ন্যাভিগেশন মেনু

পশ্চিমবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টিতে প্রাণহানি ১৪, সঙ্গে নষ্ট ফসলও


দূর্গাপুজার বাকি পক্ষকাল। নিয়ম মেনে হাজির শরৎ। কিন্তু এতো সব হিসেব নিকেশ উড়িয়ে দিয়ে শ্রাবণের অঝোর ধারা আছড়ে পড়লো বঙ্গে। বিরামহীন বৃষ্টি, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্তের জেরে দুর্যোগের দুদর্শা চললো সোমবার দিনভর।

রবিবার রাত থেকে নাগাড়ে বৃষ্টিতে জল জমলো কলকাতার প্রায় সর্বত্রই। জলে থই থই বিমানবন্দরের টারমার্ক থেকে রেললাইন। তার উপর পূর্ণিমায় গঙ্গায় জোয়ারের জল ক্রমাগত বাড়তে থাকায় অবস্থা আরও সঙ্গীন হয়। মহানগরে আরও জল ঢোকা আটকাতে বন্ধ করতে হয় লকগেট।

শুধু শহর নয়, শহরতলি থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি থেকেও অবিশ্রান্ত বর্ষণের খবর মিলেছে। বাজ পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা একাধিক। প্লাবিত বেশ কয়েকটি জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ফের বন্যার ভ্রুকুটি দক্ষিণের জেলাগুলোতে।

আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অবশ্য এখনও দুর্যোগ কাটার ইঙ্গিত দিচ্ছে না। তবে কিছুটা স্বস্তি দিয়ে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সোমবার রাতের পর থেকে ঘূর্ণাবর্তটি ধীরে ধীরে পশ্চিম দিকে সরবে। ফলে মঙ্গলবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে পারে। তবে বাড়বে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামের মতো পশ্চিমের জেলাগুলোতে।

হঠাৎ করে তৈরি হওয়া এই পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে নবান্নও। কন্ট্রোল রুম থেকে জেলাগুলির সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত নবান্ন সূত্রে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, প্রত্যেক জেলাশাসককে বিপর্যয় মোকাবিলার খরচ দেওয়া হয়েছে।

এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের ৪৭টি ব্লক এবং আটটি পৌরসভা জলমগ্ন রয়েছে। প্রায় ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৩২৮ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এক লাখ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতি হয়েছে শস্য ও গবাদি পশুর। জলমগ্ন জেলাগুলিতে ৫৭৭টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে প্রশাসনের তরফে।

সেখানে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ১ লাখ ৪১ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৬০ হাজারের বেশি ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার জন্য নবান্নে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যে কোনও সমস্যায় টোল ফ্রি নম্বর ১০৭০ তে যোগাযোগ করা যাবে বলে জানানো হয়েছে।

গত ১৪ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত জলে ডুবে, দেওয়াল ধসে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। বজ্রপাতের জেরে হাওড়া, নদিয়া থেকেও একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর মিলেছে।

সপ্তাহের প্রথম দিন হওয়ায় শহর ও শহরতলির বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বাড়ে। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ থেকে দক্ষিণের মুকুন্দপুর, সর্বত্র জমা জলে নাজেহাল হয়েছেন মানুষ। রাস্তায় বাস-ট্যাক্সিও ছিল স্বাভাবিকের থেকে অনেক কম।

সন্ধ্যা হতে না হতে তাও উধাও হয়ে যাওয়ায় অফিস কাছারি থেকে বাড়ি ফিরতি মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। হাওড়া ও শিয়ালদহের ট্রেন চলাচলও অনিয়মিত হয়ে পড়ে। 

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, শেক্সপিয়ার সরণি এলাকার রডন স্ট্রিটের জমা জলেই প্রায় ৪৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে তাকে এসএসকেএম-এ নিয়ে গেলে মৃত বলে জানান চিকিৎসকরা।

বাঁকুড়ায় নৌকায় চেপে নদী পার হওয়ার সময় বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। এরইমধ্যে একমাত্র ঘাটালের দাসপুরের বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।

গ্রামীণ ও শহর এলাকা থেকে জল নামতে শুরু করেছে। তবে খড়্গপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলে ভেসেছে।

এস এস