ন্যাভিগেশন মেনু

পর্যটকশূন্য লাউয়াছড়ায় বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ


জীববৈচিত্র্যে ভরপুর মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রন ও প্রতিরোধে সরকারের ঘোষণার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই উদ্যান। সংরক্ষিত এই বনে পর্যটকের উপস্থিতি না থাকায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে উদ্যানের প্রাণীরা। বনের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক, রেলপথের কাছেও অবাধে বিচরণ করছে তারা। বানরের লাফালাফি আর পাখির কিচিরমিচিরে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে লাউয়াছড়া।

বনের ভেতরে বসবাসকারীরা জানান, বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। পুরাতন গাছ চুরি হয়ে যাওয়া, বনের ভেতর দিয়ে উচ্চশব্দে ট্রেন ও যানবাহন চলাচল, অধিক দর্শনার্থীর বিচরণ, পার্শ্ববর্তী টিলাভূমিতে হোটেল, কটেজ সব মিলিয়ে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে বন ও বন্যপ্রাণীরা।

তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দ্বিতীয় দফায় গত ১ এপ্রিল থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা ও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বনে পর্যটকদের কোনও উপস্থিতি নেই। ফলে উদ্যানের প্রাণীগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। লাউয়াছড়া বনের গাছে গাছে এখন বন্যপ্রাণীদের লাফালাফি, খাবারের সন্ধানে তাদের অবাধ বিচরণ চোখে পড়ে।

লাউয়াছড়া পুঞ্জির বাসিন্দা সাজু মারছিয়াং আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, 'লাউয়াছড়া বনে প্রতিদিন পর্যটকদের ভিড় দেখা যেতো। করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর জাতীয় উদ্যান বন্ধ ঘোষণা করায় লাউয়াছড়া বন ফিরে এসেছে নতুন রূপে। উল্লুকের আওয়াজ, বিভিন্ন প্রজাতির বানরের লাফালাফি, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, সন্ধ্যায় বন মোরগের ডাকে বনটি কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছে হারানো প্রাণ। এখন কাছে থেকে বন্যপ্রাণীদের দেখা যায়।'

মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোহাইমিন মিল্টন আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, 'বন রক্ষায় ও বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ প্রজননের জন্য প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বন্ধ রাখা প্রয়োজন। করোনাকালীন সময় থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর কিছুদিন পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রাখবেন বলে প্রত্যাশা করি।'

এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, 'অন্যসময় দিনের বেলা মানুষের চলাচলের কারণে প্রাণীরা অবাধ চলাচলে ভয় পেতো। এখন পর্যটক প্রবেশ বন্ধ থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে রয়েছে বন্য প্রাণীরা।'

তিনি আরও বলেন, 'জুন থেকে আগস্ট মাস বন্যপ্রাণীদের প্রজননের সময়। বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ বংশ বিস্তারে এই তিনমাস লাউয়াছড়াসহ সংরক্ষিত বনে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রাখা যায় কি-না তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা যেতে পারে।'

লাউয়াছড়া বন্যপ্রাণী বিভাগ জানায়, ১৯৯৬ সালে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১ হাজার ২৫০ হেক্টর বন নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। লাউয়াছড়ায় রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর প্রাণী, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের মধ্যে উল্লুক, হনুমান, ছোট লেজি বানর, লজ্জাবতি বানর, সজারুসহ বিরল প্রজাতির প্রাণী রয়েছে।

জীববৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেখা মেলে নানা বিরল প্রজাতির পশু পাখির। সারা দুনিয়ার পাখি প্রেমিকরা দূর দূরান্ত হতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পাখি দেখতে ছুটে আসেন। এ বনের মধ্যে এবং আশেপাশে খাসিয়া ও টিপরা আদিবাসীদের বসবাস। 

পিডি/এডিবি/