ন্যাভিগেশন মেনু

প্রবাস প্রজন্মে লাল-সবুজের পতাকা জাগ্রত রাখার সংকল্পে আটলান্টিক সিটিতে বাংলাদেশ মেলা


লাল-সবুজের আদলে ক্যাসিনো সিটি খ্যাত আটলান্টিক সিটির   সেন্ড ক্যাসল স্টেডিয়ামটি পরিণত হলো একখন্ড বাংলাদেশে।

ধ্বণিত হলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় সম্মিলিত সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার। নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রিয় মাতৃভুমির সার্বিক কল্যাণে কাজ  করার সংকল্পও উচ্চারিত হলো সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত অবধি।

অভাবনীয় এ পরিবেশ তৈরী হয়  বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা নতুন  ভূখন্ডের মতো নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক মহাসাগর বিধৌত আটলান্টিক সিটির বুকে ২৭ আগস্ট, মংগলবার রাতে।

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আটলান্টিক কাউন্টির উদ্যোগে স্যান্ডক্যাসল স্টেডিয়ামের সুবিশাল প্রান্তরে অনুষ্ঠিত এ মেলার উদ্বোধন করেন উত্তর আমেরিকায় সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘আবদুল কাদের মিয়া ফাউন্ডেশনর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হাজী আবদুল কাদের মিয়া। তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি।

আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন আটলান্টিক সিটি নিয়ে গঠিত কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-২ এর কংগ্রেসম্যান (ডেমক্র্যাট) জেফ ভ্যান ড্রিউ।  আরো ছিলেন স্টেট এসেম্বলী প্রার্থী  ফিল গুয়েনথার, জন রিসলি, আটলান্টিক  কাউন্টির নির্বাহী পদে প্রার্থী  সুসান এম করনগাট, ফ্রি হোল্ডার প্রার্থী  সুমন মজুমদার, চতুর্থ ওয়ার্ড   থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী  মো: হোসাইন মোর্শেদ, পঞ্চম ওয়ার্ড  থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী  আনজুম জিয়া, ষষ্ঠ ওয়ার্ড   থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী  সোহেল আহমদ, আটলান্টিক সিটি  স্কুল বোর্ড নির্বাচনে প্রার্থী  সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।

আটলান্টিক -ক্রেস্ট সম্মাননা ক্রেস্ট হাতে গুণিজনেরা। ছবি-এনআরবি নিউজ ।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভত প্রজন্মের মধ্যে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শনকারি ছাত্র-ছাত্রীরা সংবধিত হবার ঘটনাটি বিরল।

আর এর মধ্যদিয়েই অন্যদেরকে উৎসাহিত করা সম্ভব হয়-যাতে তারাও সামনের বছর ভালো রেজাল্ট দেখাতে সক্ষম হয়।

কাদের মিয়া উল্লেখ করেন, বহুজাতিক এ সমাজে বাঙালিদের ঐক্যের বিকল্প নেই। ঐক্যের এই ধারা প্রবাহিত করতে হবে মূলধারায় নিজেদের অবস্থান সংহত করতে। আর এক্ষেত্রে আটলান্টিক কাউন্টি ইতিমধ্যে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। এজন্যে আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মেলায় নিউজার্সির বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী প্রবাসীদের সব পথ এসে যেনো মিশেছিল স্টেডিয়ামের প্রান্তরে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে, কপালে জাতীয় পতাকার ব্যান্ড বেঁধে, জাতীয় পতাকার রংয়ের পোশাক পরে ছোট্টমনিদের আগমনের ঘটনাটি সকলকে অভিভত করেছে। মা-বাবা-অভিভাবকের জন্মভূমির প্রতি তাদের উৎসাহ, উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। সারাক্ষণ নেচে-গেয়ে তারা মেলা প্রাঙ্গণকে মুখরিত করে রাখে।

পাশের অন্য রাজ্য থেকেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সরব উপস্থিতি ছিল। মেলার হরেক আয়োজনের মধ্যে ছিল দেশীয় পণ্যের বিকিকিনি, দেশীয় খাবারের স্টল, গুণীজন সংবর্ধনা, র‌্যাফেল ড্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আটলান্টিক স্টুডেন্ট -ক্রেস্ট সম্মাননা ক্রেস্ট হাতে মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীরা মেলার প্রধান অতিথির সাথে। ছবি-এনআরবি নিউজ ।

সকল অতিথি ও আয়োজকদের সাথে নিয়ে  প্রধান অতিথি আবদুল কাদের মিয়া বেলুন উড়িয়ে ‘বাংলাদেশ মেলা’র শুভ উদ্বোধন করেন রাত পৌণে ৯টায়।

এ সময় বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আটলান্টিক কাউন্টির ট্রাস্টি বোর্ডের  প্রধান কাঞ্চন বল,  ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সাব্বির হোসেন ভূঁইয়া, শামসুল ইসলাম শাহজাহান, মনির হোসেন, আবদুল জামিল, জসিম উদ্দীন, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শহীদ খান, সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদ, প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ মো. কাউছার, বাংলাদেশ মেলা-২০১৯-এর আহ্বায়ক আহসান হাবীব, সদস্য সচিব মিরাজ খান, ফরহাদ সিদ্দিক, মোঃ সেলিম, শেখ সেলিম, আলী হোসেন, নজরুল ইসলাম আকাশ, বিপ্লব দাশ,  গোলাম হাফিজ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার অন্যতম সহ-সভাপতি হাজী জাফরউল্লাহ-সহ নেতৃবৃন্দ সেখানে ছিলেন। এরপরই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়।

বাংলাদেশ মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল প্রবাসী বাংলাদেশি-আমেরিকান কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সংবর্ধনা। মেলায় আটলান্টিক কাউন্টির বিভিন্ন স্কুলের অষ্টম গ্রেড পর্যন্ত ৭৫ জন কৃতি ছাত্র-ছাত্রীকে ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধিত করা হয়।

ক্রেস্ট বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ। বিপ্লব দেবের সঞ্চালনায় আয়োজক সংগঠনের ছাত্র-ছাত্রী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি মেলায় উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশ প্রশংসা কুড়ায়। 

আটলান্টিক হোস্টদের পাশে নিয়ে উদ্বোধনী বক্তব্য দিচ্ছেন আব্দুল কাদের মিয়া।  ছবি-এনআরবি নিউজ ।

মেলার বিভিন্ন স্টলে দেশীয় পণ্য ও খাবারের স্টলগুলোতে বিকিকিনি ছিল লক্ষ্যণীয়। বাংলাদেশ মেলার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রবাসের জনপ্রিয় সঞ্চালক আশরাফুল হাসান বুলবুল। তার সাবলীল উপস্থাপনা সবার প্রশংসা কুড়ায়।

আটলান্টিক সিটির পাঁচ কৃতি প্রবাসীকে বাংলাদেশ মেলায় বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। তারা হলেন জসীমউদ্দীন, মিরাজ খান, কানচন বল, সৈয়দ মো: কাউসার, আমিরুল ইসলাম টফি। তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক হিসাবে ক্রেস্ট তুলে দেন কংগ্রেসম্যান জেফ ভ্যান ড্রিউ। 

প্রধান অতিথি আবদুল কাদের মিয়াকে কমিউনিটি সেবায় অসামান্য অবদানের জন্য সম্মাননা স্মারক হিসাবে ক্রেস্ট প্রদান করেন কংগ্রেসম্যান জেফ ভ্যান ড্রিউ।

মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন  জনপ্রিয় সংগীত শিলপী বিউটি  ও বাংলাদেশের জাতীয়  পুরষ্কারপ্রাপ্ত  সংগীতশিল্পী চন্দন  চৌধুরী।

সবশেষে মঞ্চ মাতাতে আসেন   সারেগামা খ্যাত ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পী সুপ্রতীপ।

শিল্পী মঞ্চে এসে দাঁড়াতেই প্রবাসীরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ শেষে শিল্পীর একের পর এর সুরের মূর্ছনায় প্রবাসীরা অনাবিল আনন্দে মেতে ওঠেন।

তার গানের সাথে নেচে-গেয়ে প্রবাসীরা বেশ আনন্দ উপভোগ করেন। যন্ত্র সংগীতে শিল্পীদেরকে সহযোগিতা করেন মাটি ব্যান্ডের সদস্যরা।

মধ্যরাতে বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর উপস্থিতিতে র‌্যাফেল ড্রর মাধ্যমে বাংলাদেশ মেলার সমাপ্তি ঘটে। এতে বেশ কিছু আকর্ষণীয় পুরস্কারের সমাহার ছিল।

এ মেলায় যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি ও চ্যানেল আই উত্তর আমেরিকা অফিসের প্রধান মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রতিদিন উত্তর আমেরিকা সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও এটিএন বাংলার ইউএস প্রধান কানু দত্ত, টিবিএন ২৪ এর পিনাকী তালুকদার, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের কোষাধ্যক্ষ আকাশ খানও এসেছিলেন নিউইয়র্ক থেকে।

সূত্রঃ এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে