ন্যাভিগেশন মেনু

পারকি সমুদ্রসৈকতে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার বিচরণ


করোনাভাইরাসের ভয়ে মানুষ গৃহবন্দি।যান্ত্রিক যান থেকে কলকারখানা বন্ধ। পরিবেশদুষণ অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে।হাফ ছেড়ে বেঁচেছে প্রাণীকূল।এ আর কয়দিন।

যাইহোক, তারপরেও  করোনার এই সময়ে স্বাধীন সত্তায় ফিরেছে প্রকৃতি। পৃথিবীর দেশে দেশে তাই প্রকৃতি সাজছে নিত্যনতুন রূপে।

দেখা যেতে শুরু করেছে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদের। প্রকৃতির এই আপন সত্তায় ফিরে যাওয়ার দুর্লভ মুহূর্তগুলোয় বাংলাদেশের নৈসর্গিক পরিবেশ-প্রতিবেশেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া।

দেড়যুগ পর চট্টগ্রামের আনোয়ারার গহিরা তথা পারকি সমুদ্রসৈকতে দেখা যাচ্ছে লাল কাঁকড়ার ঝাঁক! একসময় সৈকতজুড়েই ছিল ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার বিচরণ। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পারকি সমুদ্রসৈকত বেড়ানোর প্রিয় জায়গা  ও খাবার মেনুতে যোগ হওয়ায় তাদের বিদায় নিতে হয়েছিল।

বিশেষ করে সৈকতে মানুষের অধিক মাত্রায় আনাগোনা এবং বিচ বাইকিংয়ের কারণে লাল কাঁকড়ার বিচরণ ও প্রজনন ব্যাহত হতে হতে অনেকটা উধাও হয়ে গিয়েছিল।

এ করোনাকালে মানুষ যখন গৃহবন্দী, তখন সেই অপরূপ লাল কাঁকড়ার অবশিষ্টরা তাদের গর্ত থেকে মুক্ত পরিবেশে ফিরে এসেছে। স্বাভাবিক প্রজনন প্রক্রিয়ায় দিন দিন পারকি সমুদ্রসৈকতে বাড়তে শুরু করেছে লাল কাঁকড়ার সংখ্যাও।

সেইসঙ্গে বিস্তৃত হয়েছে সৈকতে ঝাউয়ের সবুজ শাখা-প্রশাখাগুলো। সরকারি বিধিনিষেধের কারণে মার্চের শেষের দিকে পারকি সৈকতে পর্যটকদের যাওয়া-আসায় কড়াকড়ি আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন। তাই সৈকতের অন্যতম আকর্ষণ ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে ওঠা বিনোদন ও পর্যটন স্পট লুসাই পার্কসহ অন্যসব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।

এ সুযোগে পারকি সৈকতে ফিরে এসেছে প্রাণ। ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলছে লাল কাঁকড়া, আরও সবুজ ও দীর্ঘ হয়ে উঠেছে সাগরকলমির লতাপাতা। বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী ও কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত পারকি সমুদ্রসৈকতে একসময় নির্বিঘ্নে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেড়াত হাজার হাজার লাল কাঁকড়া।

দিনের বেলায় এসব কাঁকড়ার সৈকতজুড়ে বিচরণ থাকলেও রাতের বেলায় তারা হয় গর্তে না হয় সৈকতের বালিয়াড়ির সাগরলতা বা সাগরকলমির ঝোপের গোড়ায় লুকিয়ে থাকত।

কিন্তু ধীরে ধীরে এ সৈকতে মানুষের তথা পর্যটকের পদচারণা বেড়ে যাওয়ায় প্রকৃতির এসব অনুষঙ্গের অস্তিত্বও বিলীন হতে শুরু করে।

এভাবে প্রায় ১৫ বছর আগে হারিয়ে যায় লাল কাঁকড়া। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের গৃহবন্দিত্বের সুযোগে কিছু কিছু সমুদ্রসৈকতে এ লাল কাঁকড়া আবার দেখা যেতে শুরু করেছে।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতেও এ কাঁকড়া প্রচুর ছিল। আমরা কক্সবাজারে এ কাঁকড়া প্রচুর দেখেছি। চরের পর চর কাঁকড়ায় লাল হয়ে থাকত; যা এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন।

পরিবেশ বিপর্যয় ও দূষণের কারণে এ ধরনের আরও অনেক জীববৈচিত্র্য আমাদের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর লকডাউন শিথিল হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৪ জুন পারকি সৈকতের পর্যটন স্পট লুসাই পার্ক ও অন্যান্য দোকান খুলতে শুরু করেছে।

আনাগোনা শুরু হয়েছে শৌখিন পর্যটকদেরও। প্রকৃতির এ সম্পদ রক্ষার যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া না হলে একসময় হয়তো মানুষের পদচারণের ভারে হারিয়ে যাবে এসব লাল কাঁকড়ার বিচরণ।

এস এস