ন্যাভিগেশন মেনু

পাবনায় আবাসন ব্যবসায় করোনার থাবা!


ক্রমবর্ধমান আবাসন চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাবনায় আবাসন ব্যবসা ব্যাপক প্রসার ঘটে। কিন্তু মরণঘাতী করোনাভাইরাস সে ব্যবসার উপর থাবা বসিয়েছে। সময়মতো ফ্লাট বা দোকান বুঝিয়ে দেওয়া বা পাওয়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। আর ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্টদের ঋণ দিয়ে করে কিস্তি আদায় করতে পারছে না।

পাবনায় মাসপো রিয়েল এস্টেট, এআর রিয়েল এস্টেট, মানামা ডেভেলপার্স, পাইল পয়েন্ট ডেভেলপার্স, রানা ডেভেলপার্স, পাবনা এক্সপ্রেস কন্সট্রাকশন, জেডএসবি হোমস-সহ বেশ কিছু রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই আবাসন ব্যবসা চালিয়ে আসছে। বছর পেরুতেই পাবনায় নতুন নতুন সুউচ্চ বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। 

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে এই ব্যবসায় নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। সঠিক সময়ে ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে না পারা, চুক্তি মোতাবেক ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করা, ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থসহ নানা বিপর্যয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

মাসপো রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মর্তুজা বিশ্বাস সনি বলেন, 'বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ এর কারণে সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশে সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে যারা আবাসন ব্যবসার সাথে জড়িত তারাসহ কর্মরতরা মারাত্বকভাবে ক্ষতির সন্মুখিন হয়েছেন। আমি মনেকরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের জন্য দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করেছেন সেই প্যাকেজের আওতায় আবাসন ব্যবসাকে বিশেষ সুবিধা দিলে এই আবাসন ব্যবসা বা আবাসন ব্যবসায়ীরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। আগামি দিনে তারা আবাসন ব্যবসাগুলো সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।'

মানামা ডেভেলপার্স লিমিটেডের ম্যানেজার জাকারিয়া মাসুম বলেন, 'বর্তমান সময়ে আবাসন ব্যবসায় স্থবিরতা নেমে এসেছে। কমে গেছে ফ্ল্যাট বিক্রি। ইতোমধ্যে যারা ফ্ল্যাটের বরাদ্দ নিয়েছেন, তারা অনেকেই বরাদ্দ বাতিল করেছেন। এভাবে চলতে থাকলে আবাসন ব্যবসায়ীরা পথে বসার উপক্রমে যাবেন। ফ্ল্যাট তৈরীতে কোম্পানি ব্যাংক ঋণ নিয়ে থাকেন। কিন্তু করোনার এই সময়ে ঋণ পরিশোধের দায় থাকে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংক ঋণের দায় নেওয়াটা আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।' সরকারি ভাবে সুনজর দেওয়া প্রয়োজন বলে দাবী করলেন তিনি।

এআর রিয়েল এস্টেটের ম্যানেজার আহসানুল হাসান বলেন, 'লকডাউন পরিস্থিতিটা আবাসন ব্যবসার অনুকুলে নয়। এই সময়ে আমার নতুন গ্রাহক পাচ্ছি না। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে যে আগ্রহ তৈরী হয়েছিল, সেটা কিছুটা ভাটা পড়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা আমাদের আবাসন সংশ্লিষ্ট কাজকর্ম স্থগিত রেখেছি। নতুন কাজ দেখেই ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়ে বরাদ্দ নেন। কিন্তু করোনার কারণে নতুন কাজে হাত দেয়া সম্ভব না হওয়ায় আবাসন ব্যবসায় স্থবিরতা নেমে এসেছে।'

জেডএসবি হোমর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার বিপ্লব হোসেন বলেন, 'চলমান করোনা আমাদের ব্যবসায় ছোবল দিয়েছে। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সারাদেশে আবাসন ব্যবসার একটা আলাদা সুনাম রয়েছে। অথচ করোনার কারনে আমরা যাদের কাছে ফ্ল্যাট বিক্রি করেছি, তারা আমাদের ঠিকমতো টাকা পরিশোধ করেননি। জমির মালিকের কাছ থেকে সময় বেঁধে কাজ ধরেছি। কিন্তু সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারছি না।'

তিনি বলেন, 'এরমধ্যেও কিছুটা কাজ নিজের টাকায় নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় করে সম্পন্ন করলেও ফ্ল্যাট ক্রেতার কাছ থেকে সেই অর্থ বরাদ্দ পাচ্ছি না। তিনি জমির মালিক, ফ্ল্যাট ক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সহনশীলতা প্রত্যাশা করেন। পাশাপাশি এই ব্যবসাকে সামনে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতারও দাবী জানান।''

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড পাবনা প্রধান শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার খলিলুর রহমান বলেন, 'আবাসন প্রকল্পে আমরা ব্যাংক লোন দিয়ে থাকি। করোনাকালীন অধিকাংশ গ্রাহক তাদের নির্ধারিত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন। সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে আমরাও গ্রাহক পর্যায়ে কোন চাপাচাপি করছি না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংকের আয় কমে যাবে, কর্মিদের বেতন ভাতায় ভাটা পড়বে। অর্থনৈতিক চাকায় নেমে আসবে স্থবিরতা।'

করোনাকালীন দূর্যোগপূর্ণ সময়ে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের ধৈর্যধারণ, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের গ্রাহক সুলভ আচরণ আর সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামণা করেছেন।

তাদের দাবী, আবাসন ব্যবসায় করোনার প্রভাবে ধ্বস নেমে এসেছে। এই ব্যবসাকে বাঁচাতে হলে প্রত্যেকের সহযোগিতা প্রয়োজন। পাবনার বৃহৎ শপিংমল ‘সিটি সেন্টার’ সহ বড় বড় আবাসন প্রকল্প’র নির্মাণ কাজ থমকে গেছে। 

এডিবি/