যতই শক্তিশালী হোক, শেয়ারবাজারে কারসাজি করে আর পার পাওয়া যাবে না। এখান থেকে টাকা নিয়ে পালানোর দিন শেষ। এ ক্ষেত্রে যারা আগে, বিভিন্নভাবে অনিয়ম যুক্ত ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) শেয়ারবাজার বিষয়ক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিষ্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেইন, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যাসেসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম।
এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন, বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান এবং সিএমজেএফ সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমবিএর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের ব্যবসা সহজ করার জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার; বিএসইসির পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার থেকে অনিয়ম এবং বিভিন্ন কারসাজি দুর করতে ডিএসইর তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগে সংস্কার জরুরি। ডিএসইর ওয়েবসাইট নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিলো তার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটি রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছে। শিগগিরই তারা আমাদের কাছে এই রিপোর্ট জমা দেবেন। রিপোর্ট অনুযায়ি আমরা ব্যবস্থা নিতে বলবো।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বিএসইসি। এককভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই এমন কোম্পানির ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। অনেক বোর্ড ভেঙেও দেয়া হতে পারে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র পরিচালকদের কার্যক্রম কঠোরভাবে পর্যবেক্ষন করা হবে। এছাড়া সম্প্রতি ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাজারকে আরও বড় করতে হবে, যাতে তিন থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দৈনিক লেনদেন হয়।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারে শতভাগ সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে মানুষ এখানে বিনিয়োগের ঝুঁকি নেবে না। পুঁজির নিরাপত্তা দিতে না পারলে তারা কষ্টার্জিত অর্থ শেয়ারবাজারে নিয়ে আসবে? প্রশ্ন রাখেন তিনি। এ কারণে সবার আগে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর কিছু কোম্পানি ঠিকমতো কাজ করছে না। হঠাৎ কোম্পানি করে বন্ধ করে চলে যাচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানুষকে ঠকানোর চেষ্টা করেছেন, সেসব কোম্পানিতে সম্ভবত আমাদের বোর্ডও ভেঙ্গে দিতে হতে পারে। সেখানে আমরা স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করবো। আইনের মধ্যে থেকেই এগুলো করা হবে। না হলে শেয়ার বাইব্যাক (পুণ:ক্রয়) করে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, শেয়ারবাজারে বৈচিত্র আনতে হবে। শুধু সেকেন্ডারি মার্কেট না থাকলে হবে না। এই বাজারটাকে অনেক বড় করতে হবে।
তার মতে, বর্তমানে প্রতিদিন ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এই লেনদেনকে দ্রুত ৩ থেকে ৫ হাজার কোটিতে নেওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। এ জন্য সারাদেশে ব্রোকারেজ হাউজের শাখা ছড়িয়ে দিতে হবে। এমনকি দেশের বাইরেও ডিজিটাল আউটলেট করার ব্যাপারে চিন্তা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইক্যুইটিভিত্তিক শেয়ারবাজার থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। গত সাড়ে ৩ মাসে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সাব-অর্ডিনেটে এবং পার্পিচুয়াল বন্ড এবং ৮৫০ কোটি টাকার জিরো কূপন বন্ডের অনুমোদন দিয়েছি। এতে বাজারের সব কিছু বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, কিছু দুষ্টু লোক নিয়মনীতি না মেনে অপকর্মে লিপ্ত হয়। ওই ধরনের ২-৫ শতাংশের জন্য সাধারন বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্থ হতে দেবো না। সেই সুযোগ ইনশাআল্লাহ আর হবে না। এ নিয়ে আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে পারি। এ ব্যাপারে আপনাদেরকেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। যাতে কাউকে ক্ষতি করে বা চালাকি করে টাকা পয়সা নিয়ে যেতে না পারে।
স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়ে আগামীতে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও জানান তিনি।
আইনে কাভার করলে কিছু স্বতন্ত্র পরিচালককে সরিয়ে দিতে হতে পারে। তাদের জায়গায় সঠিক স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। এই স্বতন্ত্র পরিচালকদেরকে যে উদ্দেশ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেটা এখনো পূরন হয়নি। আমরা এই সপ্তাহে স্বতন্ত্র পরিচালকদের অনলাইনে আবেদন নেওয়া শুরু করবো। যারা যোগ্য হবেন, তাদেরকে নেওয়া হবে।
সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির যে কাজ সেটা তারা সঠিকভাবে করতে পারছে না। এ কারণে সরকারের নির্দেশে আইসিবিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের পর আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে আইসিবি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। তখন সরকার থেকে আইসিবিকে আরও তহবিল দেওয়া হবে। তার মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল রাখতে আইসিবির যে ভুমিকা, সেটা রাখতে পারবে।
এডিবি/