ন্যাভিগেশন মেনু

নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত


বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে পালিত হয়। 

এদিন সকালে হুমায়ূন আহমেদের ভাই-বোন, শ্বশুর এবং নুহাশপল্লীর কর্মচারী ও ভক্তসহ হিমু পরিবহনের সদস্যরা কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

শুক্রবার সকাল ১০টায় হুমায়ূন আহমদের শ্বশুর প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী ও নুহাশপল্লীর কর্মচারীরা কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং কবর জিয়ারত করেন।

পরে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রয়াত লেখকের ছোট ভাই কার্টুনিস্ট এবং মাসিক উন্মাদের সম্পাদক ও প্রকাশক মো. আহসান হাবীব, তার স্ত্রী আফরোজা আমিন, বোন সুফিয়া হায়দার, রোকসানা আহমেদ, অন্যপ্রকাশের নির্বাহী মো. মাজহারুল ইসলাম, আগামী প্রকাশনীর মালিক ওসমান গণি, অভিনেতা সৈয়দ হাসান সোহেল প্রমুখ লেখকের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন।

কবর জিয়ারত শেষে প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ছোটভাই আহসান হাবিব সাংবাদিকদের জানান, হুমায়ূন আহমেদের সকল স্বপ্ন বাস্তাবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

তবে তার অনেক স্বপ্নই বাস্তবায়িত হয়েছে। ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণসহ অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। এ সময় তিনি প্রকাশক ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি হুমায়ূন আহমেদের লেখাগুলো নির্ভুলভাবে প্রকাশের অনুরোধ করেন।

হিমু পরিবহনের সভাপতি মো. আসলাম হোসেন জানান, তারা সকালে ঢাকা,ফরিদপুর, নরসিংদী ও গাজীপুর থেকে ৬০জন হিমু নুহাশ পল্লীর কর্মসূচীতে যোগ দেন।

হিমুরা ৪০ জেলায় একযোগে তাদের প্রিয় লেখকের স্মরণে নানা কর্মসূচী পালন করছে। তার মধ্যে বৃক্ষরোপন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, বইমেলা রয়েছে। হিমুদের উদ্যোগে ইতোমধ্যে ১০টি জেলা পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে।

লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তার দুই ছেলে নিশান ও নিনিদ দেশের বাইরে থাকায় লেখকের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচীতে যোগ দিতে পারেননি।

শাওনের বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী জানান, শাওন চলচ্চিত্র বিষয়ক ৬মাস ব্যাপী এক প্রশিক্ষণ নিতে নিশাদ ও নিনিদকে সঙ্গে নিয়ে গত মে মাসে আমেরিকায় গেছেন।

এজন্য তারা এ কর্মসূচীতে যোগ দিতে পারেননি। তবে শাওন নিউইয়র্কে স্বামীকে নিয়ে একটি স্মরণসভায় যোগ দেবে।

২০১২ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন হুমায়ূন আহমেদ।

নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, দিনটি উপলক্ষে সকাল থেকে কোরআন খানির আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া স্যারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার এতিম শিশু ছাড়াও অতিথিদের খাওয়ার আয়োজন করা হয় ।

উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও বটে। ১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হয়। এর পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের জুলাই মাসের ১৬ তারিখে তিনি চলে যান লাইফ সাপোর্টে।

 সেই অবস্থাতেই ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। ২৪ জুলাই তাকে সমাহিত করা হয় তার গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি।

বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।

এসএস