পরিকল্পনা মতো কাজ এগোলে এ বছরেই পর্যটন নগরীর কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিবে।
নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, পাহাড়, জলাশয় আর ফসলি জমির মাঝ দিয়ে চলে গেছে দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ, যেটা শেষ হয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত-সমৃদ্ধ পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। এ রেলপথ ভ্রমণকালে যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দৃষ্টিতে ধরা পড়বে তা ভ্রমণপিপাসুদের আনন্দিত ও মুগ্ধ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প ১০২ কিলোমিটারের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন এখন চূড়ান্ত বাস্তবায়নের পথে। প্রকল্পের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। আগামী জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এ পথে সাধারণ ট্রেনের সঙ্গে ‘পর্যটন বিশেষ ট্রেন’ চলবে।
সাধারণ মানুষ স্বল্প খরচ এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সেবায় কক্সবাজারে যেতে পারবেন। কক্সবাজারের রেল স্টেশন হবে আরও বেশি দৃষ্টিনন্দন। ঝিনুক আকৃতির অত্যাধুনিক এ স্টেশনে থাকবে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২৯ একর জমির ওপর গড়ে উঠা স্টেশন ভবনের আয়তন এক লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট।
কক্সবাজারের আইকনিক রেল স্টেশনে চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে যাত্রীরা সেতু হয়ে ট্রেনে উঠবেন। আবার ট্রেন থেকে নেমে ভিন্ন পথে তারা বেরিয়ে যাবেন। এ জন্য গমন ও বহির্গমনের দুটি পথ তৈরি করা হচ্ছে। গাড়ি পার্কিংয়ের তিনটি বড় জায়গা থাকবে। পর্যটকরা লাগেজ স্টেশনে রেখেই সারা দিন সৈকত ও দর্শনীয় স্থান ঘুরে আবার ট্রেনে নিজ গন্তব্যে ফিরতে পারবেন। এছাড়া রেলভবনে মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, তারকামানের হোটেল, ব্যাংক ও কনফারেন্স হল থাকবে। ঝিনুক ফোয়ারা হয়ে ট্রেন আইকনিক স্টেশনে প্রবেশ করবে।
কর্মকর্তারা জানান, এ রেলপথ পর্যটন খাত ছাড়াও কক্সবাজারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিপণ্য পরিবহন ব্যবস্থা আগের চেয়ে সহজতর হবে। কমখরচে পণ্য পরিবহন করা যাবে। রেলে নির্জঞ্জাট ভ্রমণের সুযোগে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়বে।
সম্প্রতি কক্সবাজারে রেল প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন শেষে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, চলতি বছরের জুন থেকে অক্টোবরের শেষ নাগাদ দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চালু হবে। তখন সারাদেশ থেকে মানুষ ট্রেনে চড়ে সরাসরি কক্সবাজারে যাবেন।
রেলপথমন্ত্রী কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনের নির্মাণ কাজ দেখার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এ প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আরও বলেন, এক সময় এটি স্বপ্ন ছিল, এখন সেটা বাস্তবায়নের পথে। সারাদেশের মানুষ ট্রেনে পর্যটন নগরী কক্সবাজার যাওয়ার অপেক্ষায়।
রেলমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের জন্য টুরিস্ট কোচের আদলে উন্নতমানের কোচ দিয়ে ট্রেন চালানো হবে। সুপ্রশস্ত জানালাবিশিষ্ট ৫৪টি কোচ কেনা হবে এ প্রকল্পের আওতায়, যাতে চড়ে মানুষ অনায়াসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সুযোগ পাবে।
প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুইভাগে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে। ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জি এম আলমগীর বলেন, “নিখুঁতভাবে দ্রুত কাজ করে চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি।”
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আর জানান, ২০২৪ সালে কাজ শেষের লক্ষ্য থাকলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, চলতি বছরের জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যেই রেলে চেপে কক্সবাজার ভ্রমণে যেতে পারবেন পর্যটকরা। ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার আগেই কক্সবাজারে রেল চলাচলের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে প্রকল্প ও রেল মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ট্রেনে চড়ে সহজে কক্সবাজারে আসবেন পর্যটকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প নির্মাণ ব্যয় শুরুতে এক হাজার ৮৫২ কোটি ধরা হলেও কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। পুরো প্রকল্পে ৩৯টি মেজর ব্রিজ এবং ২৪২টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। নয়টি স্টেশনের মধ্যে সবচেয়ে বড় কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ পথে হাতি চলাচলের জন্য আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।