ন্যাভিগেশন মেনু

পারিশ্রমিক ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরী করলেন বিশ্বজিৎ পাল


নাটোর শহরের ঐতিহ্যবাহী জয়কালী বাড়ী কালী মন্দিরের পাশে উত্তর কোনায় প্রতিমা শিল্পী বিশ্বজিৎ পালের (৪২) বসবাস। এতোদিন তিনি মাটির প্রতিমাশিল্পী হিসেবে পরিচিত হলেও এখন তার একটি নতুন পরিচয় হতে চলেছে। সেটি হচ্ছে তিনি এখন ভাস্কর্যশিল্পী।

তার বাবা মৃত নিমাই চন্দ্র পাল ছিলেন নাটোরের সকলের সুপরিচিত একজন প্রতিমাশিল্পী। বলাচলে শিল্পের আতুঁর ঘরেই বিশ্বজিৎ পালের জন্ম। প্রতিমা তৈরীর হাতেখড়ি বাবার হাতেই।

সেই বাল্যকাল থেকেই বাবার শিল্পকর্মে সহায়তা করতে করতে হাত পাকতে থাকে তার। পরবর্তীতে বাবা নিমাই চন্দ্র পালের মৃত্যুর পর পেশাদার প্রতিমাশিল্পী হিসেবে বাবার জায়গাটি ধরে রেখেছেন। সংসারের অভাব দূর করতে তিনি প্রতিমা তৈরীর পাশাপাশি স্বর্ণকারের কাজও করেন।

তবে ভাস্কর্যশিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে একটি ছোট গল্প রয়েছে। মাটির প্রতিমা তৈরীর কলাকৌশল তার রক্তে-মাংসে মিশে থাকলেও ভাস্কর্য তৈরির ইচ্ছেটা মনে আসে অনেকটা শখের বশেই। মনের গভীরে লালিত হতে থাকে সেই স্বপ্ন। কিন্তু ভাস্কর্য নির্মাণে অপেশাদার, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকা এবং সাংসারিক অভাবের কারণে ঠিক যেনো সেই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারছিলেন না এতোদিন। তবে তার সেই ইচ্ছা শিল্পে রূপ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যান ২০২০ সালের শেষের দিকে।

পেশাদার ভাস্কর্যশিল্পী না হলেও যখন ভাস্বর্য তৈরি করার সুযোগ খুঁজছিলেন ঠিক তখনই নাটোর সদর উপজেলার দরাপপুরে খুব সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ বিশ্বজিৎ পালকে তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরী করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

বিশ্বজিৎ পালের সেই অধরা স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে ভেবে সেই প্রস্তাবটি হাতছাড়া করেননি তিনি। তবে বিশ্বজিৎ পাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে একটা শর্ত দেন এই বলে যে, তিনি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরির জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেবেন না, শুধুমাত্র ভাস্কর্য তৈরির সরঞ্জামাদির খরচটা নেবেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই প্রস্তাবে রাজি হয়।

এরপর বিশ্বজিৎ পাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই অন্যান্য কাজের পাশাপাশি মাত্র ২ মাসের মধ্যেই ইট, বালি, সিমেন্ট এবং রড দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য তৈরি করে ফেলেন। ভাষ্কর্যটির লম্বায় প্রায় ৮ ফুট এবং ওজন প্রায় ১ টন। অনেকটা নিখুঁতভাবেই বঙ্গবন্ধুর আদলে নির্মিত সেই ভাস্কর্য দেখে প্রশংসা করেছেন অনেকেই। খবর পেয়ে ভাস্কর্য তৈরির প্রায় শেষ পর্যায়ে সেটি পরিদর্শনে যান নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ। তিনি বিশ্বজিৎ পালের শিল্পকর্ম দেখে অভিভূত হয়েছেন এবং প্রশংসা করেন।

বিশ্বজিৎ পাল জানান, প্রতিমাশিল্পী হলেও ভাস্কর্য শিল্প তাকে প্রচণ্ডভাবে আকর্ষিত করে। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারনে তিনি ভাস্কর্য তৈরি করতে পারছিলেন না। ভালো সুযোগ এবং পৃষ্টপোষকতা পেলে ভবিষ্যতে তিনি একজন ভাস্কর্যশিল্পী হতে চান।

জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ জানান, বিশ্বজিৎ পাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই ভাস্কর্য নির্মাণে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তার এই শিল্পের মধ্য দিয়ে বর্তমান এবং পরবর্তী প্রজন্ম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানতে পারবে, উৎসাহিত হবে।

এছাড়া পরবর্তীতে গুণী শিল্পী বিশ্বজিৎ পালকে তার শিল্পকর্ম চালিয়ে যেতে সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।

নাটোর শহরের বিভিন্ন মন্দিরের ও কেন্দ্রীয় শ্মশানে মূল ফটকে শোভা ছড়ানো ইট, বালি, সিমেন্ট, রডের তৈরি দেবদেবীর মূর্তি তারই সৃষ্টির ফসল।

কেআর/ ওয়াইএ/এডিবি