ন্যাভিগেশন মেনু

পোশাক শিল্প নিয়ে ড. রুবানা হকের খোলা চিঠি


করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ ও প্রস্থান নীতি না থাকায়, পশ্চিমা ক্রেতাদের দেউলিয়া হওয়া এবং নির্দয়ভাবে ক্রয়াদেশ বাতিলের কারণে এই শিল্প অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক।

তিনি বলেন, দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎস তৈরি পোশাক শিল্পখাত মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে তিনি এসব কথা বলেন।

চিঠিতে চলমান করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে পোশাক খাতে সৃষ্ট সংকট নিয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং ব্যাংক থেকে নেওয়া ওই ঋণের টাকা ফেরত না দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন রুবানা হক।

চিঠিতে ড. রুবানা হক যা বলেছেন তা হলো-

শিল্প আজ সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ এমনকি প্রস্থান নীতি না থাকায় পশ্চিমা ক্রেতাদের দেওলিয়াত্ব বরণ, নির্দয়হীনভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল এবং force majeure clauses এর কারণে শিল্প চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এবং কারখানাগুলো টালমাটাল পরিস্থিতির সাথে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে। শিল্প ভালো করছে এবং সরকারের কাছ থেকে সকল সহযোগিতা পাচ্ছে, এই যে একটি  ধারণা অনেকেই পোষণ করছেন, এবং তার আজ প্রকৃত পূনর্মূল্যায়ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

আজকের বাস্তবতা বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০২১ সালের জানুয়ারির ৩য় সপ্তাহের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত পরশুদিন (৫ জানুয়ারি) এ মর্মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পত্র জারি করেছে।

লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, এই নির্দেশনা এমন সময়ে দেওয়া হলো, যখন কি-না করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্ততপক্ষে ৬ মাসের জন্য স্থগিতকরণ অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্ততপক্ষে আরও অতিরিক্ত ১ বছর (বর্তমানে ২৪ মাস) সম্প্রসারিত করা না হলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা দূরুহ হবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সদ্য ২০২০ এর ডিসেম্বর মাসের যে রপ্তানি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানেও আমাদের রপ্তানির উদ্বেগজনক চিত্র বহাল আছে।

ডিসেম্বর মাসে পোশাক রপ্তানিতে ধারাবাহিক পতন অব্যাহত থেকে পতন হয়েছিলো ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যার কারণে ২০২০ সালের বার্ষিক রপ্তানিতে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ দৃষ্টান্তহীন পতন ঘটেছে। ২০২০ সালের জুনের পর থেকে ওভেন পোশাক রপ্তানিতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। এ মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। উল্লেখিত মাসে নিটওয়্যার রপ্তানি ঋণাত্মক ০.৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে সৃষ্ট নিটওয়্যারের জন্য চাহিদা।

গত ২ বছরের রপ্তানির প্রবণতার দিকে তাকালে আমরা দেখি যে, অক্টোবর ২০১৮ থেকে অক্টোবর ২০২০ এর সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং নভেম্বর ২০১৮ থেকে নভেম্বর ২০২০ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসের রপ্তানিতে (২ বছরের) প্রবৃদ্ধির পরিবর্তন হয়েছে ঋণাত্মক ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এর অর্থ হলো, আমরা ২০২০ সালে যা রপ্তানি করেছি, তা ২০১৮ সালে যা রপ্তানি করেছিলাম তার তুলনায় ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম।

সমগ্র বিশ্ব দেখেছে, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের প্রভাব কি এবং খুচরা বিক্রয় ও চাহিদার উপর সেগুলো কি প্রভাব রেখেছে। বিশ্ব দেখেছে স্মরণকালের সবচেয়ে মন্দ ক্রিসমাস সেল। এসবের প্রভাবে ২০২০ এর সেপ্টেম্বরের পর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় আমরা বিপর্যস্ত। যেহেতু ভ্যাকসিন প্রাপ্যতা এখনও নিশ্চিত হয়নি এবং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরাজ করছে, তাই আমাদের আশঙ্কা, রপ্তানির এই নিম্নমূখী প্রবণতা সম্ভবত চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বজায় থাকবে।

এ পরিস্থিতিতে আমি আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করি, যাতে করে আমরা নীতি নির্ধারকদেরকে শিল্পের বর্তমান প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হই।

ওয়াই এ/এডিবি