ন্যাভিগেশন মেনু

নিজ মাদ্রাসায় আল্লামা শাহ আহমদ শফী জামাতের হাতে খুন


বাংলাদেশের এক ধর্মগুরুর গড়া বিশাল অরাজনৈতিক সংগঠনটি করায়ত্ত করতে তাঁর নিজ হাতে গড়া মাদ্রাসায় হত্যা করা হয়েছে বলে কাণ্ডের দুই মাস পর অভিযোগ উঠেছে।

ধর্মগুরু  আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার শ্যালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন। এ জন্য তিনি শফীর প্রতিপক্ষ উগ্রবাদী ধর্মীয় রাজনৈতিক জামাত-শিবিরকে দায়ী করেছেন। রাজধানী ঢাকা থেকে সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরের বন্দরনগর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন।

শনিবার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের ব্যানারে তিনি বলেন, ‘আল্লামা শফীকে জামাত-শিবিরের প্রেতাত্মারা হত্যা করেছে। হুজুর স্বাধীনতার পক্ষে থাকার কারণে তার এই পরিণতি হয়েছে। আমরা হুজুরের স্ত্রী ফিরোজা বেগম ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যার বিচার চাই।’

এদিকে হেফাজতে ইসলামের দখল নিয়ে কয়েকটি পক্ষের অপতৎপরতার কারণে ভাঙনের শিকার হয়েছে। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারী দাবিদার একটি গ্রুপ বিরোধিতা উপেক্ষা করেই আজ রবিবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করে।

প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১০ বছর পর এবার কৌশল করে হেফাজত দখল করার সব আয়োজন চূড়ান্ত। সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, একটি অংশের বিরোধিতার কারণে এই সম্মেলনের পর হেফাজত চূড়ান্তভাবে ভাঙনের মুখে পড়লো।

সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামের বর্তমান মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীর ডাকেই মূলত আজকের এই প্রতিনিধি সম্মেলন। এতে কেন্দ্রীয় ও সারা দেশের হেফাজত নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল শনিবার রাতেই আমন্ত্রিত অনেক নেতা হাটহাজারীর মাদরাসায় উপস্থিত হন।

সম্মেলনে শুরা কমিটির মতামতের ভিত্তিতে নতুন আমির ও মহাসচিব নির্বাচিত হবেন বলে আয়োজকরা জানান।এদিকে আজকের সম্মেলনকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়েছে আল্লামা শফী সমর্থক দাবিদার অপর পক্ষ।

প্রতিনিধি সম্মেলনে সংগঠনটির মূলধারাকে বাদ দিয়ে চোরাপথে কমিটি গঠন করা হলে তা বাংলাদেশের আলেমসমাজ মেনে নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ওই পক্ষটি।

২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম গড়ে তুলেছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার তৎকালীন মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। আর মহাসচিব করা হয় হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীকে।

১৩ দফা দাবি দিয়ে ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ এবং পরে ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়ে ওঠে সংগঠনটি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘১৯ সেপ্টেম্বর সুপরিকল্পিতভাবে জামাত শিবিরের পেতাত্মারা আল্লামা শফী হুজুরকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হত্যা করেছে। শফী হুজুর স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতেন ও তাদের বিরুদ্ধে বই লিখেছেন।

এই কারণে শফী হুজুরের প্রতি তাদের ক্ষোভ ছিল। শফী হুজুরকে হত্যার উদ্দেশ্যে ও হাটহাজারী মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য ১৯৮৫ সালে জামাত শিবির হামলা চালায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘শাপলা চত্বরে বিএনপি ও জামাত-শিবিরের ফাঁদে পা না দেওয়ায় শফী হুজুরকে তখন থেকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় কিছু ছাত্রকে উসকে দিয়ে জামাত-শিবির হাটহাজারী মাদ্রাসাকে অবরুদ্ধ করে রাখে।

এসময় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মাদ্রাসায় অবস্থান নিয়ে মীর ইদ্রিস, নাছির উদ্দিন মুনির, মুফতি হারুণ ও ইনজামুল হাসানদের দিয়ে সেখানে লুঠতরাজ ও ভাঙচুর চালায়।

আল্লামা শফীর শ্যালক আরো বলেন, ‘এই সময় জোরপূর্বক হুজুরের কক্ষে প্রবেশ করে হুজুরকে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে শফী হুজুরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।

এতে হুজুর অসুস্থ হয়ে পড়লে মুখে অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু জামাত-শিবির প্রেতাত্মারা অক্সিজেন মাক্স খুলে নিলে হুজুর মৃত্যুমুখে পতিত হন।

এস এস