ন্যাভিগেশন মেনু

পীত নদী রক্ষায় নতুন আইন হচ্ছে চীনে


হোয়াংহো অর্থাৎ পীত নদী হলো চীনা জাতির মাতৃনদী। পীত নদীর সুরক্ষা চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের সাথে সম্পর্কিত বিষয়। বিশ ডিসেম্বর বিকেলে বেইজিংয়ে চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির এক সভায় এ নদী সুরক্ষা আইনের খসড়া পর্যালোচনা করা হয়। খসড়ায় পীত নদীতে জল কমে যাওয়া এবং বেশি বালি দেখা দেওয়া, পানি ও ভূমিক্ষয়, এবং গুরুতর দূষণসহ নানান সমস্যার ওপর আলোকপাত করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো, এ নদীর অববাহিকায় পরিবেশগত সুরক্ষাকাজকে আরও শক্তিশালী করা এবং মাতৃনদী সুরক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী আইনী প্রতিরক্ষারেখা সৃষ্টি করা।

হোয়াংহো অববাহিকার পরিবেশ সংরক্ষণ এবং উচ্চ-মানের উন্নয়ন সবসময়ই চীনের প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সি চিনপিংয়ের প্রধান উদ্বেগের বিষয়। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে সি চিন পিং ৭ বার পীত নদী পরিদর্শন করেছেন এবং নদীর পরিবেশগত সুরক্ষা এবং উচ্চ-মানের উন্নয়নের বিষয়ে বেশ কয়েকবার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছেন। এ নদীর অববাহিকায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু বর্তমানে নদীর অববাহিকায় এখনও কিছু অসামান্য অসুবিধা এবং সমস্যা রয়ে গেছে। 

খসড়ায় মোট ১১টি অধ্যায় এবং ১০৫টি টার্ম আছে। এর মাধ্যমে পীত নদীর অববাহিকার পরিবেশগত সুরক্ষা এবং উচ্চ-মানের উন্নয়নের জন্য একটি বৈজ্ঞানিক ও কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা ও পরিবেশ পুনরুদ্ধার, পানিসম্পদের সাশ্রয় ও বন্যা প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ম-কানুনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পীত নদীর জলসম্পদ দেশের মোট জলসম্পদের মাত্র ২ শতাংশ। অথচ এ জল চীনের জনসংখ্যার ১২ শতাংশের চাহিদা পূরণ করে এবং দেশের আবাদযোগ্য জমির ১৫ শতাংশের সেচকাজে ব্যবহৃত হয়। চীনের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশসম্পদ আইন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ইয়ু ওয়েন সুয়েন বলেন, “পীত নদী অববাহিকায় পানিসম্পদ পরিস্থিতি ভয়াবহ। মাথাপিছু পানিসম্পদ কম, এবং উন্নয়নে ব্যবহারের হার অনেক বেশি। অববাহিকায় দূষণ তুলনামূলকভাবে গুরুতর, বিশেষ করে উপনদীতে গুরুতর দূষণের সমস্যা। এসব সমস্যার সমাধান পীত নদীর সুরক্ষার জন্য জরুরি।”

পীত নদী হলো সবচেয়ে বেশি পলিমাটিযুক্ত নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে কঠিন। নদীর পানিদূষণ পরিস্থিতি গুরুতর এবং এ সমস্যা হাজার হাজার বছর ধরে চীনা জাতিকে জর্জরিত করে আসছে। উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আইন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ছিন থিয়েন পাও বলেন, “পীত নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পানি ও বালির সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করা উচিৎ। তাছাড়া, এ নদীর অববাহিকায় মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার জন্য প্রতিরক্ষার একটি শক্ত রেখা তৈরি করে, ব্যাপক বন্যা প্রতিরোধ ও দুর্যোগ হ্রাসব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা উচিৎ। এই প্রক্রিয়ায় মাটির ক্ষয় নিয়ন্ত্রণের মূল হলো জল ও পলি নিয়ন্ত্রণ।” 

খসড়ায় পানি ও বালি নিয়ন্ত্রণ ও বন্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পীত নদীর অববাহিকায় গুরুতর দূষণের সমস্যা মোকাবিলায় খসড়ায় ওই অঞ্চলে পানির গুণগত মান, দূষণকারী নিষ্কাশনের মান, অববাহিকার মূল দূষকগুলোর সম্পূর্ণ নিষ্কাশন নিয়ন্ত্রণ, নিকাশী আউটলেট তত্ত্বাবধান এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাগুলোর বিধান রাখা হয়েছে। 

খসড়ায় পীত নদীর সংস্কৃতির সুরক্ষা, ঐতিহ্য ও প্রচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ করে তোলার জন্য একটি বিশেষ অধ্যায় রাখা হয়েছে। চীনের জাতীয় আইনে নদীর অববাহিকার সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য বিশেষ বিধান রাখা আগে কখনও দেখা দেয়নি। 

ইয়ু ওয়েন সুয়েন বলেন, “পীত নদী হলো চীনা জাতির মাতৃনদী। পীত নদীর অববাহিকা চীনা সভ্যতার দোলনা। তাই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখা এবং সুরক্ষা করা পীত নদীর সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।:

তিনি বলেন, পীত নদী সুরক্ষা আইনের খসড়ায় এ নদীর সাংস্কৃতিক সম্পদ ও ঐতিহ্য সুরক্ষা, সাহিত্য সৃষ্টি, সংস্কৃতি ও পর্যটনের একীকরণ, গবেষণা ও বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবস্থা ও পদক্ষেপের বিধান রাখা হয়েছে। 

ইয়ু ওয়েন সুয়েন জানান, এসব বিধানের উদ্দেশ্য হলো পীত নদীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পদ্ধতিগত সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ঐতিহাসিক সংস্কৃতির সুরক্ষার মাধ্যমে পীত নদী অববাহিকার উচ্চ-মানের উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া। - তথ্যসূত্র: সিএমজি