ন্যাভিগেশন মেনু

পাহাড়-ঝর্ণা-মেঘের সংমিশ্রণে অপরুপ সাজেক ভ্যালি


বর্তমান সময়ে বাংলাদেশি ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের শীর্ষে আছে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি । সাজেক ভ্যালি অবশ্য  মেঘের দেশ নামেও পরিচিত! 

 যেখানে মেঘ এসে নিজেই আপনার হাতের কাছে ধরা দেয়। পাহাড়,ঝর্ণা,মেঘ আর নীল আকাশের রাজ্য সাজেক। যেথায় প্রকৃতির সাথে মেঘ-সূর্যের লুকোচুরি চলে দিনভর ।এখানে চোখের পলকেই  মেঘ এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে আপনাকে। 

 আর দেবেই না কেনো? সাজেক ভ্যালি যে  সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭২০ ফুট উপরে অবস্থিত। সাজেক ভ্যালির রুইলুই পাড়ার নিচেই মেঘের আবাধ আনাগোনা, বাংলাদেশ থেকে ভারতের মিজোরাম বা মিজোরাম থেকে বংলাদেশের রাঙামাটির এই পথের মেঘের আনাগোনা সাজেকের রাস্তা ঘাট বা হোটেলের বেড এ শুয়েও হাত দিয়ে ধরে অনুভব করা যায়। 

 যা পর্যটকদের খুব  করে আকর্ষণ করে ।  প্রকৃতির এমন কিছু অমায়িক রুপ দেখবেন যা আপনি চাইলেও কখনো ভুলতে পারবেন না।মেঘ,পাহাড় আর সূর্যের দোলাচলে আপনি মূহর্তে হারিয়ে যেতে পারেন কোনো এক স্বর্গের রাজ্য।

এবার জেনে নেওয়া যাক সাজেক সম্পর্কেঃ

সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলার সর্ব উত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। সাজেক হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন, যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেক এর উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা। 

 সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ি এর দীঘিনালা থেকে। রাঙামাটি থেকে নৌপথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথ হেঁটে সাজেক আসা যায়। 

 খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। আর দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার। বাঘাইহাট থেকে ৩৪ কিলোমিটার।


 খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে সাজেক যেতে হয়। পথে পড়বে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প। যেখান থেকে আপনাকে সাজেক যাবার মূল অনুমতি নিতে হবে। 

 তারপর কাসালং ব্রিজ, ২টি নদী মিলে কাসালং নদী হয়েছে। পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার। বাজার পার হলে পড়বে সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া যার উচ্চতা ১৭২০ ফুট এবং এর  সর্বোচ্চ পাহাড় বা শেষ গ্রাম কংলাক পাড়ার উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট। 

 এর প্রবীণ জনগোষ্ঠী লুসাই। এছাড়া পাংকুয়া ও ত্রিপুরারাও বাস করে। ১৮৮৫ সালে এই পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয়। এর হেড ম্যান লাল থাংগা লুসাই। রুইলুই পাড়া থেকে অল্প সময়ে পৌঁছে যাবেন সাজেক। সাজেক এর বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্প। এখানে হেলিপ্যাড আছে।

 ভ্রমণের বিস্তারিত 

সাজেকের প্রধান আকর্ষণ হল কংলাক পাহাড়।সাজেক এর শেষ গ্রাম কংলক পাড়া এবং এর উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট । এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে।


সাজেকে রয়েছে ২ টি হ্যালিপ্যাড। যেখান থেকে সূর্যাস্ত- ও সূর্যোদয় দেখা যায়।

ডোসাজেক (Sajek Valley) এর রুইলুই পাড়া থেকে দুই থেকে আড়াই ঘন্টার ট্রেকিং করে দেখে আসতে পারেন সুন্দর কমলক ঝর্ণাটি। কমলক ঝর্ণাটি অনেকের কাছে পিদাম তৈসা ঝর্ণা অথবা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামে পরিচিত।

সাজেক থেকে ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন।

খাগড়াছড়ি শহরের আশেপাশে আরও ঘুরে দেখতে পারেন , আলুটিলা গুহা, তারেং হ্যালিপ্যাড, রিসাং ঝর্ণা , Suspension Bridge, Khagrachhari - ঝুলন্ত সেতু।


সাজেকে থাকার স্থান 

সাজেকে থাকার জন্য অনেক রিসোর্ট, কটেজ ও আদিবাসিদের বাড়িতে থাকা যায়। সাজেকে থাকার জন্য অবশ্যই আগে বুকিং দিয়ে যাবেন। কিন্তু অফ সিজনে সাজেক যেয়েও রুম বুকিং দেওয়া যায়।

ভালো ভিউ পাওয়া যায় এমন কয়েকটা রিসোর্ট হল , মেঘ মাচাং,মেঘ পুঞ্জি , জুম ঘর, এছাড়া সেনাবাহিনীর কিছু ভাল মানের কটেজ আছে সাজেকে। সাজেকে ১৫০০ -৩০০০ টাকায় ভাল কটেজ পাওয়া যায়।


সাজেকে কোথায় খাবেন 

সাজেকে খাওয়ার জন্য অবশ্যই আগে অর্ডার করতে হয়।খাবারের মিনিমাম ১ ঘন্টা আগে অর্ডার করুন।

সাজেকে প্রতিবেলা খাবারের বিভিন্ন প্যাকেজ সিস্টেম পাওয়া যায়।

১. ভাত+ডাল+আলুভর্তা+সবজি+দেশি মুরগী দাম ২০০ টাকা

২. ভাত+ডাল+আলুভর্তা+সবজি+ফার্মের মুরগী দাম ১৫০ টাকা

৩.ভাত+ডাল+আলুভর্তা দাম ১০০ টাকা।

রাতে ব্যাম্বু চিকেন অথবা বারবিকিউ খেতে পারেন দাম পড়বে ২২০ থেকে ৩০০ টাকা।

 আমার কাছে পেদা টিং টিং ও চিম্বাল এর খাওয়ার ভালো লেগেছে, এছাড়াও আরো অসংখ্যা হোটেল রয়েছে।

সাজেকে ৩ বেলা খাবারের জন্য মিনিমাম ৪০০ টাকা বাজেট রাখবেন।সাজেকে পাহাড়িদের ট্র্যাডিশনাল খাবারও পাওয়া যায়।

আর হ্যা খাগড়াছড়ি ফিরে অবশ্যই সিস্টেম রেস্তোরাতে খেতে ভুলবেন না।

সাজেকে পানির অনেক দাম।তাই দীঘিনালা থেকে পানি কিনে নিলে ভাল হবে। আমরা ৫ জন ২ দিনের খাওয়ার জন্য ২০ লিটার নিয়েছিলাম |


কিভাবে যাবেনঃ

রুট -০১

ঢাকা থেকে বাসে - ঢাকা- খাগড়াছড়ি- সাজেক।তারপর চান্দের গাড়িতে সাজেক।

রুট – ০২

ঢাকা থেকে মেইল ট্রেনে ফেনী তারপর শান্তি পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি । ফেনী থেকে বাস ছাড়ে ৮.৩০ সকাল । তারপর খাগড়াছড়ি থেকে চান্দের গাড়িতে সাজেক।

রুট-০৩ চট্টগ্রাম থেকে বাসে খাগড়াছড়ি ।দুই ধরণের বাস চলে

১/ শান্তি পরিবহণের সিটিং সার্ভিস ভাড়া দিঘীনালা পর্যন্ত ২৪০ টাকা।

২/ লোকাল বাস - ভাড়া = ১৫০ টাকা।

সাজেকে চান্দের গাড়ি ২টা এস্কটে ছেড়ে যায়।প্রথম এস্কট সকাল ১০.৩০ এ , অন্যটা বিকাল ৩.৩০ এ ছেড়ে যায়।


ট্যুরের খরচ 

আমরা  ট্যুরে যাওয়ার আগে এই খরচের বিষয়টা নিয়েই সবচেয়ে বেশী ঘষামাজা করি ।

আসুন তাহলে খরচের লিস্টটা দেখে নেইঃ

বাস ভাড়া= ঢাকা - খাগড়াছড়ি = ৫২০+৫২০

কটেজ ভাড়া = ৫০০ (৪ জনের জন্য এক রুম)

চান্দের গাড়ি রিজার্ভ = ৭০০(১০ জনের গ্রুপ )

সাজেকে খাওয়া খরচ = ৪৫০ (তিন বেলা )

বাকি তিন বেলা খাবার খরচ = ৫০+১২০+১২০ ( খাগড়াছড়ি শহরে)

এন্ট্রি ফি =৭০ টাকা ( সাজেক, আলু টিলা, ঝুলন্ত  ব্রিজ)

এই গুলো টোটাল করলেই পেয়ে যাবেন আপনার সাজেক ট্যুরের খরচের আইডিয়া।মেইল ট্রেইন আর চট্রগ্রাম থেকে আসলে খরচ আরও কম হবে।


বিশেষ কিছু টিপস 

 ১ .অবশ্যই আইডি কার্ড নিয়ে যাবেন।

২ . পাওয়ার ব্যাংক এবং খাগড়াছড়ি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পানি কিনে নিয়ে যাবেন , সাজেকে বিদ্যুতের কোনো ব্যাবস্থা নেই, আর পানির দাম বেশি। 

 তবে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত জেনারেটরের মাধ্যমে রিসোর্ট গুলোয় বিদ্যুত সাপ্লাই দেয়া হয় তখন আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক জিনিষ গুলো চার্জ করে নিতে পারবেন।

৩ . খুব ভোরে উঠে ঘুম থেকে সাজেকের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে ভুলবেন না।

৪ . বিকালের দিকে কংলাক পাড়ায় গিয়ে সূর্যাস্ত দেখবেন। আপনাদের ভাড়া করা জীপ গাড়িটি আপনাদের কংলাক পাড়ার কিছু দূর পোঁছে দিবে।

 

৫ . আপনি সকালের এক্সটে জীপ ভাড়া করে সাজেক গেলে আবার পরের দিন সকালে আবার জীপটি আপনাদের নিয়ে খাগড়াছড়ি ফিরে আসবে। (৭,৬০০ টাকার মধ্যেই ড্রাইভারের থাকা খাওয়া সব কিছু একত্রিত)।

হ্যা, আর একটি কথা সাজেক খুব সুন্দর যায়গা।তাই দয়া করে কেউ যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। আরও ভাল হয় আপনার সামনে কোন বোতল, চিপ্স এর প্যাক,পলিথিন পড়ে থাকতে দেখলে ডাস্টবিনে তুলে রাখুন।

এসএস

বিস্তারিত খবর পেতে ভিজিট করুন :https://ajkerbangladeshpost.com