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এ মুরগির মৃত্যু হার অনেক কম জানিয়ে শাকিলা ফারুক বলেন, এখনও পর্যন্ত গবেষণায় দেখা গেছে আট সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত মাল্টি কালার টেবিল চিকেনের মৃত্যুহার ২ শতাংশের নিচে।  

ব্রয়লার ও অন্যান্য মুরগির সাথে ফারাক: 

বাংলাদেশে গত এক দশকে মুরগির চাহিদা এবং ব্যবহার অনেকগুণ বেড়েছে। এরমধ্যে ব্রয়লার মুরগি যেমন রয়েছে, তেমনি দেশি মুরগি, সোনালী মুরগি, যা পাকিস্তানি কক মুরগি নামেও পরিচিত এগুলো বেশ জনপ্রিয়।

এই মুরগিগুলোর মাঝে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ২৮-৩২ দিনে খাওয়ার উপযোগী হয়। অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির ওজন এক থেকে দেড় কেজি হয়। সোনালি মুরগির এক কেজি ওজনে পৌঁছাতে সময় লাগে ৭০-৮০ দিন। 

কিন্তু মাল্টি কালার টেবিল চিকেন বাজারজাত করতে অন্তত আট সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হবে। ব্রয়লার মুরগির মাংস ও হাড় নরম হয়, কিন্তু মাল্টি কালার টেবিল চিকেনের মাংস ও হাড় দেশি মুরগির মতো শক্ত। ব্রয়লার মুরগি পালনে বড় জায়গা, নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা এবং আলো-বাতাসের দরকার হয়, কিন্তু এ মুরগি পালনের ক্ষেত্রে দেশি জাতের মুরগির মতো খোলা জায়গায় পালন করা যায়।

প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, এই মুরগি লালন-পালন সহজ, ফলে প্রান্তিক খামারীদের জন্য এটি পালন সহজ হবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ বেশি থাকবে। প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে মুরগির বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। 

এর মধ্যে ডিম পাড়া দু’টি নতুন জাতের মুরগি---স্বর্ণা এবং শুভ্রা, উদ্ভাবন করেছে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই মুহূর্তে কমন দেশি, গলাছিলা এবং হিলি বা পাহাড়ি জাতের তিনটি মুরগির জাত উন্নয়নের কাজ চলছে।

এস এস